গাজীপুরের শ্রীপুরে ট্রেনের সঙ্গে গার্মেন্টসের শ্রমিকবাহী একটি বাসের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বাসের চালকসহ ৫ জন নিহত ও অন্ততঃ ১৫ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে তিনজন ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে বসা ছিলেন। রবিবার ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল সড়কের শ্রীপুরের মাইজপাড়া এলাকার লেবেল ক্রসিংয়ে এ দূর্ঘটনা ঘটে। দূঘটনা তদন্তে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- গাজীপুরের শ্রীপুর থানার বালিয়াপাড়া এলাকার জুনায়েদের স্ত্রী গার্মেন্টসকর্মী প্রিয়া বেগম (২৬) এবং ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার চর মাধাখালি (নতুন চর) এলাকার মৃত শামাল উদ্দিনের ছেলে ইলিয়াস উদ্দিন (৩৫) এবং বাসের চালক তাজুল ইসলাম (৩০)।

শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার হারুন অর রশিদ ও স্থানীয়রা জানান, রবিবার সকালে গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ী এলাকার জামাান ফ্যাশন লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার একটি বাস শ্রমিক নিয়ে কারখানায় যাচ্ছিল। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাসটি শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ স্টেশন ও সাতখামাইর স্টেশনের মাঝামাঝি মাইজপাড়া এলাকার লেবেল ক্রসিং দিয়ে সিগন্যালবার নামানো না থাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইন অতিক্রম করছিল। এসময় ঢাকা থেকে নেত্রকোণার জাজিরাগামী বলাকা কমিউটার এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে ওই বাসের সংঘর্ষ হয়। ট্রেনের ধাক্কায় বাসটি ছিটকে রেললাইনের পাশে উল্টে পড়ে এবং বাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই রফিকুল ইসলাম জানান, বাস ও ট্রেনের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ২জন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরো ৩ জনসহ মোট ৫জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে ৩জন ট্রেনের ইঞ্জিনের সম্মুুখভাগে বসা ছিলেন। নিহত অপর দুইজনের মধ্যে একজন বাসের চালক এবং অপরজন গার্মেন্টস শ্রমিক প্রিয়া। এ ঘটনায় অন্ততঃ ১৫ জন আহত হন। আহতদের বেশিরভাগই বাসযাত্রী এবং তারা ওই কারখানার কর্মী। স্থানীয়রা হতাহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ও ক্লিনিকে প্রেরণ করে। গুরুতর আহত ৬জনকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। দূর্ঘটনায় নিহত দুইজনের লাশ তার স্বজনরা ঘটনার পরপরই নিয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। দুর্ঘটনার সময় লেবেল ক্রসিংয়ের সিগন্যাল বার নামানো হয়নি এবং গেটে কোনো গেটম্যান ছিলেন না বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত ডা. জান্নাতুন নাঈম জানান, আহত ১৫জনকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত ৬জনকে ঢাকা ও ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাপসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেওয়া আহতরা হলেন- নিলুফা (৪১), জাহিদ (২৪), আরমান (১৭), নাঈম (১৯), পারভেজ(৩৪), মাসুম (১৮), ফারজানা (২০), বেবী (৪০), রেশমী (৩০), বিল্লাল (২০), হালিমা (২৪), মাহফুজ(২৫), শিপন (১৭), হাবিবুল্লাহ (১৬), সুলেমা (১৯)।

রেলওয়ের জয়দেবপুর স্টেশন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ শহীদুল্লাহ জানান, দূর্ঘটনায় নিহত তিনজনের লাশ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে প্রিয়া বেগম ও ইলিয়াস উদ্দিন এ দু’জনের পরিচয় পাওয়ার পর তাদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত অপর ৩০ বছরের অজ্ঞাত পুরুষের পরিচয় পাওয়া যায় নি।

এদিকে দূর্ঘটনার খবর পেয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শামসুল আলম প্রধান ও শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের খোঁজ খবর নেন।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, দূর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দূর্ঘটনা তদন্তের জন্য গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট অঞ্জন কুমার সরকারকে আহবায়ক করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটি অন্য দু’সদস্য হলেন- শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম এবং শ্রীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। এ ছাড়া দূর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেককের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং আহতদেরকে চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।