আকাশ সাজছে। বেশ ভালোভাবেই সাজছে। থেকে থেকেই ঈষাণ কোণে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। এলোমেলো বাতাস বইছে। কখনো দক্ষিণ পশ্চিম কোণ থেকে বইছে কখনোবা উত্তর পূব কোণ থেকে। উইন্ড চাইমটি এই মুহূর্তে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে বাতাসের এই উল্টোপাল্টা প্রবাহে। কখনো সখনো টুংটাং আওয়াজ তুলছে তার বদনে। ঘরের সাথে উত্তরের বারান্দা লাগোয়া থাই গ্লাসের দরজার মাথায় ঝুলানো পুঁথি ও ঘুঙরের ঝুলন্ত ছোট্ট ডোরবেলটা থেকে থেকেই ঘুরছে মিষ্টি শব্দ তুলে। কয়েকটি হাস্নাহেনা ফুটেছে আজ। বাতাসে তার সুগন্ধ লাগছে নাকে।

হাডসন নদী সবুজ রঙের আলোয় প্রতিফলন ঘটছে পানির উপর। নাম না জানা গাছের ফাঁক গলিয়ে সে পানিতে বাতাসের নাচন দেখতে দেখতে ভুলে যাচ্ছি বিগত দিনের অসুখ। ভুলে যাচ্ছি অতি প্রিয় কারো সচেতন অবহেলা। সুখটানে উড়িয়ে দিচ্ছি নিকোটিনের সাথে বুকে জমে থাকা হাহাকারের বারুদ।

আজ বোধহয় বৃষ্টি হবে।মাথার ক্যাপ খুলে দিলাম। চুলগুলো কিছুটা স্বাধীনতার স্বাদ পাক। কিন্তু বেয়ারা চুলগুলো সব স্বেচ্ছাচারীতায় মেতে উঠল যেনো! অবাধ্য প্রেমিকার মতো তারা আমায় ছেরে যেতে চাইছে ।

মোবাইলে মাত্র পঁয়ত্রিশ পার্সেন্ট চার্জ আছে। কোলের উপর চার্জারটা নিয়ে বসে লিখছি। অনেক্ষণ যাবৎ খেয়াল করছি নদীর পাড়ের ল্যাম্পপোষ্টের পাশেই একটি ঘড় ছাড়া মানুষ হাঁটাহাঁটি করছে। একবার মাঠের দিকে যাচ্ছে আবার ফিরে এসে কী যেনো খুঁজছে ল্যাম্পপোষ্টের নিচে। কী জানি হয়তো কোনো অতীত স্মৃতিকে খুঁজে ফিরছে এই মধ্যরাতের নিস্তব্ধতায়।

আমরা সবাই কমবেশি রাতের নিস্তব্ধতায় কিছুনা কিছু খুঁজি।কী খুঁজি? অতীত স্মৃতি? নাকি ভবিষ্যৎ এর কোনো আকাঙ্ক্ষিত লটারির টিকেট। কিন্তু বর্তমান! সে যে অপেক্ষা করে আছে আমাদের জন্য। তবে আমরা কেনো বর্তমানকে তুচ্ছজ্ঞান করে অতীত ও ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে আকুল হচ্ছি। কেনো? আমরা কেনো তবে আমাদের বর্তমানকে সুন্দর পরিচ্ছন্ন ও কালিমা মুক্ত করছিনা!
কেনো আমরা বুঝতে চেষ্টা করছিনা যে আমাদের আজকের বর্তমানই আমাদের একদিন সোনালী অতীত হবে!

শুভরাত্রি ।
নিউইয়র্ক ।