ময়মনসিংহের ফুলপুরে উদ্ধার হওয়ার নারীর মরদেহ খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে নিখোঁজ রহিমা বেগমের (৫২) কি না তা এখনও নিশ্চিত করে বলছে না পুলিশ। যদিও ওই নারীর মেয়েদের দাবি, উদ্ধার হওয়া লাশ তাদের মায়ের। এ অবস্থায় মরদেহের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

এদিকে গৃহবধূ রহিমা বেগমকে অপহরণ মামলায় এ পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্য মেলেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গত ২৭ আগস্ট রাতে খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে রহিমা বেগম নামে এক গৃহবধূ নিখোঁজ হন। পরদিন রহিমা বেগমের মেয়ে আদুরি খাতুন বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এরপর গত ২২ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নান তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন ‘আমার মায়ের লাশ পেয়েছি আমি এই মাত্র’। এরপর তিনি আরও বেশ কয়েকটি স্ট্যাটাস দেন।

অপহরণ মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই খুলনার ইন্সপেক্টর আবদুল মান্নান জানান, ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়টি জানতে পেরে তিনি রাতে বাদীপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নান দাবি করেন যে, ময়মনসিংহে উদ্ধার হওয়া লাশটি তার মায়ের। এরপর শুক্রবার সকালে মরিয়মসহ তার ৪ বোন ও কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় ছুটে যান। মরদেহের ছবি, পরনের কাপড় ও লাশ উদ্ধারের সময় থাকা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে মরিয়ম দাবি করেন যে, লাশটি তার মায়ের।

তিনি জানান, মরিয়ম মান্নান উদ্ধার হওয়া মরদেহের ডিএনএ’র সঙ্গে তার ডিএনএ মিলিয়ে দেখার জন্য ফুলপুর থানায় লিখিত আবেদন করেছেন। লাশ উদ্ধারের সময় ময়মনসিংহ পিবিআই এর একটি টিম সেখানে গিয়েছিল। এছাড়া মরিয়ম ও তার পরিবারের সদস্যরা ফুলপুর থানায় যাওয়ার পর পিবিআই এর ওই টিম সেখানে যায়।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, আগামী রোববার ফুলপুর থানা পুলিশ ২ জনের ডিএনএ মিলিয়ে দেখার জন্য আদালতে আবেদন করবে। আদালত অনুমতি দিলে ২ জনের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় সিআইডির ল্যাবে পাঠানো হবে। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল পেতে সাধারণত ১৫ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত সময় লাগে। ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত হওয়া যাবে না যে ওই মরদেহ মরিয়মের মায়ের কিনা।

ময়মনসিংহের ফুলপুর থানার ওসি মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর ফুলপুর থানার বওলা ইউনিয়নের কুকাইল গ্রামের একটি কবরস্থান থেকে বস্তাবন্দি এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার হয়। এরপর ময়না তদন্ত শেষে অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে মরদেহটি দাফন করা হয়। এ ঘটনায় এস আই সবুজ মিয়া বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

তিনি জানান, মরিয়ম মান্নান শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফুলপুর থানায় আসেন। এরপর জব্ধকৃত জামার রঙ দেখে ধারণা করছেন যে, জামাটি তার মায়ের হতে পারে। তিনি মরদেহের ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচ করতে আগ্রহী এবং সেজন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। এখন ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচ করে দেখা হবে।

তিনি বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর মরদেহটি উদ্ধারের পর দাফনের সময় বয়স উল্লেখ করা হয়েছিল ৩২ বছরের কাছাকাছি, আর নিখোঁজ রহিমা বেগমের বয়স ৫২ বছর। ডিএনএ পরীক্ষা করা হলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, লাশটি মরিয়ম মান্নানের মায়ের নাকি অন্য কারও।

রহিমা বেগম নিখোঁজের ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে খুলনার দৌলতপুর থানা পুলিশ। তখন দৌলতপুর থানা পুলিশ ও র‌্যাব মোট ৬ জনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার করে। গত ৪ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ গৃহবধূর প্রতিবেশী গোলাম কিবরিয়া, মহিউদ্দিন, পলাশ ও জুয়েলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে গোলাম কিবরিয়া খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সহকারী প্রকৌশলী। ১১ সেপ্টেম্বর পুলিশ রহিমা বেগমের সাবেক স্বামী বেলাল হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে। পরে গ্রেপ্তার হয় আরও একজন। পরবর্তীতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটির তদন্তভার পিবিআইকে দেওয়া হয়।

মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর আবদুল মান্নান জানান, ওই ৬ আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। আদালত এখনও শুনানির দিন ধার্য করেননি।

মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা দৌলতপুর থানার এস আই লুৎফুল হায়দার জানান, প্রথমে গ্রেপ্তার ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছিল। আদালত তাদেরকে জেল গেটে ১ দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমতি দেন। ওই ৫ জনকে জেল গেটে একদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তাদের কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্য মেলেনি। পরবর্তীতে এ মামলায় আরেকজন গ্রেপ্তার হয়, এরপর মামলাটির তদন্তভার পিবিআইতে চলে যায়।

তিনি জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে রহিমা বেগমকে অপহরণ করা হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছিল।

এ দিকে শুক্রবার সকালে নগরীর মহেশ্বরপাশা এলাকায় মরিয়মদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়িতে কেউ নেই। এলাকাবাসী জানান, মরিয়ম, তার বোন মাহফুজা আকতার, আদুরী আকতারসহ ৪ বোন এবং ভাবী কানিজ ফাতেমা ময়মনসিংহে গেছেন। ৪ বোনের একমাত্র ভাই মো. সাদী থাকেন নগরীর বয়রা এলাকায়। সেখানে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া সাদীকে অনেকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।