জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষকদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির এই সময়ে আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। শিক্ষার্থীদের বিশ^ নাগরিক হিসেবে তৈরি করতে হলে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে শিক্ষকদের সমৃদ্ধ হতে হবে। একারণেই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য তৈরি হওয়ার জায়গায় শিক্ষকের বেতনভাতা যতটুকু বাড়বে, তার তুলনায় গবেষণায়, দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ, প্রতিজন শিক্ষকের প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য ল্যাপটপ থেকে শুরু করে আধুনিক ক্লাসরুম, বিজ্ঞান ল্যাবসহ সবকিছু নিশ্চিত করতে হবে।

বুধবার বিশ্বশিক্ষক দিবস-২০২২ উপলক্ষে স্বাধীনতা শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশন আয়োজিত ‘শিক্ষকের মর্যাদা: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য।

উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করেছেন। তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ করলে আমরা সেটি দেখতে পাই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যেদিন বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা ছিল। আগস্টজুড়ে বঙ্গবন্ধুর নতুন চিন্তা-ভাবনা, পরিকল্পনা ছিল। সেই চিন্তা ছিল নতুন সমাজ গড়ার। যেটিকে তিনি বলেছেন ‘দ্বিতীয় বিপ্লব। সেই ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’কে ত্বরান্বিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু যেভাবে বলেছিলেন, আমি প্রচলিত সমাজকে ভেঙে ফেলতে চাই। প্রচলিত সমাজের ঘুণে ধরা বাস্তবতাকে ভেঙে ফেলে তিনি ১৫ আগস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ভাষণ দেয়ার কথা ছিল। তার মধ্য দিয়ে শিক্ষার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়ার সমস্ত প্রস্তুতি ছিল- যেটি পরবর্তীতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রেকর্ডে খুঁজে পাওয়া যায়।

তিনি আরো বলেন, আদর্শ শিক্ষক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার বিকল্প নেই। শিক্ষকদের সম্মানের জায়গায় বঙ্গবন্ধু কন্যা আপোষহীন। আমরা দেখেছি বঙ্গবন্ধু কন্যা তাঁর শিক্ষকদের কতোটা সম্মান করেন। তিনি মন্ত্রিসভা এবং দলীয় নেতাদের ঊর্ধ্বে রাখতেন শিক্ষকদের। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের কথা আমরা সবাই জানি। তাঁকে কতটা সম্মান করতেন প্রধানমন্ত্রী। এই বিবেচনায় সমাজের শীর্ষে রয়েছেন শিক্ষক। আমাদেরও আত্মসমালোচনা করা প্রয়োজন। আমরা ক’জন আনিসুজ্জামান হতে পেরেছি। মনে রাখতে হবে আমাদের প্রধান জায়গা ক্লাসরুম, বিজ্ঞান ল্যাব। শিক্ষকের হাত ধরে যখন মৌলবাদী তৈরি হয়, তখন রাষ্ট্র বিপন্ন হওয়ার উপকরণ তৈরি হয়। আমাদেরকে মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতে হবে। একইসঙ্গে মুক্তবুদ্ধি চর্চার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে জঙ্গিবাদ তৈরির সঙ্গে যখন কেউ সংশ্লিষ্ট হন সেটিকেও নির্মূল করতে হবে। সেটির আত্মবিকাশের পথ রুদ্ধ করে দেয়ার দায়িত্ব আমাদেরই। সেকারণেই শিক্ষক একইসঙ্গে নেতা, সংগ্রামী এবং একজন জ্ঞানতাপস মানুষ।

স্বাধীনতা শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শেখর, আলোচনা সভায় লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন স্বাধীনতা শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু প্রমুখ।