দেশের বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক গোলটেবিল আলোচনায় সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি এই অভিযোগ করেন।

সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ রিসার্চ সেন্টারের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পানি বণ্টনের ইস্যু’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মোস্তফা কামাল মজুমদার।

তিনি বলেন, ‘আজকে বন্যার্তদের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। সেখানে মানুষ কী পরিমাণ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন আপনারা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন, মিডিয়ায় দেখেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সেরকম.. যে প্রলয়ঙ্করী বন্যা হয়েছে তা মোকাবেলায় যেভাবে এগিয়ে আসার কথা ছিল, যে পরিকল্পনা থাকার কথা ছিল- আমরা লক্ষ্য করেছি সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই। তারা অন্য কাজে ব্যস্ত ছিল। দুর্ভাগ্য জনগণের। জনগণের ভোটের সরকার যদি না হয় তাহলে জনগণের কষ্ট হয়। সে সরকারের কাছে জনগণের দুঃখ প্রাধান্য পায় না, পায় ব্যক্তিস্বার্থ ও গোষ্ঠীস্বার্থ।’

বাংলাদেশের নদ-নদীর পানি প্রবাহের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘কিছুদিন আগের আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়ে লোকদেখানো জেআরসি মিটিং করেছেন। সেই মিটিংয়ে কী করেছেন? জয়েন্ট রিভার কমিশনের কোনো রিপোর্ট ছাড়া যে তারা লিপ সার্ভিস একটা দিলেন- এটা আসলে বাংলাদেশের মানুষকে প্রতারণা করা হয়েছে।’

‘বন্যায় বাংলাদেশ তলিয়ে গেছে, মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এখন পর্যন্ত ভালো করে এর হিসাব দেয়া হচ্ছে না। সব গেইট ভারত এই বর্ষাকালে খুলে দিয়েছে। যখন আমাদের পানির প্রয়োজন নাই তখন আমাদেরকে ভাসিয়ে দিচ্ছে। যখন আমাদের পানি প্রয়োজন, আমার জীবিকা, আমার জীবন রক্ষার জন্য তখন উজানে পানি অন্যদিকে আমাদেরকে এই বাংলাদেশকে মরুকরণ করে দেয়া হচ্ছে,’ বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের নদীর তলদেশ গভীরতা হারাচ্ছে এবং বেসিনের গভীরতা হারাচ্ছে। আপনারা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন সুরমা বেসিনের তলদেশ কী পরিমাণ উঁচু হয়ে গেছে। যার জন্য এবার যে বন্যা হয়েছে, ১২২ বছরেও এরকম বন্যা বাংলাদেশে হয় নাই। কেন হচ্ছে এই বাঁধের জন্য হচ্ছে। পানি ব্যবস্থাপনার একতরফা যে সিদ্ধান্ত, আমরা যারা নিচের দিকে বসবাস করি এই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে যে নতজানু নীতি তার জন্য আজকে এটা করা সম্ভব হচ্ছে।’

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণকে সচেতন করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘জনগণকে সচেতন করতে হবে, জনগণের দাবি যদি সোচ্চার হয় অতীতে দেখেছি ফারাক্কা নদীর প্রবাহ নিয়ে ১৯৭৭ সালে চুক্তি করতে হয়েছে। আজকে আমাদেরও ন্যায্য পানির যে অধিকার, পানি পাওয়ার ঐতিহাসিক অধিকার, সেই অধিকার আদায়ে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হতে হবে।’

তিস্তা নদী পানি বণ্টন চুক্তি এক দশকের না করতে পারায় সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করেন তিনি।

সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদের সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় জাতিসঙ্ঘের পরিবেশ বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা ড. এস আই খান, পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী এম ইনামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যায়ন বিভাগের অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বক্তব্য রাখেন।