চট্টগ্রাম সাগরিকা থেকে জহির ভূইয়া
৫০০ রানের সীমানা স্পর্শ করতে পারেনি অতিথি শ্রীলঙ্কানরা। কিন্তু দুই দিন টানা ব্যাট করে ৪০০ রানের কোটার কাছাকাছি গিয়েছে। সাগরিকা টেষ্টের প্রথম ইনিংসে অলআউট ৩৯৭। প্রথম দিন নাইমে ২, সাকিবের ১ আর তাইজুলের ১ উইকেট শিকারের ফলে লঙ্কা ছিল ২৫৮/৪। ৩৯৭ রানের গল্পে ১ রানের আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়লেন ম্যাথিউস। শেষ বিকেলে ১৯৯ রানে নাইমের বলে ক্যাচ আউট! অবিশ্বাস ঘটনা।

১ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি হলো না ম্যাথিউসের! হতাশায় পুরো সাগরিকা স্টেডিয়াম। সকলের কাছেই প্রত্যাশিত ছিল ডাবল সেঞ্চুরিটা হবে। ক্লান্ত ম্যাথিউস পারলেন না।

আজ দ্বিতীয় দিনের লাঞ্চের আগ অবদিও অতিথি দলের হাতেই টেষ্টের নিয়ন্ত্রণ ছিল। মাঝে টাইগারা নিয়ন্ত্রন নিয়েও ধরে রাখতে পারেনি সাগরিকা গল্পের নায়ক ম্যাথিউস একাই টেনে নিলেন। তবে ৯ম ব্যাটসম্যান ফার্নান্দো (১৬ ব্যক্তিগত, দলীয় স্কোর ৩৭৪/৮) সাকিবের বলে ক্যাচ ফিল্ডার ফেলে না দিলে হয়তো স্কোরটা আরো একটু কম হতে পারত।

কিন্তু লাঞ্চের আগে স্পিনার নাইম আঘাত করে লঙ্কানদের রানের গতি কমিয়ে দিলেন, ৩২৭/৬। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চেষ্টা করলেন সাকিবরা। কারণ সাগরিকা টেষ্টের প্রথম ইনিংস নায়কের ভূমিকাটা প্লে করেছেন টপ অর্ডার ম্যাথিউস (১৯৯)। ৯৫তম টেষ্টে ডাবল সেঞ্চুরিটা হয়তো হয়ে যেত। কিন্তু কপাল বলে তো একটা কথ আছে। ১০ম জুটিতে ম্যাথিউসের নাইমের বলে তুলে মারতে গেলেন, ফিল্ডার সাকিবের হাতে ধরা পড়লেন। হতাশায় ডুবে যায় পুরো লঙ্কান ড্রেসিং রুম।

সাগরিকা গল্পের নায়ক ম্যাথিউস না থাকলে দ্বিতীয় দিনের এতোট পথ পাড়ি দেয়া সম্ভব ছিল না লঙ্কার পক্ষে। ম্যাথিউস আর চান্দিমালকে বাদ দিলে আজ সকালে মিডল অর্ডারের কেউ দাঁড়াতে পারেনি। লাঞ্চের পর সাকিবের জোড়া আঘাতে লঙ্কার ৭ম ও ৮ম উইকেটের পতন ঘটে। প্রথম ইনিংসে নাইম একাই ৬ উইকেট শিকার করে আলো ছড়ালেন। মুলত মেহেদি হাসান মিরাজের ইনজুরিতে এক বছর পর টেষ্ট ক্রিকেটে ফিরে চমকে দিলেন স্পিনার নাইম হাসান।

চট্টগ্রামের ছেলে নাইম চলতি টেষ্ট সিরিজে অতিথি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গতকাল দিনের প্রথম উইকেট শিকার করে উদ্বোধন করেন। দ্বিতীয় উইকেটটাও নাইম তুলে নেন। এরপর সাকিব আর তাইজুল ১টি করে নেন। ২৫৮/৪, এ অবস্থায় লঙ্কানরা প্রথম দিন শেষ করে হোটেলে যায়। আর আজ সকাল থেকে লাঞ্চের আগ অবদি ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় লঙ্কার ম্যাথিউস আর চান্দিমাল জুটি।
১৩২ রানের জুটি গড়ে ফেলে ম্যাথিউস আর চান্দিমাল। আটকানোর কোন পথই খুজে পাচ্ছিল না সাকিব, তাইজুল আর নাইমের স্পিন বিভাগ। এরই মধ্যে ম্যাথিউস দেড় শত রানের কোটা স্পর্শ করেছেন আর চান্দিমাল ২১তম টেষ্ট ফিফটি। তাহলে কি আগের দিন মেন্ডিস যা বলে গেছেন তাই সত্য হতে চলেছে, ৫০০ রানের স্কোর গড়বে!

না, তা হতে বাধা দিলেন স্পিনার নাইম হাসান। ১৩২ রান করা ৫ম জুটির চান্দিমাল (৬৬) কে এলবি’র ফাঁদে ফেলে দলকে লম্বা একটা হাসি উপহার দিলেন নাইম। এখানেই শেষ নয়, ইনিংসের ১১৩ ওভারে চান্দিমালকে ফেরানো নাইম ঐ ওভারের ৫ম বলে নতুন ব্যাটসম্যান ডিকওয়ালাকে (৩) সরাসরি বোল্ড করলেন, স্কোর ৩২৩/৬।

নতুন ব্যাটসম্যান রমেশ মেন্ডিস ১ রানে তখন ১৪৭ রানে ম্যাথিউস, ৩২৭/৬, লঙ্কানরা লাঞ্চে যায়। এরপর রমেশ ১ রানে সাকিবের বলে বোল্ড আর শূণ্য রানে এলবি’র ফাঁদে কাটা গেলে সাকিবের ডেলিভারিতে ল্যাথিস। ৯ম জুটিতে ম্যাথিউস-ফার্ন্দাদো মিলে ৩২৮ থেকে চা বিরতি অবদি ৩৭৫ এ নিয়ে যায়। চা বিরতির আগে শরিফুলের একটি বাউন্সারে মাথার হেলমেটে আঘাত পাওয়া ভিসওয়া ফার্নান্দো চা বিরতিতে গিয়ে আর ক্রিজে ফিরলেন না। তার বদলে মাঠে ম্যাথিউসকে সঙ্গ দিতে এলেন এ্যাসিথা ফার্নান্দো। এ্যাসিথা ফার্নান্দোকে (১) বোল্ড করা নাইম ১১তম ব্যাটসম্যন হিসেবে থাকা ম্যাথিউসকে ফেরালেন ক্যাচ বানিয়ে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ- শ্রীলঙ্কা চট্টগ্রাম টেষ্ট-২০২২
দ্বিতীয় দিন শেষে
টস শ্রীলঙ্কা (ব্যাটিং)
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ৩৯৭ অলআউট (কুশাল মেন্ডিস ৫৪, এ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ১৯৯ ও দিনেশ চান্দিমাল ৬৬। বোলিং : নাইম হাসান ৩০-৪-১০৫-৬, তাইজুল ইসলাম ৪৮-১০৭-১, সাকিব আল হাসান ৩৯-১২-৬০-৩, খালেদ আহমেদ ১৬-১-৬৬-০ ও শরিফুল ইসলাম ২০-৩-৫৫-০।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ————–