তাঁর আসল নাম আলিয়া আদভানি। কিন্তু আলিয়া ভাট এরই মধ্যে হিন্দি ছবির জগতে অভিনেত্রী হিসেবে একটা পরিচিতি পেয়ে গেছেন। ভাইজান-খ্যাত বলিউড সুপারস্টার সালমান খান তাঁকে ‘আলিয়া আদভানি’ নাম থেকে ‘আলিয়া’ অংশটি ছেঁটে ফেলার পরামর্শ দিলেন। ব্যস, ভাইজানের যেমন পরামর্শ তেমন কাজ। ২০১৪ সালে অভিষেক ছবি ‘ফুগলি’ মুক্তির আগমুহূর্তে আলিয়া আদভানি নাম পরিবর্তন করে হয়ে গেলেন কিয়ারা আদভানি। সেই থেকে কিয়ারা আদভানি নামেই বি-টাউনে তাঁর পথচলা।

কিয়ারা আদভানি আট বছর ধরে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অংশ। তাঁর ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে সাত-সাতটি হিট ছবি জমা পড়েছে। যার মধ্যে পাঁচটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি দুটি ও ওয়েব শো। এ ছাড়া কিয়ারা যেসব ছবিতে অভিনয় করেছেন তা শুধু দর্শকদেরই মুগ্ধ করেনি, সমালোচকদের কাছ থেকেও প্রশংসা কুড়িয়েছে। হিন্দি ছবিতে তাঁর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। চলচ্চিত্র নির্মাতারা বড় বড় প্রকল্পের জন্য তাঁকে কাস্ট করছেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি একজন ‘এ-লিস্ট’ অভিনেত্রীর খেতাব অর্জন করেছেন।

কিয়ারা আদভানি প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাতা করণ জোহর বলেন, ‘কিয়ারার সঙ্গে আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘লাস্ট স্টোরিজ’ ছবি দিয়ে। এ ছবির সাফল্যের পর তিনি অপরিহার্য হয়ে ওঠেন। এরপর তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ধর্ম প্রোডাকশন যে কাজ করেছে, তাই সফল হয়েছে।’ কিয়ারা অভিনীত ‘জুগজুগ জিয়ো’ ছবির সহশিল্পী এ প্রজন্মের বলিউড তারকা বরুণ ধাওয়ানও তাঁকে ‘লাকি চার্ম’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। অবশ্য কিয়ারা তাঁকে নিয়ে এসব মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নিজের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রেখে বলেছেন, ‘লাকি চার্ম বলাটা যথার্থ, তবে প্রতিভা না থাকলে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা যায় না। আমি মনেপ্রাণে অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলাম। আমার কোনো বি-প্ল্যান ছিল না।’ যা-ই হোক, তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর বপ অফিসের পারফরম্যান্সের দিকে নজর দিলেই বোঝা যায়, করণ জোহর ও বরুণ ধাওয়ান উভয়ের বক্তব্যই সত্য। ছবি ব্লকবাস্টার হওয়ার ক্ষেত্রে সত্যিই কিয়ারার কাছে ‘মিডাস টাচ’ রয়েছে।

কিয়ারা আদভানির হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ২০১৪ সালে, কমেডি ছবি ‘ফুগলি’র মাধ্যমে। ছবিটি দর্শকমহলে তেমন সাড়া জাগাতে না পারলেও ২০১৬ সালে তাঁর সাফল্যের গল্প শুরু হয়েছে স্পোর্টস বায়োপিক ‘এসএম ধোনি : দ্য আনটোল্ড স্টোরি’র মাধ্যমে। ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এমএস ধোনির জীবনের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এ ছবিতে তাঁর স্ত্রী সাক্ষীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন কিয়ারা। ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে সফল এবং বিশ্বব্যাপী ২০০ কোটি রুপিরও বেশি আয় হয়েছিল। ২০১৮ সালে তিনি নেটফ্লিপ অ্যান্থলজি ফিল্ম ‘লাস্ট স্টোরিজ’-এ একজন যৌন অসন্তুষ্ট স্ত্রীর চরিত্রে ব্যতিক্রমধর্মী অভিনয় করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।

২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কিয়ারা অভিনীত ‘কবির সিং’ ছবিটি বপ অফিসে দুর্দান্ত ব্যবসা করে। কিয়ারার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে সফল ছবি এটি। ছবিতে একজন মেডিকেল ছাত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। সন্দ্বীপ রেড্ডি পরিচালিত এই ছবি বপ অফিসে ৩৮০ কোটি রুপির ব্যবসা করে। তেলেগু ছবি ‘অর্জুন রেড্ডি’র হিন্দি রিমেক এটি। একই বছরে তিনি রাজ মেহতা পরিচালিত কমেডি ঘরানার ছবি ‘গুড নিউজ’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর সাফল্যের তালিকায় আরও একটি হিট ছবি যোগ করেন। সে বছর এ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে আইফা পুরস্কার জিতেছেন।

২০২০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত যৌন নিপীড়ন নিয়ে নেটফ্লিপ থ্রিলার ছবি ‘গিল্টি’তে কিয়ারার অভিনয় সমালোচকদের মুগ্ধ করেছে। কার্গিল যুদ্ধে শহীদ ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার জীবনের ওপর নির্ভর করে নির্মিত ‘শেরশাহ’ ছবিটি ২০২১ সালে কভিড-১৯ মহামারির কারণে ডিজিটালভাবে অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। সর্বাধিক স্ট্রিম করা আলোচিত এ ছবিতে কিয়ারার রোমান্টিক পারফর্ম ছিল প্রশংসার দাবিদার। ছবিটি ওই বছর ‘আইফা বেস্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’ পায়।

চলতি বছর এরই মধ্যে কিয়ারা আদভানি দুটি হিট ছবি নিজের নামে লিখে ফেলেছেন। ছবি দুটি হলো- ‘ভুল ভুলাইয়া ২’ ও ‘জুগজুগ জিয়ো’। আনিস বাজমি পরিচালিত ‘ভুল ভুলাইয়া ২’ ২০০৭ সালে নির্মিত ‘ভুল ভুলাইয়া’র সিকোয়াল। কিয়ারার সঙ্গে এ ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন টাবু ও কার্তিক আরিয়ান। এ বছরের ২০ মে ছবিটি মুক্তি পায়।

সিনেমা সংশ্নিষ্টদের ধারণা, ‘ভুল ভুলাইয়া ২’ টিকিট কাউন্টারে ড্রাই রান থেকে বলিউডকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। এ পর্যন্ত ছবিটি কভিড-পরবর্তী বপ অফিসে ২৭০ কোটি রুপির ব্যবসা করেছে। ‘জুগজুগ জিয়ো’ কিয়ারার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি।

রাজ মেহতা পরিচালিত ও ধর্ম প্রোডাকশনের ব্যানারে নির্মিত পারিবারিক কমেডি ধাঁচের এ ছবিটিও এ বছরের ২৪ জুন মুক্তি পায়। কিয়ারা আদভানি ছাড়াও এ ছবির কয়েকটি চরিত্রে অংশ নিয়েছেন নীতু কাপুর, অনিল কাপুর ও বরুণ ধাওয়ান। ‘জুগজুগ জিয়ো’ ছবিটি সমালোচকদের ইতিবাচক প্রশংসা অর্জনের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে সফলও হয়েছে; যা ২০২২ সালে এ পর্যন্ত মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বোচ্চ আয়কারী হিন্দি চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম।