পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৪ জনের লাশ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ১৭ জনের লাশ নদী থেকে উদ্ধার হয়। বাকিদের হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে ১২ শিশু রয়েছে।

ঘটনার পর পর ঘটনাস্থল উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় শত শত মানুষ ভিড় করেন। এদের মধ্যে হতাহতদের অনেক স্বজন আছেন। নদীর পাড়ে চলছে স্বজনদের আহজারি। তাদের কান্নায় নদীর পাড়ে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য তৈরি হয়। আশপাশের পরিবেশ হয়ে উঠে ভারী। কেউ বোনের লাশের সামনে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদেন। কেউ আবার ভাইয়ের লাশের সামনে মাতম করছেন। কেউ কেউ নিখোঁজ স্বজনের খোঁজে পাগলের মতো এদিক-ওদিক ছুটছেন। আউলিয়া ঘাট এলাকার করতোয়া পাড়ে স্বজন হারানোর এই বিলাপে চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন কেউ।

স্থানীয়রা জানান, ৫০-৬০ জন ধারণ ক্ষমতার শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি ১৫০-২০০ জন যাত্রী নিয়ে আউলিয়া ঘাট থেকে বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে (নদীর অপরপাড়ে) যাচ্ছিল। যাত্রীদের অধিকাংশ সনাতন ধর্মের অনুসারী। তারা শারদীয় দুর্গোৎসবের মহালয়া উপলক্ষে ওই মন্দিরে যাচ্ছিলেন। তিন গুণের বেশি যাত্রী নিয়ে যাত্রার কিছুদূর যাওয়ার পরই দুই দিকে দুলতে থাকে নৌকাটি। এ সময় মাঝি নৌকাটি তীরে ভেড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তার সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। আতঙ্কিত যাত্রীদের হুড়াহুড়িতে নৌকাটি ডুবে যায়।

এই নৌকাডুবি থেকে বেঁচে আসা এক যাত্রী হলেন মাড়েয়া বামনপাড়া এলাকার সুবাস চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, আমিও নৌকায় ছিলাম। নৌকায় দেড়শরও বেশি যাত্রী ছিল। আমরা নৌকায় উঠার পরপরই নৌকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। এ সময় মানুষজন নৌকার মধ্যেই হুড়াহুড়ি শুরু করেন। পরে যে পাশেই যাচ্ছিলাম, সেপাশেই নৌকায় পানি ঢুকছিল। আমরা পাঁচজন বন্ধু ছিলাম। কোনোমতে সাঁতার কেটে প্রাণে বেঁচে যাই। অন্য যাত্রীরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিল। সেই চরম মুহূর্তের বর্ণনা করতে পারবো না। তবে এতো মানুষ মারা যাবেন, তা বুঝতে পারিনি।

মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আনছার মো. রেজাউল করিম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্থানীয় নৌকার মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, মহালয়া উপলক্ষে মানুষের চাপ বেশি ছিল। প্রায় সব নৌকা বেশি করে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল। অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।