আগামী ১ জুন থেকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আন্তঃদেশীয় তৃতীয় যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এর জন্য দুই দেশের রেল মন্ত্রণালয় সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। আর দুদিন পরেই বাণিজ্যিকভাবে ট্রেনটির চাকা ঘুরতে যাচ্ছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচলের আগে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ৬৬ কিলোমিটার সীমান্ত রেলগেট পর্যন্ত লার্নিং রোডের (এলআর) রুট পরিদর্শন করেছে ভারতীয় রেলের প্রস্তাবিত ওই যাত্রীবাহী ট্রেনেটি। এতে ছিলেন সাত লোকো পাইলট ও গার্ডের একটি প্রতিনিধি দল।

রবিবার সকালেই ট্রেনটির লার্নিং সম্পন্ন করে নিউ জলপাইগুড়ি ফিরে যায় মিতালি।

নিয়ম অনুযায়ী নতুন রুটে ট্রেন চালানোর আগে লার্নিং রোডের (এলআর) করতে হয়। এতে ট্রেনের লোকো পাইলট ও গার্ডরা ওই রুটের সিগন্যাল ব্যবস্থা, লাইনের পরিস্থিতি, রুট নির্দেশিকা সম্পর্কে ধারণা নেন।

এসব জানা থাকলে ওই রুটে ট্রেন চালাতে আর সমস্যা থাকে না।

যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ভারতীয় রেলের লোকো পাইলট ও গার্ডরা বাংলাদেশের চিলাহাটি পর্যন্ত যাবে। চিলাহাটি থেকে বাংলাদেশের লোকো পাইলট ও গার্ডরা ট্রেনটিকে ঢাকা নিয়ে যাবে। আবার বাংলাদেশের লোকো পাইলট ও গার্ডরা ট্রেনটিকে ঢাকা থেকে ভারতের হলদিবাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসবে। এরপর ভারতীয় ইঞ্জিনের লোকো পাইলট ও গার্ডরা ট্রেনটিকে নিউ জলপাইগুড়ি নিয়ে যাবেন।

সূত্র মতে, ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি (শিলিগুড়ি) থেকে ঢাকার মোট দূরত্ব ৫৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভারতীয় অংশে ৮৪ ও বাংলাদেশ অংশে ৪৪৬ কিলোমিটার। তবে কোন স্টেশনে ট্রেনটি যাত্রী ওঠানো-নামানোর জন্য থামবে না। যারা এ ট্রেনের যাত্রী হবেন তারা ঢাকায় উঠে নামবেন নিউ জলপাইগুড়ি। আবার যে সব যাত্রী নিউ জলপাইগুড়ি থেকে এই ট্রেনে উঠবেন তারা নামতে পারবেন ঢাকা ক্যান্টনম্যান্ট রেলস্টেশনে।

এদিকে বাংলাদেশের রেলকোচ সংকটের কারণে মিতালি এক্সপ্রেস চলবে ভারতীয় রেল কোচে। তাই নিউ জলপাইগুড়ি রেল ইয়ার্ডে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে ট্রেনটিকে। নতুন রূপে নতুন কোচে ভারতের কাটিহার ডিভিশনের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের ট্রেনটি তদারকি করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভারতের নয়াদিল্লির রেল ভবন থেকে ভারতের রেলমন্ত্রী যথাক্রমে অশ্বিনী বৈষ্ণ এবং বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন যৌথভাবে ভার্চুয়ালি ট্রেনটির প্রথম যাত্রার সুচনা করবেন।

এর আগে ২০২১ সালের বাংলদেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সফরে এসেছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সে সময় ২৭ মার্চ ঢাকার গণভবনে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে ট্রেনটি প্রতীকী উদ্ধোধন করে রেখেছিলেন।

ভারত থেকে মিতালি এক্সপ্রেস রবি ও বুধবার চলবে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ভারতীয় সময় সকাল ১১:৪৫ মিনিটে ছাড়বে। ১২:৫৫ পৌঁছে যাবে হলদিবাড়ি। সেখান থেকে ১:০৫ মিনিটে ছাড়বে। ট্রেনটি বাংলাদেশের সময়ে ১:৫৫ মিনিটে নীলফামারীর চিলাহাটিতে পৌঁছবে। সেখান থেকে বাংলাদেশের সময়ে ২:২৫ মিনিটে ছাড়বে রাত ১০:৩০ মিনিটে ঢাকা পৌঁছবে।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার জন্য এই ট্রেন চলবে সোমবার ও বৃহস্পপতিবার। ট্রেনটি বাংলাদেশের সময়ে ঢাকা থেকে ছাড়বে রাত ৯:৫০ মিনিটে। চিলাহাটি এসে পৌঁছবে ভোর ৫.৪৫ মিনিটে। সেখান থেকে ট্রেনটি ছাড়বে ভোর বাংলাদেশের সময়ে সময় ৬:১৫ মিনিটে। হলদিবাড়ি পৌঁছবে ভারতীয় সময় ৬টায়। হলদিবাড়ি থেকে ৬:০৫ মিনিটে ট্রেনটি ছেড়ে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছাবে সকাল ৭.১৫।

রেল সূত্রে খবর, মিতালি ট্রেনে চারটি ফার্স্ট ক্লাস এসি, চারটি এসি চেয়ার কার এবং দুটি লাগেজ-কাম-জেনারেটর ভ্যান থাকবে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট-নিউ জলপাইগুড়িতে চারটি ফার্স্ট ক্লাস এসি (স্লিপার), চারটি এসি চেয়ার কার এবং দুটি লাগেজ-কাম-জেনারেটর ভ্যান থাকবে।

রেল সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে মিতালি এক্সপ্রেসের। এ ট্রেনের টিকেট অনলাইনে বা কোন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে কাটা যাবে না। টিকেট পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশের ঢাকার কমলাপুর ও চট্রগ্রাম রেলস্টেশন কাউন্টারে। ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন কলকাতা স্টেশন ও ফেয়ারলি প্লেস থেকে এই টিকেট কাটা যাবে বলে জানা গেছে।

টিকিট কাটতে গেলে পাসপোর্ট, ভিসাসহ করোনা প্রতিরোধে টিকাদানের সনদপত্র দেখাতে হবে।