দেশজুড়ে দূর্নীতি আর দেশের টাকা বিদেশে পাচারের খবর এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। প্রতিদিনই পত্রিকার পাতায় আর টিভি চ্যানেলগুলোতে টক শো-র আলোচিত বিষয় হচ্ছে ‌বিদেশে টাকা পাচার। তারপরও থেমে নেই এই টাকা পাচারের চক্র। এবার একটি পরিবারের তিন ভাইয়ের ৪ হাজার কোটি টাকা মেরে কানাডা আর আমেরিকায় পালিয়ে যাওয়া গল্প প্রকাশ পেয়েছে।

চট্টগ্রামের একটি অনলাইন মিডিয়াতে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি জাতীয় অর্থনীতিতে যথেষ্ট গুরুত্ব রাখে, কারণ টাকার অংকটা ৪ হাজার কোটি! দেশের টাকা কত জন কত ভাবে বিদেশে পাচার করছে এর সব গল্প তো প্রকাশ পাচ্ছে না। তার মধ্যে থেকে এই ৪ হাজার কোটি টাকা পাচারের গল্পটি প্রকাশ যেহেতু পেয়েছে তাই দৈনিক বার্তার পাঠকদের জন্য তা হুবুহু তুলে ধরা হলো—————

এ যেন ব্যাংকের টাকা মেরে খাওয়ার পারিবারিক চক্র! তারা তিন ভাই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ হিসেবে ব্যাংক থেকে নিয়েছেন অন্তত চার হাজার কোটি টাকা। তিন ভাইয়ের নামেই মামলা চলে, কারাদণ্ড হয়, জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। অন্তত দেড়ডজন মামলা এখনও চলমান। কিন্তু তাদের কখনোই ছোঁয়া যায় না, ধরা যায় না।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে এসে চট্টগ্রামে থিতু হওয়া এই তিন ভাই-ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় স্থায়ী ঠিকানা করে নিয়েছেন আগেই। শুধু কানাডাতেই পাচার করেছেন ঋণের বিপুল টাকা। তাদের স্ত্রী-সন্তানরাও থাকেন কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে। দুই ভাই অনেক আগেই বাংলাদেশ ছেড়েছেন। এক ভাই গোপনে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন। বিশাল অংকের ঋণের বিপরীতে ব্যাংকে রাখা বন্ধকি সম্পত্তির মূল্যও এতো কম যে, তা দিয়ে খেলাপি ঋণের এক-দশমাংশও আদায় করা সম্ভব নয়। সবমিলিয়ে তিন ভাইয়ের এই ঋণখেলাপি চক্রের হারানোর কিছু নেই। মাঝখান থেকে হাওয়া হয়ে গেছে ব্যাংকে রাখা সাধারণ মানুষের চার হাজার কোটি টাকা।

এই তিন ভাই হলেন চট্টগ্রামভিত্তিক নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহাম্মেদ রতন এবং পরিচালক টিপু সুলতান ও ফরহাদ মনোয়ার।

ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না
সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জহির আহাম্মেদ রতন ও তার ভাই টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে প্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত। সাউথ ইস্ট ব্যাংকের ২৬৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করায় বিচারক মুজাহিদুর রহমানের আদালত এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

এর আগে চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারিও ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করার দায়ে জহির আহমদ রতনের পাসপোর্ট জব্দ ও তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন চট্টগ্রাম একই আদালতের একই বিচারক।

তার এক সপ্তাহের মাথায় চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ব্যাংক থেকে ঋণের নামে ৩২৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা নিয়ে মেরে দেওয়ায় নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহাম্মেদ রতন এবং পরিচালক টিপু সুলতান ও ফরহাদ মনোয়ারকে ৫ মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত। নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের নেওয়া খেলাপি ঋণ আদায়ে চট্টগ্রামে জনতা ব্যাংকের লালদীঘি শাখার দায়ের করা মামলায় ওই শাস্তি দেওয়া হয়। এর আগেই অবশ্য অন্য মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল রতনের বিরুদ্ধে।

কিন্তু এরপরও তাদের ছোঁয়া যায় না, ধরা যায় না। বছরের পর বছর ধরে নানা কৌশলে সবরকম পরোয়ানা, সবরকম কারাদণ্ড থেকেও গা বাঁচিয়ে চলেছেন তিন ভাই— জহির আহাম্মেদ রতন, টিপু সুলতান ও ফরহাদ মনোয়ার।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে
ঋণ নিয়ে দীর্ঘদিনেও টাকা শোধ না করায় নুরজাহান গ্রুপের বিরুদ্ধে সাউথইস্ট ব্যাংকের জুবিলী রোড শাখা ২১১ কোটি ৭ লাখ ২৯ হাজার ৯৯১ টাকার দাবিতে আদালতে মামলা (নম্বর ২৬১/২০১) দায়ের করে। নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ম্যারিন ভেজিটেবল ওয়েল লিমিটেডের নামে এই ঋণ নেওয়া হয়েছিল। এই মামলা চলাকালে নুরজাহান গ্রুপ ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর মাত্র দুই কোটি ৯৪ লাখ এবং ২০২০ সালের ৩০ জুন মাত্র এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা পরিশোধ করে।

৩০ নভেম্বর ২০২১ পর্যন্ত মূল ঋণ ২০৬ কোটি ৬৬ লাখ ২৯ হাজার ৯৯১ টাকার সঙ্গে যুক্ত হয় ৬১ কোটি ২৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮৭০ টাকা। এর সাথে মামলা খরচ ৬০ হাজার ৫৯০ টাকা যুক্ত হয়ে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৭৬ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার ৪৫২ টাকা।

দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই মামলায় সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিচারক মুজাহিদুর রহমানের আদালত নুরজাহান গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জহির আহাম্মেদ রতন ও তার ভাই টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে প্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

৭ মাস আগে ৬ মাসের জেল
জনতা ব্যাংকের লালদীঘি শাখা থেকে ১১২ কোটি ৪৭ লাখ ৬২ হাজার ৮০১ টাকা ঋণ নেয় নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ঋণের সেই টাকা আর পরিশোধ করা হয়নি। পরবর্তীতে সুদ ও দণ্ড সুদসহ ব্যাংকের মোট পাওনা দাঁড়ায় ৩২৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এই টাকা পরিশোধ করার জন্য জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডকে নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু তার আগেই নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহাম্মেদ রতন, পরিচালক টিপু সুলতান ও ফরহাদ মনোয়ার চলে যান দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে। আদালতের নির্দেশ না মেনে টাকা পরিশোধ না করায় সর্বশেষ চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত।

চেকের ৪ মামলায় ১ বছরের কারাদণ্ড
চলতি বছরের ১১ আগস্ট চেক প্রতারণা মামলায় নুরজাহান গ্রুপের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহম্মেদকে ৬ কোটি টাকার অর্থদণ্ড ও এক বছরের কারাদণ্ড দেন চট্টগ্রামের আদালত। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক দেওয়ান হাট শাখার ৬ কোটি টাকা পাওনার বিপরীতে দায়ের করা চেকের (এনআই অ্যাক্ট) মামলায় চট্টগ্রাম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আফরোজা জেসমিন কলি ওই রায় দেন।

২০১১ সালে ভোজ্যতেল আমদানি করতে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক থেকে এই ঋণ সুবিধা নেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধাররা। দীর্ঘদিনেও ঋণ পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ১১০ কোটি টাকা পাওনার বিপরীতে ২০১৯ সালে অর্থঋণ মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। ২০১২ সালে নুরজাহান গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ম্যারিন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৬০ কোটি টাকার বিপরীতে ১০টি চেকের মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক দেওয়ানহাট শাখা। এর মধ্যে ৬ কোটি টাকার বিপরীতে দায়ের করা একটি মামলায় ওই রায় দেওয়া হয়।

এর আগে গত ১ আগস্ট, ১৯ জুন ও ১০ মে আরো তিনটি পৃথক চেকের মামলায় প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারদের বিরুদ্ধে প্রতিটি মামলায় এক বছর করে সাজা দেন আদালত। রায় হওয়া চারটি মামলায় দুই কর্ণধারকে এক বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি সমপরিমাণ (২২ কোটি টাকা) অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়।

অগ্রণী ব্যাংকের ২৫৮ কোটি টাকা হাওয়া
বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির বিপরীতে নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ম্যারিন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেড অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণের নামে ২৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। এরই মধ্যে এই অভিযোগে নুরজাহান গ্রুপের দুজন আর তিন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের তদন্তে দেখা গেছে, ২০১১ সালের ১০ মার্চ ম্যারিন ভেজিটেবল অয়েলস অগ্রণী ব্যাংকের চট্টগ্রামের একটি শাখায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড পামওলিন আমদানির জন্য ২০ শতাংশ মার্জিনে ১২০ দিন মেয়াদে প্রায় ৩২৭ কোটি চার লাখ টাকা ঋণপত্র এবং মার্জিন ২৬১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার টিআর ঋণের জন্য আবেদন করে। ম্যারিন ভেজিটেবল অয়েলসকে ঋণ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক শর্ত দেয়, নুরজাহান গ্রুপের আরেক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জাসমীর ভেজিটেবল অয়েলসের কাছে অগ্রণী ব্যাংকের আছাদগঞ্জ শাখায় ২০১২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮৫ কোটি ৯৭ লাখ ৭৭ হাজার ১৮ টাকার অনাদায়ী ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

দুদকের তদন্তে পরে ওঠে আসে, অগ্রণী ব্যাংকের আগ্রাবাদ জাহান ভবন শাখা থেকে ম্যারিন ভেজিটেবল অয়েলসের অনুকূলে ঋণের নামে ২০১১ থেকে ২০১২ সালের পর্যন্ত মোট ২৮০ কোটি ৭২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৩ টাকা কোনো শর্ত না মেনেই ছাড় করা হয়েছে ব্যাংক থেকে। দুদক এজন্য অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড আগ্রাবাদ শাখার তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক বেলায়েত হোসেনকে দায়ী করেছে। দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, ২০১১-২০১২ সালে ২৮০ কোটি ৭২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৩ টাকা নেওয়া ঋণের মধ্যে মাত্র ২২ কোটি ১৬ লাখ ২২ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। আর বাকি ২৫৮ কোটি ৫৬ লাখ ১৬ হাজার ৩৭৩ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল ম্যারিন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান, নুরজাহান গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মাররীন ভেজিটেবল অয়েলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহাম্মেদ, অগ্রণী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার তৎকালীন সিনিয়র অফিসার ও ঋণ প্রস্তাবকারী ত্রিপদ চাকমা, বৈদেশিক বাণিজ্যের তৎকালীন ব্যবস্থাপক মো. রমিজ উদ্দিন এবং শাখা প্রধান ও ডিজিএম বেলায়েত হোসেন বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়।

ঋণ পেতে খোলা হয় নামমাত্র কোম্পানি
চট্টগ্রামভিত্তিক নুরজাহান গ্রুপ ব্যবসা শুরু করে তেল আমদানি, পরিশোধন, উৎপাদন ও বাজারজাতের মাধ্যমে। এসব ব্যবসায় তারা কিছুটা সফল হওয়ার পর একসময় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে টাকা হাতানোর নেশায় জড়িয়ে পড়ে পুরোদমে। খোলা হয় নতুন নতুন কোম্পানি— যার বেশিরভাগই নামমাত্র। মূলত ঋণ নিতেই এসব কোম্পানি খোলা হয়— এমন অভিযোগও ওঠে। দেখা গেছে, কোম্পানি খোলার কয়েক বছরের মধ্যে সেই কোম্পানির আর অস্তিত্বই মেলেনি।

অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের নামে এভাবে অন্তত ২০টি কোম্পানি খোলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে নুরজাহান সুপার অয়েল লিমিটেড, ম্যারিন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেড, জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড, জামিয়া এডিবল অয়েল লিমিটেড, জামিয়া সুপার অয়েল লিমিটেড, জামিয়া ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড, নুরজাহান সিনথেটিক লিমিটেড, সাগরিকা বোতল এন্ড প্যাকিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, তাসমিন ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেড, নুরজাহান স্পাইসিস লিমিটেড, নুরজাহান ব্রিকস লিমিটেড, তাসমিন প্রপার্টিজ এন্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, নুরজাহান ট্যাংক টার্মিনাল লিমিটেড, আহমেদ ট্রেডার্স, আরওয়াই শিপিং লাইনস লিমিটেড, নুরজাহান সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেড, সুফি এন্ড ব্রাদার্স, লাহিড়ি এন্টারপ্রাইজ।

লুটপাট ৪ হাজার কোটি টাকা
নুরজাহান গ্রুপের এমডি জহির আহমদ রতন ও তার দুই ভাই মিলে সবমিলিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ১৫টি মামলা আছে।

নূরজাহান গ্রুপের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা পাবে অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকটির একারই পাওনা প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের জুবলী রোড শাখা নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ম্যারিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের কাছে পাওনা রয়েছে ২০৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর বাইরে নুরজাহান গ্রুপেরই আরেক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান তাসমিন প্রোপার্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড থেকে ব্যাংকটি পাবে ৯২ কোটি চার লাখ টাকা। সবমিলিয়ে শুধু নুরজাহান গ্রুপের এই দুই প্রতিষ্ঠানের কাছেই সাউথইস্ট ব্যাংক জুবলী রোড শাখা পাবে প্রায় ২৯৭ কোটি টাকা। অথচ এর বিপরীতে ব্যাংকের কাছে বন্ধকি সম্পত্তি যা আছে, তার মূল্য বড়জোর ৪০ কোটি টাকা পর্যন্ত হবে।

জানা গেছে, জহির আহমদ রতন মেসার্স আহমদ ট্রেডার্সের নামে ১১৮ কোটি ৫০ লাখ ৫১ হাজার ৮৮৩ টাকা ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। এ ঘটনায় ২০২০ সালে মামলা দায়ের করা হয়। ঋণের বিপরীতে কোনো স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক না থাকায় বাদীপক্ষ তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করেন। আদালত তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল ব্যাংকের ১১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ না করায় নুরজাহান গ্রুপের এমডি জহির আহমদ রতনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত। তিনি যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন সে জন্য বাদি পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞাসহ তার পাসপোর্ট জব্দ করার নির্দেশ দেন।