বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুরে বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ছয়জনের বাড়ি গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি জয়েরটেক এলাকায় চলছে শোকের মাতম। এলাকাবাসী নিহতদের পরিবারকে শান্তনা দিলেও থামছেনা স্বজনদের আহাজারি। এদিকে শুক্রবার জানাজা শেষে নিহতদের লাশ তাতের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিহত ছয়জনের লাশের কফিন গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি জয়েরটেক এলাকার একটি খোলা মাঠে পাশাপাশি রেখে একই স্থানে দুটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে সাড়ে ১১টার দিকে নিহত ছয়জনের লাশ তাদের পরিবারিক গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্যাহ খান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্ল্যাহ মন্ডল, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র (সাময়িক বরখাস্ত) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সরকারের সাবেক সচিব ও মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি এমএম নিয়াজ উদ্দিন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শওকত হোসেন সরকার, সুরুজ আহমেদ, কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপি নেতা হেলাল উদ্দিন, মহানগর যুবলীগের আহবায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিনসহ এলাকার হাজার হাজার মানুষ শরিক হন।

গত বৃহ¯পতিবার গাজীপুরের কোনাবাড়ি হতে স্থানীয় ৯জন একটি মাইক্রোবাস যোগে পদ্মাসেতু হয়ে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে দুপুর ১২টার দিকে পদ্মাসেতু পার হয়ে তারা উজিরপুরের নতুন শিকারপুর সংলগ্ন মহাসড়ক অতিক্রম করছিলেন। এসময় মাইক্রোবাসের পেছনের ডান পাশের চাকা ফেটে গেলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এসময় মাইক্রোবাসটির সঙ্গে ঢাকামুখী দ্রুতগতির মোল্লা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। পরে হাসপাতালে আরও দুজনের মৃত্যু হয়। দূর্ঘটনার খবর পেয়ে গাজীপুরে হতাহতদের বাড়িতে স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বাড়িতে বাড়িতে শুরু হয় শোকের মাতম। এলাকাবাসি ও আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধু বান্ধবরা হতাহতদেও বাড়িতে ভীড় জমাতে থাকেন। তারা শান্তনা দিয়েও হতাহতদের স্বজনদের কান্না থামাতে পারেন নি। তাদের আহাজারিতে পুরো এলাকায় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এদিকে রাতেই ময়নাতদন্ত শেষে নিহতদের লাশ শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় নিয়ে আসা হয়। লাশ আনার খবর পেয়ে এলাকার হাজার হাজার লোক নিহতদের লাশ একনজর দেখার জন্য ভিড় করে।

দূর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি থানাধীন জয়েরটেক এলাকার হাজী জব্বার আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪৩), মোহাম্মদ রহা মিয়ার ছেলে নজরুল ইসলাম ঠান্ডু (৫৪), হাসেন মিয়ার ছেলে আব্দুর রহমান (৪৫), পূর্ব কলাপাড়া এলাকার উজিরুল ইসলামের ছেলে রুহুল আমিন (৪২), আব্দুর রহমানের ছেলে হারুন অর রশিদ বাদশা (৪০) এবং আহাকি এলাকার তমিজউদ্দিনের ছেলে হাসান সরকার (৩৬)। দূর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে মাইন উদ্দিনের ছেলে মোকসেদ আলম (৫৪) ও মাইক্রোবাস চালক আসর উদ্দিন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন।

শুক্রবার সকালে নিহত রুহুল আমিনের ও হারুন অর রশিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক আবেগঘন পরিবেশ। রুহুল আমিন ও হারুন অর রশীদ সম্পর্কে মামাতো ফুফাত ভাই। দুর্ঘটনায় তারা দুই ভাই মারা যান। হারুন অর রশিদের বৃদ্ধ মা প্রিয় সন্তানের জন্য আহাজারি করছেন। বাকরুদ্ধ স্ত্রী বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তার দুটি ছেলে ফাহিম (১২) ও মাহিম (৫) ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। বাড়ির পাশে পাশাপাশি দুই ভাইয়ের কবর খোড়া হয়েছে। আর তাতেই দুইজনকে কবরস্থ করা হয়। অপর নিহত জালাল উদ্দিন ঠান্ডুর (৬০) বাড়ি গিয়ে দেখা যায় তার শতবর্ষী মা করদজান, স্ত্রী রোকেয়া বেগম, সন্তান ও বোনেরা বিলাপ করছেন। প্রিয়জন হারানোদের নানাভাবে শান্তনা দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা। স্বামী হারা রোকেয়া বেগম জানান, তার স্বামীর সঙ্গে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কথা হয়। তখন তারা পদ্মা ব্রিজের কাছাকাছি ছিল। বেলা সাড়েবারটার দিকে দুর্ঘটনার খবর পান তার মেয়ের মাধ্যমে।

গাজীপুরের কোনাবাড়ির জয়েরটেক এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রফিজ উদ্দিন স্বপন বলেন, দু’দিন আগে পদ্মা সেতু দেখার জন্য এলাকার ৯জন পরিকল্পনা করেন। পরে তাদের পরিকল্পনায় কুয়াকাটা ভ্রমণের কর্মসুচীও যোগ করা হয়। ওই ৯জনের মধ্যে দুইজন দলিল লেখক ও সাতজন ছিলেন ব্যবসায়ী। ঘটনার দিন দুপুরে গণমাধ্যমের সুবাদে দুর্ঘটনাটির সংবাদ শুনতে পান স্থানীয়রা।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বৃহ¯পতিবার সকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ি হতে স্থানীয় ৯জন একটি মাইক্রোবাস যোগে পদ্মাসেতু হয়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ভ্রমণের উদ্দেশ্যে রওনা হন। দুপুর ১২টার দিকে তাদের পদ্মা সেতু দেখা শেষ হয়েছিল। এরপর তাদের মাইক্রোবাসটি পদ্মাসেতু পার হয়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে ছুটে যাচ্ছিল। উজিরপুরের নতুন শিকারপুর সংলগ্ন মহাসড়ক অতিক্রম করছিলেন। পথে দুপুর ১২টার দিকে পদ্মাসেতু পার হওয়ার পর তারা উজিরপুরের নতুন শিকারপুর সংলগ্ন মহাসড়কে পৌছলে মাইক্রোবাসের পেছনের ডান পাশের চাকা ফেটে গেলে মাইক্রোবাসটির সঙ্গে ঢাকামুখী দ্রুতগতির মোল্লা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং মোট ৬ জন আরোহী নিহত হন।

উজিরপুর থানার এসআই রবিউল ইসলাম জানান, দূর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের চালকসহ আহত তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।