কক্সবাজার জেলা কারাগারে লাগামহীন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জেল কোড ভেঙে জেল সুপার মোঃ শাহ আলম খান কারা এরিয়ায় ১৭ টি গরু লালন পালন করছেন। এসব গরু দেখা শোনার জন্য নিয়োজিত করলেন দুই কারারক্ষী। সরকারি বিদ্যুৎ খরচে আবার গরুর গোয়ালে লাগানো হয়েছে ৮টি সিলিং ফ্যান। গো খাদ্যের যোগান দিচ্ছেন কারাগারের উদ্দিষ্ট খাবার। এমনকি ১৭ টি গরুর দুধ জেল খানার ভেতরে বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৩০০ টাকা দরে এমন অভিযোগ উঠেছে।

নবাগত জেল সুপার যোগদানের পর থেকেই এসব অনিয়মের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে সদ্য জেল ফেরত বিভিন্ন ব্যক্তি ও আদালতে হাজিরা দিতে আসা বন্দিরা জানান।

তাদের দেয়া তথ্যে জানা যায়, কারাগারে আটক বন্দিদের নিকট এক কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয় ৩ হাজার টাকায়, এক ডজন ডিম ২৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি কেজি ৬০০ টাকা, ৮০ টাকার বিস্কুট প্যাক ১৪০ টাকা, কোল্ড ড্রিং ড্রিংকো ৬০ টাকা।’এভাবেই নাকি গত আগষ্ট মাসে কারা ক্যান্টিনে এক মাসে লভ্যাংশ ৭৩ লাখ টাকা। সরকারি ভাবে ১০% লাভ দেখানোর কথা থাকলেও এভাবে চলছে কারা ক্যান্টিন। এত উচ্চ দামের মাংসের ক্রেতারা নাকি আত্মসমর্পণ করা কোটিপতি কারাবন্দি ইয়াবা কারবারিরা।

বচনে আছে, টাকা দিলে নাকি বাঘের চোখও মেলে! খাওয়া যায় মাদক থেকে শুরু করে মাংস-পোলাও। মোবাইল ফোনে বউ থেকে শুরু করে প্রিয়জন কিংবা বন্ধুর সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতে নেই মানা! বাইরে থেকে টের পাওয়া না গেলেও কারাগারের ভেতরে গড়ে উঠেছে অবৈধ সিন্ডিকেট। এসব অপকীর্তির হোতা কারগারের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। আর জেল সুপারের আশ্রয় প্রশ্রয়।

কারাগারটি থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া বেশ কয়েকজন বন্দিরা আরো তথ্য দেন, জেলখানার ভেতরে একপাশে তৈরি করা হয়েছে কারা ক্যান্টিন। সেখানে কয়েকশ হাজতি ও কয়েদির পছন্দমতো খাবার রান্না হয়। ক্যান্টিনে ন্যায্য দামে পণ্য বিক্রির নিয়ম থাকলেও ৫-১০ গুণ দাম নেওয়া হয়। যেখানে এক বিরা পান ১৫শ’ টাকা, সুপারির কেজি ২ হাজার টাকা, ছোট সুপারি ৪০০ টাকা। বিড়ি ও (নরমাল) সিগারেট ৬০/৭০ টাকা। বেসন ও গোল্ডলিফ এখন সরবরাহ নেই। ভিআইপি দেখা ২ হাজারে!

অনুসন্ধানে জানা যায়, ৭০০ বন্দির ধারণ ক্ষমতার কারাগারে বর্তমানে চার হাজারের বেশি বন্দি থাকেন। বন্দিদের জন্য দৈনিক খাদ্য তালিকা অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হয় না। সদ্য কারামুক্ত একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, কারাগারের সাগর ভবন আমদানি ওয়ার্ড নামে পরিচিত ১নং ওয়ার্ডে ১০০ আসামি থাকেন। সেখানে প্রতিজনের কাছ থেকে মাসে নেওয়া হয় ৩ হাজার টাকা করে। অন্য ভবনগুলোতে প্রতিমাসে দিতে হয় দুই হাজার টাকা করে। সব ওয়ার্ডে একই অবস্থা। হাসপাতালে সাধারণ বন্দিদের চিকিৎসার কোনো সুযোগ নেই। সেখানে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে মাসের পর মাস থাকে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। তাদের খাবার ও রান্না করা হয় হাসপাতালের রান্নাঘরে।

জানতে চাইলে কক্সবাজার জেল সুপার মোঃ শাহ আলম খান বলেন, ‘কে বা কারা অভিযোগ করেছে আমি জানি না। জেল কোডে পারমিশন আছে গরু লালন পালনের। অনেক জেল সুপারেই পালে। সরকারকে আমরা ভ্যাট দিই। এটা অবৈধ কিছু না। কারাগারে গরুর মাংস কখনো ৩ হাজার টাকা নয়। এটা গুজব। ইতিমধ্যে আমি আসার পর অনেক পরিবর্তন করেছি। আমার সময়ে ক্যান্টিনে মূল্যে তালিকা দেখে বন্দিরা জিনিসপত্র কিনেন। এখানে অনিয়ম বা দুর্নীতির কিছু নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘বেশ কিছু দিন আগে এক কারারক্ষীকে অনিয়ম দুর্নীতির কারণে বদলি করা হয়েছে খাগড়াছড়িতে। তিনিই মূলত বিভাগীয় মামলা তুলে নিতে নানা বিব্রতকর ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে হয়তো।’

 

বিশেষ প্রতিনিধি