নগরীর ব্যস্ততম সদরঘাট-মাঝিরঘাট স্ট্যান্ড সড়কে তীব্র যানজট এখন নিত্য দিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। এই সড়কে বসানো পণ্যবাহী গাড়ির ওজন মাপার স্কেলগুলো বিষ ফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। ভুক্তভোগি পথচারী ও যাত্রীদের অভিযোগ, এ সড়কে বেশ কিছু ব্যবসায়ী স্কেল বসিয়ে যত্রতত্র ট্রাক পার্কিং করে যানজট সৃষ্টি করছে। দীর্ঘ দিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলেও প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

এক সময় চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে আসা যাওয়া করতে ব্যবহৃত হত এই সড়ক। বর্তমানে যেটি সদরঘাট-মাঝিরঘাট স্ট্যান্ড সড়ক নামে পরিচিত। এ সড়কে এখনো বিমানবন্দর, আগ্রাবাদ, কদমতলির যাত্রী ও মাঝিরঘাটের বাসিন্দারা চলাচল করেন। কর্ণফুলী নদী পাড়ে রয়েছে ব্যবসায়িদের অর্ধশতাধিক মাছের কোল্ড স্টোরেজ। যেখান থেকে প্রতিদিন শত শত মাছের গাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে এ সড়ক দিয়ে। বর্তমানে চলাচলে প্রধান বাধা অসহনীয় যানজট। সড়কের উপর ওজন স্কেলের কারণে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। কখনো কখনো এই যানজট ছাড়িয়ে যায় সদরঘাট হতে বারেক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত।

সরজমিনে দেখা যায়, যানজটের মূল কারণ সরু রাস্তার উপর স্কেল বসানো। এসব স্কেলের মধ্যে মাত্র তিনটি ছাড়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের নেই বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদন। নেই ট্রাফিক বিভাগের ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটও। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করে চলছে স্কেলের জমজমাট ব্যবসা। অভিযোগ রয়েছে, মাঝিরঘাট এলাকায় চলছে অসাধু ব্যবসায়ীদের স্কেল ব্যবসা। কর্তৃপক্ষের নিয়মিত তদারকির অভাব ও বিএসটিআইয়ের কতিপয় অসাধু পরিদর্শকের নীরব ভূমিকায় আইন মানারও আগ্রহ নেই এসব ব্যবসায়ীদের।

তার মধ্যে রয়েছে এ. আর কম্পিউটার স্কেলস, এ. আর পারফেক্ট স্কেলস, হাজী ইউছুফ স্কেল, মের্সাস শাহ জালাল এন্টারপ্রাইজ, আযান ডিজিটাল স্কেল ও এম আই ট্রেডিং কম্পিউটার স্কেলসহ ১০টির বেশি রয়েছে ওজন মাপার স্কেল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাঝির ঘাট সড়কের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের নেই ওজন মাপার যন্ত্রের সরকারি দপ্তরের কোনো অনুমোদন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ থেকেও নেওয়া হয়নি কোনো সার্টিফিকেট। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা এসব স্কেল বসিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে এ আর কম্পিউটার স্কেলস এবং এ আর পারফেক্ট স্কেলস এর মালিক মোঃ ফরিদ বলেন, ‘কর্ণফুলী নদী সংলগ্ন ২২টি নৌঘাট রয়েছে, মাঝিরঘাটে ১০টি লবণ মিল রয়েছে। জাহাজ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টন খাদ্য শস্য নামে। লোড-আনলোডের কাজ হয়। এসব পণ্যবাহী গাড়ি, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি স্কেলে ৩০ সেকেন্ডে মাপা হয়। এতে জ্যাম হবার কথা নয়। বরং স্ক্র্যাপ বহন করার জন্য কেএসআরএম, বিএসআরএম, আবুল খায়ের কোম্পানী যে ট্রেইলারগুলো রাস্তায় নামিয়েছে এসব তো কোন যানবাহনে পড়ে না। দানব বলা যায়। ওরাই রাস্তা শেষ করতেছে। ওদের কারণে জ্যাম হচ্ছে। এসব গাড়ি রাতে নামাতে পারে। কিন্তু সেটা তো কেউ করছে না।’

সিএমপি সদরঘাট থানার ওসি খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘ওজন মাপার স্কেলের কারণে সড়কে যানজট লেগে থাকে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বিষয়টি দেখার দায়িত্বে রয়েছেন ট্রাফিক পুলিশ। পাশাপাশি থানা পুলিশও জনদুর্ভোগ লাঘবে ব্যবস্থা নিবে।’

জানতে চাইলে সিএমপি দক্ষিণ বিভাগের ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) অনিল বিকাশ চাকমা বলেন, ‘মাঝিরঘাট এলাকায় যত্রতত্র বসেছে পণ্যবাহী গাড়ির ওজন মাপার স্কেল। প্রতিদিন এসব স্কেলে ওজন মাপাতে আসে শত শত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। এতে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সড়কে লেগে থাকে যানজট। সেখানে দুজন ট্রাফিক সার্জেন্ট ও তিনজন ট্রাফিক কনস্টেবল সারাদিন কাজ করে যানজট নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খায়। আমরা ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি এসব স্কেল সড়কের পাশ থেকে সরানোর জন্য। কিন্তু তাঁরা কেউ কথা শুনছেন না। এখন অভিযান পরিচালনা করে এসব স্কেল সরানো হবে।’

বিএসটিআই চট্টগ্রামের পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মাঝিরঘাট এলাকায় বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিয়ে পণ্যের ওজন মাপার স্কেল বসিয়েছে দুই থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠান। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। শিগগরই ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করে এসব অনুমোদনহীন স্কেল সরানো হবে।’