বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটি রীতি তৈরি হয়েছে, আর সেটা হলো যখনই বাংলাদেশ ঘরের মাঠে হেরে বসে তখন নিয়ম রক্ষার আর জবাব দেবার রেওয়াজ মানতে কোচকে মিডিয়ার সামনে পাঠানো হয়। আজও সে পথেই হেটেছে অধিনায়ক মমিনুল হক। মিরপুর টেষ্টে ২৪/৫ আর ২৩/৪, এরপর সাংবাদিকরা তো অধিনায়কের বক্তব্যই শুনতে চাইবে!

সেটা তো জানেন অধিনায়ক, আর তাই তো তিনি সংবাদ সম্মেলনে এলেন না। পাঠালেন হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গোকে। মিডিয়ার যতো প্রশ্ন আর ক্ষোভ এই বিদেশীকে সামাল দিতে হলো। হায়-মমিনুল এভাবে আর কত? সংবাদ সম্মেলেন এ মন্তব্যটা অনেকের মুখেই শোনা গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে ডমিঙ্গোকে প্রশ্ন করা হয়, কেন এই বিপর্যয়? জবাবে টাইগার হেড বলেন, ‌যদি আমাদের উত্তর জানতাম, সম্ভবত এটি ঘটত না। আমাদের ভিন্ন কিছু করতে হবে, আমাদের বদলাতে হবে। আমরা একটি বা দুটি বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন। কিন্তু আপনি উভয় ইনিংসে ২৪/৫ আর ২৩/৪ স্কোর করে টেস্ট জিততে পারবেন না। আমাদের কিছু পরিবর্তন করতে হবে। গত ৬-৮ মাসে এটা অনেকবার হয়েছে।’

বাংলাদেশ চাপের মধ্যে টিকতে পারছে না। এ বিষয়ে কি বলবেন, ডমিঙ্গো বলেন, কখনও কখনও যখন আপনি চাপের মধ্যে থাকেন, তখন আপনি যথেষ্ট পরিষ্কার ভাবে চিন্তা করেন না। কোন ব্যাটসম্যান উদ্দেশ্যমূলকভাবে রান আউট হয় না. এটা খেলার অংশ।’

মিরপুরের ৫ দিন সম্পর্কে মন্তব্য করতে বলা হলে বলেন, দিনের শেষে, বাজে অবস্থা থেকে বের করার জন্য অনেক ইতিবাচক দিক ছিল। আমরা ভাল অবস্থানে ছিলাম, তারপর আমাদের একটি খারাপ সময় শুরু হয়। আমরা চার দিন প্রতিযোগিতা করছি এবং তারপরে এমন একটি বাজে সময় পার করেছি যে, ফিরে যাওয়ার কোনও উপায় ছিল না। আমি নিশ্চিত এটা খেলোয়াড়দের জন্য সমান হতাশাজনক। তারা লড়াই করছে, কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু সময়ে খেলা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা ভালো অবস্থানে থেকে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে অনেক ছোট ছোট ভুল করছি। তবে আশা করি অভিজ্ঞতার সাথে আরও কিছুটা আত্মবিশ্বাস থাকবে। কিন্তু সেই আত্মবিশ্বাস পেতে হলে আপনাকে কিছু গেম জিততে হবে।’

টানা ব্যর্থ অধিনায়ক মমিনুল হকের প্রসঙ্গ টানতেই ডমিঙ্গো বলেন, কোন সন্দেহ নেই যে তিনি চাপ আছেন। বাংলাদেশে টেস্ট অধিনায়ক সবসময়ই যাচাই-বাছাই করে নেয়া হয়। কারণ দলটি গত ১০-১৫ বছরে ভালো করতে পারেনি। আপনি যতই শক্ত এবং সাহসী হোন না কেন, রানে না থাকলে আপনি হতাশ হবেনই। তারপরও বলব মমিনুল একজন শক্ত মানুষ এবং একজন দুর্দান্ত খেলোয়াড়। আমি তাকে সমর্থন করছি। তাকে সম্ভবত আগামী সপ্তাহে একধাপ পিছিয়ে যেতে হবে। নতুন করে ভাবতে হবে তাকে কারণ এই মুহূর্তে তার ব্যাটিং লেভেলটা কোথায় আছে তা পুনরায় মূল্যায়ন করতে হবে।’

নিজেদের বোলিং নিয়ে বলেন, আমরা এবাদত, শরিফুল, তাসকিন ও মিরাজের সাথে নিউজিল্যান্ডে একটি টেস্ট জিতেছি। এই টেস্টে আমরা শুধু এবাদত পেয়েছি। এটা সম্পূর্ণ নতুন বোলিং আক্রমণ। আমরা সম্ভবত আমাদের মতো ভালো বোলিং করিনি।’

নিজ দলের বোলারদের সমালোচনা করে ডমিঙ্গো বলেন, কোচ হিসেবে ক্যারিয়ারে আমি কখনো দেখিনি যে মিড উইকেট এবং ফাইন-লেগের মধ্যে বেশি রান হতে পারে। তারা খুব সোজা বল করেছে, স্কোর করার জন্য অনেক সহজ বল করেছে। আমি ভাবিনি এটা ৫০০ রানের উইকেট। দ্বিতীয় দিনের শেষ দিকে আমরা ভালো বোলিং করতে পারিনি। আমরা তাদের যথেষ্ট চাপে রাখতে ব্যর্থ হয়েছি।

নাইমের বদলে মোসাদ্দেক তো কোন কাজেই এলেন না! কোচ বলেন, মোসাদ্দেক খেলেছেন কারণ পঞ্চম বিকল্প হিসেবে বোলিং করতে পারে এমন একজনকে আমাদের দরকার ছিল। আমরা ভেবেছিলাম সে দিনে ১৫ ওভার বল করতে পারবে। চার বোলার নিয়ে বল করতে আমি সবসময়ই নারাজ। মোসাদ্দেক তেমন বোলিং করেননি । আমরা ভেবেছিলাম সে বল হাতে মিরাজের বদলী হিসাবে সফল হবে। মিরাজের না থাকাটা দলের একটা বড় ক্ষতি ছিল – সে অনেক ওভার বোলিং করে এবং সে উইকেট তুলে নেয় এবং ব্যাটও করে।

আমাদের ওয়ানডেতে অনেক স্পিনার আছে। আমরা টি-টোয়েন্টি স্পিনার মাহেদীর কথা বলেছি। আমরা এমন ব্যাটসম্যান চাই যারা পার্টটাইম স্পিন বোলিং করতে পারে। নাঈম ও মিরাজের পাশে স্ট্যান্ডআউট অফস্পিনার নেই।

আমরা আশাবাদী যে তাসকিন, শরিফুল এবং হাসান মাহমুদরা দ্রুতই ফিরে আসতে পারেন। লিটন এক কথায় দুর্দান্ত। সাকিবকে দলে পাওয়া ভালো, সে ক্ষুধার্ত। আমরা জানি আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরটি কঠিন হতে চলেছে।

কিন্তু আমি সত্যিই আশা করছি আমরা টেস্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।