জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে প্রতারণা করে শিক্ষা বৃত্তি ও চাকুরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শতাধিক নারীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে খন্দকার সালমা শওমী (৩৫) ও শাহানাজ খন্দকার শাহীন (৪০) নামের দুই সহোদর বোন। গাজীপুরের কালীগঞ্জে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যৌথ স্বাক্ষরে অভিযোগ করেছেন প্রতারণার শিকার নাজমিন আক্তারসহ শতাধিক ভূক্তভোগী নারী। অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসসাদিকজামান।

ইউএনও বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর ভূক্তভোগী নারী এবং অভিযুক্তদের নোটিশ করা হয়েছে। দুই পক্ষের কথা শুনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও তিনি জানান।

নাজমিন আক্তারসহ ভূক্তভোগীরা জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে প্রকল্প দেখিয়ে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ৪ নং ওয়ার্ডের বাজার এলাকার দেওয়ান মার্কেট ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অফিস খুলেন খন্দকার সালমা শওমী ও শাহানাজ খন্দকার শাহীন নামের সহোদর দুই বোন। তারা শিক্ষা বৃত্তি ও চাকুরী সহ বিভিন্ন সুবিধাদি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় শত শত নারীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়াও ওইসব প্রকল্পে স্থানীয় স্বনামধন্য নারীদের উপদেষ্টা ও সদস্য দেখিয়ে সাধারণ নারীদের সঙ্গে প্রতারণার করেছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার টিউরী গ্রামের ভূক্তভোগী নুসরাত ফারজানা লোপা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে হাসুমনির সম্প্রীতি একটি প্রকল্পে শাহীন’স টিউটোরিয়াল নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রতারক চক্রের ক’সদস্য। পরে আকর্ষণীয় বেতন ও সুযোগ সুবিধা দেখিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের ১০টি পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। আকর্ষণীয় ওই ১০টি পদের চাকুরীতে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় ৩১০ জন নারীর বিভিন্নজনের কাছ থেকে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে তারা।

কালীগঞ্জ পৌর এলাকার দিলরুবা বলেন, শাহীন’স টিউটোরিয়ালে ২২ হাজার টাকা বেতন, ১ হাজার টাকা হাজিরা বোনাস, রেশন ও ৩ বছর পর পেনশন হিসেবে ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা দিবে বলে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রথমে নিয়োগ দেয়। পরে প্রতিষ্ঠান সরকারী হয়ে যাবে বলে আরো ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। দিতে না পারলে পরে দুই লাখ টাকা লাগবে বলেও হুমকি দেয়।

পানজোরা গ্রামের ভূক্তভোগী আতিকা বেগম বলেন, নানা প্রলোভনে চাকুরী দেওয়ার পর ওই দুই নারী আমাদেরকে নানা শর্ত জুড়ে দেয়। প্রতি সদস্যের প্রত্যেককে ৫টি করে কেন্দ্র তৈরি করে তাতে নতুন নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে বলে। প্রতি সদস্য ফরম ও নিবন্ধনসহ প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪শ টাকা করে দাবি করা হয়।

বক্তারপুর এলাকার দিপালী রাণী দাস বলেন, গবেষনা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু থিম ও থিংক পার্ক নামের প্রকল্পে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে প্রতারনা করা হয়েছে। ওই সহোদর বোন প্রথমে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে সদস্য বৃদ্ধি করার পর প্রতারণার আশ্রয় নেয় তারা।

মোক্তারপুর গ্রামের ভূক্তভোগী রিমা আক্তার বলেন, তাদের দুই বোনের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে আমি আজ সর্বশান্ত। শিক্ষা বৃত্তি ও চাকুরী দিবে বলে আমার মাধ্যমে নিজ এলাকার ৪ শতাধীক নারীকে তাদের সদস্য করেছি। প্রতিটি ফরম ১শ’ টাকা নিলেও তা নিবন্ধন করতে নেওয়া হয়েছে আরো ৩শ’ টাকা। এখন প্রতিশ্রুতি মত আমার করা সদস্যদের কোন কিছুই দিতে পারছি না। স্বামীও ভুল বুঝে বাড়ি ছাড়া করেছে। বাবার বাড়িতে গেলে সেখানেও সদস্যরা ঝামেলা করছে। তাই স্বামীর বাড়ি ও বাপের বাড়ি কোন বাড়িতেই এখন থাকতে পারছিনা। আমি এখন বাড়ি ছাড়া।

বাহাদুরসাদী এলাকার সোনিয়া আক্তার বলেন, আমরা প্রতারণার শিকার হয়ে চাকুরীর জন্য দেয়া টাকা ও বেতন চাইতে গেলে উল্টো খন্দকার সালমা শওমীর স্বামী তিলক দেওয়ান আমাদের নানাভাবে হুমকি-দামকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। আমাদের বিরুদ্ধে অশ্লীল কথা লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছে। এমনকি তাদের কাছে জমা রাখা আমাদের ছবি দিয়ে পর্ণ ছবি তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ারও হুমকি দেয় তিলক দেওয়ান।

এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বক্তব্য নিতে পৌর এলাকার দেওয়ান মার্কেটে তাদের অফিসে গিয়ে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে খন্দকার সালমা শওমীর ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করলেও কথা বলেননি। অপর অভিযুক্ত শাহানাজ খন্দকার শাহীনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দিলে তিনি পরিচয় জানার পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

কালীগঞ্জ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. বাদল হোসেন বলেন, আমার ওয়ার্ড এলাকায় অফিস নিয়ে প্রতারণা করায় ভূক্তভোগী নারীরা আমার কাছে বিষয়টি মৌখিকভাবে অভিযোগ করে জানায়। পরে আমি তাদের লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাতে বলি।

এ ব্যাপারে স্থানীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জুয়েনা আহমেদ বলেন, আমার অজান্তেই তারা আমাকে তাদের সদস্য করেছে। পরে তারা বিভিন্নজনের কাছে আমি ওদের সঙ্গে আছি জানিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ভূক্তভোগী নারীরা আমাকে বিষয়টি জানালে আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ইউএনও’কে তা অবহিত করি। তারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ^াস দিয়েছেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি বলেন, স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়েছি। পরে এব্যাপারে অভিযুক্তদেও বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমি ইউএনও সাহেবকে বলেছি।