১৯৮৬ সাল থেকে এখন অবদি ৩৯৭তম ওডিআই ম্যাচ শেষে ১৪৩তম জয় পেল বাংলাদেশ। যার মধ্যে ৪৪ বার ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেছে টাইগার বাহিনী। ২১টি জয় আর ২১টি ম্যাচে হার, ২ ম্যাচে কোন ফলাফল হয়নি, এটাই এখন বাংলাদেশ বনাম ওয়েষ্ট ইন্ডিজের ওডিআই পরিসংখ্যান।  ২০২২ সিরিজে স্বাগতিক ওয়েষ্ট ইন্ডিজ টেষ্টে আর টি-২০ ম্যাচে সফলতা পেলেও ওডিআই সিরিজে নিজ ঘরের মাঠেই হোয়াইটওয়াশ হল। তিন ম্যাচের ফলাফল যথাক্রমে , ৬ উইকেট, ৯ উইকেট এবং ৪ উইকেটে জয়। হোয়াইটওয়াশের সিরিজে স্পিনার তাইজুল ইসলাম ম্যাচ সেরা আর তামিম হলেন সিরিজ সেরা।

২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর শেষ বার ওয়েষ্ট ইন্ডিজ মিরপুরের উইকেটে বাংলাদেশকে ৪ উইকেটে হারিয়ে ছিল। সেটা সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় আগের গল্প। ২০১৮ ডিসেম্বরের পর থেকে ২০২২ জুলাই অবদি কোন ওডিআই ম্যাচে টাইগারদের হারাতে পারেনি ওয়েষ্ট ইন্ডিজ। টানা সাড়ে তিন বছরে এবার নিয়ে ১১তম টাইগার বাহিনীর। এই ১১টি ম্যাচ বাংলাদেশে খেলেছে নিজ দেশে ৪টি আর ওয়েষ্ট ইন্ডিজের মাটিতে ৭টি।

আর হোয়াইটওয়াশের ঘটনা এবার নিয়ে দুই বার। ২০০৯ সালে প্রথম আর ওয়েষ্ট ইন্ডিজের মাটিতে আর এবার ২০২২ সালে দ্বিতীয় বার ওয়েষ্ট ইন্ডিজকে তাদের ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে বাংলা হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ।

দীর্ঘদিন পর একাদশে ফেরা স্পিনার তাইজুলের স্পিনে কাত হয়ে গেল ওয়েষ্ট ইন্ডিজ। ২৮ রানে ৫ উইকেট শিকারের ঘটনা এটা তাইজুলের ওডিআই ক্যারিয়ারে প্রথম বার। তাতেই ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ১৭৮ রানে অলআউট ৪৮.২৪ ওভারে।

জবাব দিতে নেমে তামিম আর শান্ত ওপেন করলেন। অনেকটা ধীর গতিতে রান সংগ্রহের কাজটা করলেন দুই ওপেনার। মাত্র ১ রান সংগ্রহ করেছেন শান্ত, তখন দলের ৬.২ ওভার শেষ। জোসেফের ডেলিভারিটা না বুঝে উইকেটেরে পেছনে বল জমা দিলেন শান্ত, দলীয় স্কোর ২০/১।

তামিম এবার সঙ্গী পেলেন লিটনকে।  যথেষ্ট দেখে শুনে খেললেন তামিম-লিটনের জুটি। ১৬.৪  ওভারে দলীয় স্কোর যখন ৭০ তখন তামিমের মনোযোগ নষ্ট হল। ৫২ বলে ৪ বাউন্ডারি দিয়ে ৩৪ রানে সেট হয়ে যাওয়া তামিম আকাশে বল তুলে দিলে বল ফিল্ডারের হাতেই জমা হলো। লিটন তখন ফিফটি দেখা পেতে অপেক্ষায় ছিলেন। তবে লিটনের বিপক্ষে এলবি’র আবেদন নাকচ না হলে হয়তো লিটন ৫২ বলে ১ ছক্কা আর ৫ বাউন্ডারি দিয়ে ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ ওডিআই ফিফটির দেখা পেতেন না।

লিটনের অপর প্রান্তে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সেট হয়ে গেছেন। কিন্ত লিটন ৫০ করার পর আনাড়ির মতো খেললেন, পেসার ক্যানহাইয়ের হাতে ফিরতি ক্যাচ দিলেন। এরপর তো আফিফ হোসেন এলেন আর গেলেন।  পেসার ক্যানহাইয়ের বলে স্ট্যাম্প ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে মারতে চাইলে আফিফ। লাইন মিস হয়ে গেল, উইকেটরক্ষক স্ট্যাম্প ভাঙ্গতে ব্যর্থ হলেন না। ৯৬ রানে ৪ উইকেট, জয় পেতে তখনও দরকার২৫.১ ওভারে ৮৩ রান। স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে রিয়াদ, সৈকত, সোহান আর মিরাজ।

তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজের এই একটা ম্যাচেই ওয়েষ্ট ইন্ডিজ বাংলাদেশকে চেপে ধরতে সক্ষম হয়েছে। স্বাগতিকদের ৪ উইকেটে স্কোর ছিল ৮৩ আর বাংলাদেশের ৯৬। ৫ম জুটিতে রিয়াদ-সৈকত টেকে কি-না সেটাই ছিল বড় প্রশ্ন। কারণ ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বোলারা চেপে ধরেছে চারদিক থেকে।

কিন্তু দেখে-শুনে খেললেন রিযাদ-সৈকতের জুটি। মাথা নিচু করে কয়েকটা ওভার ক্রিজে থাকরেন সৈকত, এরপর নিজের খোলস থেকে বেরিয়ে এক বাউন্ডারি আর এক ছক্কা মেরে দলীয় রানের চাপটা কমিয়ে দিলেন। তবে সৈকতের রান তোলার গতিটা খানিকটা বেশিই ছিল। যে কারণে তিনি ২২ বলে ১৪ রানে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন। ৩২.৫ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ১১৬/৫।

২৬ রান নিজের নামের পাশে যোগ করলেন আর সঙ্গীকে সাপোর্ট দেয়া রিয়াদ স্ট্যাম্পিং হবার পর হারের শংকা জেঁগে ছিল। তবে বাংলাদেশের দলীয় স্কোর ১৪৭/৬, তারপর থেকে ৭ম জুটিতে থাকা সোহান আর  মিরাজ কোন সুযোগই দিলেন না ক্যারিবিয়ান বোলারদের।  সোহান ৩২ আর মিরাজ ১৬ রানে অপরাজিত থেকে ৪ উইকেটের জয় তুলে মাঠ ছাড়লেন স্বাগতিকদের ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিয়ে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস বাংলাদেশ (ফিল্ডিং)
ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং : ১৭৮ অলআউট (৪৮.৪ ওভার)
বাংলাদেশ ব্যাটিং : ১৭৯/৬ (৪৮.৩ ওভার)
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : তাইজুল ইসলাম (বাংলাদেশ)
ম্যান অব দ্য সিরিজ : তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)

ফলাফল : বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী

সিরিজ ৩-০