ঢাকা আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত স্কুল ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতু (১৯) গ্রেফতারের আগে তার সহপাঠি বাল্যবন্ধু বশির শরিফের (১৮) আশ্রয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা গ্রাম এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। ওই এলাকার এক নরসুন্দরের বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা জিতুকে বুধবার গ্রেফতার করে র‌্যাব সদস্যরা ।

স্থানীয়রা জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা গ্রামে মোশাররফ হোসেনের বাড়ির একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে বড় ভাই ইমরান বিশ্বাস ও বড় বোন জিনিয়া আক্তারের সঙ্গে থাকেন বশির শরিফ (১৮)। তাদের গ্রামের বাড়ি নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার বাইউসোনা গ্রামে। মাস দেড়েক আগে পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকার এনআরজি স্পিনিং মিলে মেকানিক্যাল হেলপার পদে চাকুরি নেয় বশির।

জিতুর বন্ধু বশির জানায়, আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণী থেকে জিতুর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। আমি ও জিতু ওই স্কুলে একসঙ্গে লেখাপড়া করতাম। মঙ্গলবার জিতু তার নানার বাড়ি মানিকগঞ্জ থেকে মোবাইলে আমাকে ফোন করে আমার কাছে বেড়াতে আসার কথা জানায়। পরদিন (বুধবার) ভোরে জিতু গাজীপুরে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় এসে আমাকে পুনঃরায় ফোন করে এবং কয়েকদিন আশ্রয় দেয়ার কথা জানায়। আমি তাকে মাওনা চৌরাস্তা থেকে বাসযোগে জৈনাবাজার এলাকায় আসতে বলি। আমি জৈনাবাজারে গিয়ে কিছু সময় অপেক্ষার পর জিতু সেখানে এসে পৌছে। পরে আমি তাকে রিসিভ করে বাসায় নিয়ে আসি। আমরা দুই ভাই ও এক বোন যেহেতু একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকি, তাই তাকে আমার সঙ্গে না রেখে স্থানীয় সিদ্দিকুর রহমানের বাড়ির ভাড়াটিয়া নরসুন্দর সুজনের ভাড়া বাড়িতে নিয়ে রাখি। ওই ভাড়া বাড়ি থেকেই বুধবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় র‌্যাব সদস্যরা।

বশির আরও জানায়, শ্রীপুরে এসেই জিতু জানায় তার বাবা এক হাজার টাকা পাঠাবে। পরে তার বাবার পাঠানো এক হাজার টাকা উঠাতে আমি স্থানীয় একটি কারখানার সামনে যাই। এসময় হঠাৎ র‌্যাব সদস্যরা সেখানে এসে উপস্থিত হয়। এসময় র‌্যাব সদস্যরা তাদের পরিচয় দিয়ে জিতুর ছবি দেখিয়ে ও তার পরিচয় দিয়ে সে কোথায় আছে জানতে চান। পরে আমি র‌্যাব সদস্যদের সুজনের ভাড়া বাড়িতে নিয়ে আসি। এসময় জিতু ঘুমিয়ে ছিল। পরে র‌্যাব সদস্যরা তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নিয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে ফোন কলের সূত্র ধরেই এখানে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব সদস্যরা।

বশির জানায়, জিতু বন্ধু হিসেবে খুব ভাল ছিল। নবম শ্রেণী থেকেই জিতুর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এরপর থেকেই আমাদের মাঝে ভাল বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আমরা একসঙ্গে ঘুরাফেরা ও খেলাধুলা করতাম। যেকোন সমস্যায় সবার আগে জিতু এগিয়ে আসতো। জিতু ছাত্র হিসেবে যেমন ভাল ছিল, বন্ধু হিসেবেও সে অনেক ভাল ছিল। তবে জিতু যে এমন কাজ করেছে তা বশির জানতো না বলে জানায়।

বাড়ির মালিক সিদ্দিকুর রহমান জানান, বুধবার বিকেলে মাগরিবের নামাজের আগে হঠাৎ কিছু লোকজন বাড়ির ভেতর এসে বিভিন্ন ঘরে তল্লাশি শুরু করে। এসময় এক ছেলেকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে হ্যান্ডকাফ পড়ানো হয়। পরে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় র‌্যাব সদস্যরা। ওই ছেলেটিকে এলাকার কেউই চিনেন না।

উল্লেখ্য, ঢাকা আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক এবং শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ছিলেন উৎপল কুমার সরকার (৩৭)। তিনি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানি গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে। গত শনিবার ছাত্রীদের ইভটিজিংয়ের অভিযোগে সতর্ক করায় ওই শিক্ষককে স্কুল মাঠে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে তাঁরই ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতু। জিতু ওই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। আহত শিক্ষক সাভারের এনাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই অসীম কুমার সরকার বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় ওই ছাত্রের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। আশুলিয়া থানা পুলিশ মঙ্গলবার মধ্যরাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে জিতুর বাবা উজ্জ্বল হাজীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত উজ্জ্বল হাজীকে জিজ্ঞাসাবাদের ৫দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। শিক্ষক খুনের এ ঘটনায় বাবার গ্রেফতারের পর ছেলে জিতুকেও গ্রেফতার করা হয়।