দুয়েকদিনের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সোমবার এ কথা জানিয়েছেন তিনি।

জ্বালানির দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে রোববারই ডিজেলের আমদানি শুল্ক ও আগাম কর কমিয়েছে সরকার। এর ফলে একটা ধারণা হয়েছিল, ডিজেলের দাম কমানোরও একটা সিদ্ধান্ত আসবে।

গত ৫ আগস্ট সরকার ডিজেল ও পেট্রোলসহ সব ধরনের জ্বালানির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।

সে সময় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রায় ৪২ শতাংশ বাড়িয়ে লিটার প্রতি ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা করা হয়।

এ নিয়ে অব্যাহত সমালোচনার মধ্যে ডিজেলের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করে ২৮ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপনে আমাদানি শুল্ক কমানোর সাথে সাথে পাঁচ শতাংশ অগ্রিম করও প্রত্যাহার করা হয়েছে। এবং রোববার রাত থেকেই নতুন শুল্কহার কার্যকর হয়েছে।

দাম কমানো নিয়ে যা বলছেন প্রতিমন্ত্রী
বিশ্ববাজারে তেলের দাম আবারো বেড়ে গেছে উল্লেখ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, এখন মূল্য সমন্বয় করতে হলে সরকারকে জ্বালানি তেলে ভর্তুকি বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, ‘যখন ১১৪ টাকা ছিল ডিজেল, তখন ৮ টাকার ওপরে ভর্তুকি ছিল। এখন হয়তো সেই জায়গাটা আরো বাড়বে। কিন্তু তারপরও এটা (আমদানি শুল্ক ও কর) রিডিউস (কম) করাতে দাম কতটা অ্যাডজাস্ট হবে সেটা আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি নাই।’

‘হয়তো কাল-পরশুর মধ্যে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নেব,’ বলেন তিনি।

মূল্য সমন্বয়ের বিষয়ে এখনো যাচাই-বাছাই চলছে।

তবে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী জ্বালানি তেলের দাম কমবে সরাসরি এমন আভাস দেননি।

কিন্তু আগামী দুয়েকদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত জানাতে পারবে বলে উল্লেখ করেছেন প্রতিমন্ত্রী।

এখন এনবিআর শুল্ক ও কর কমানোর ফলে যেহেতু ডিজেলের আমদানি ব্যয় কমবে, সে কারণে জ্বালানি তেলের দাম কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের নজিরবিহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

কিন্তু গত কিছুদিন ধরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে এলেও বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি, সে নিয়েও ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সাথে সমন্বয় না করার যুক্তি হিসেবে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ধাপে ধাপে দাম বাড়ালে লিটার প্রতি ১০ টাকা করে প্রতি মাসেই বাড়াতে হতো।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, মূলত দুটি কারণে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারের সাথে প্রতিনিয়ত সমন্বয় করা হয় না।

অভ্যন্তরীণ বাজারে সরকার জ্বালানি তেলের যে দাম ঠিক করে দেয়, সে দামেই ভোক্তা ক্রয় করে।

আর এই দাম নির্ধারিত হয় সরকারি সিদ্ধান্তে, বাজারের প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে নয়।

দ্বিতীয়ত, সরকার আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে তেল কেনে।

আর সে চুক্তি হয় মূলত কত জাহাজ ও লিটার তেল কেনা হবে তার ওপর।

ফলে যখন যে চুক্তি হয়, সে চুক্তি অনুযায়ীই তেল পাওয়া যায়- বিশ্ববাজারে দাম যাই হোক না কেন।

সূত্র : বিবিসি