মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, যারা অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে, বৈধ সরকারের বিরদ্ধে সংবিধানকে লঙ্ঘন করে হুমকি দেয়, তাদেরকে ১১ ডিসেম্বর থেকে কোন সুযোগ দেয়া হবে না। সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালে আমরা আঙ্গুল চুষবো না। কেউ যদি মনে করে আমরা আঙ্গুল চুষবো, তাহলে তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করেছে। আওয়ামী লীগ কচুপাতার পানি নয়, যে টোকা দিলেই পড়ে যাবে।

তিনি আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে বর্তমান সরকারের পতন হবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেয়া এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বলেন, বিদেশী প্রভুদের কিছু আশ^াসে আপনারা নর্দন-কোর্দন করছেন। যেসব বিদেশী প্রভুদের উস্কানিতে আপনারা গাছে চড়েছেন, শেষে কিন্তু মই থাকবে না। আবার যদি বলেন ১০ ডিসেম্বরের পরে আওয়ামী লীগ সরকার থাকবে না। তাহলে ১১ তারিখ যারা অবৈধ ভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখে, সংবিধানকে লঙ্ঘন করে, তাদের কথা বলারই সুযোগ দেয়া হবে না। তাই কথা বার্তা হিসেব করে বলেন। আমরাও বলে দিতে চাই, জনগন যদি রুখে দাঁড়ায়, তাহলে আপনাদের যে পরিণতি হবে সেজন্য আওয়ামীলীগ বা শেখ হাসিনার সরকার দায়ী থাকবে না।

তিনি বুধবার বিকেলে গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত বাসন থানা আওয়ামীলীগের ত্রি বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, যাদের কাছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ দুরে থাক এতিমের টাকাও নিরাপদ নয় সেই চোরের মায়ের বড় গলা। বিদেশে থেকে ইউটিউবে অপপ্রচার করে মনে করেছে এটাই শক্তি। মিথ্যাচার করে, অপপ্রচার করে পার পাবেননা। আমাদের নেত্রী সাংবিধানিক ভাবে যেমন রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, তেমনি দলকে নিভৃত রাখেন, যাতে কোন রকম উচ্ছৃখল না হয়। তাই আমরা অনুরোধ করি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজনীতি করেন, আন্দোলন করেন, আপনাদের কেউ বাধা দেয়নি দিবেও না। কিন্তুআপনারা যদি আইন হাতে তুলে নেন যদি সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ করে কোন কর্মসূচি দেন তাহলে তার পরিনাম ভালো হবে না।

তিনি বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ ভাবে বিরোধিতাকারী অপশক্তিরা বলে পাকিস্তান ভালো ছিলো। বিএনপি বিহারীদের মত নতুন দালাল সাজতে চায়। যারা পাকিস্তানীদের চায়, মুক্তিযোদ্ধারা জানে তাদের কিভাবে পাকিস্তান পাঠাতে হবে। কিছু বল্লেই আপনাদের বিদেশী প্রভুরা বলবে মানবাধিকার নেই। ৩০ লক্ষ লোক শহীদ হয়ে কয়েক লক্ষ লোক পঙ্গু হয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই মুক্তিযোদ্ধারা যদি রাস্তায় নামে, কি হবে একবার ভেবে দেখেন।

সম্মেলন কমিটির আহ্বায়ক আফজাল হোসেন সরকার রিপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোঃ সাহাবুদ্দিন ফরাজী ও আনোয়ার হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্যাহ মন্ডল প্রমূখ।

দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর পর অনুষ্ঠিত বাসন থানা আওয়ামী লীগের এ সম্মেলনে অধ্যাপক (অব.) আব্দুল বারীকে সভাপতি, ফাইজুল আলম দিলীপকে সিনিয়র সহ সভাপতি, জেলা ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি ও ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আবুল কাশেমকে সাধারণ সম্পাদক এবং সফিকুল ইসলাম সফি, আমির হোসেন ও রকিব সরকারকে যথাক্রমে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাম ঘোষণা করে বাসন থানা আওয়ামী লীগের ছয় সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এর আগে সম্মেলনকে ঘিরে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবের আমেজ দেখা গেছে। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা সম্মেলনস্থলে এসে ভিড় জমান। কলেজ মাঠ ও আশপাশের সড়ক-মহাসড়কে ব্যানার, ফেস্টুন, বিল বোর্ড ও তোরণ দিয়ে ছেয়ে ফেলা হয়।

কাঙ্খিত পদ না পেয়ে সম্মেলনস্থলে ব্যাপক ভাংচুর ॥

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন বুধবার নগরীর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিন শেষে উৎসবের আমেজ শেষ হয় ভাংচুরের মধ্য দিয়ে। কাঙ্খিত পদ না পেয়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সম্মেলন স্থলে এ ভাংচুর করে।

সম্মেলনে উপস্থিত ও প্রত্যক্ষদর্শী কর্মীরা জানান, গাজীপুর মহানগরের বাসন থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের প্রথম পর্ব শেষে বিকেল তিনটার দিকে মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাড. আজমত উল্লাহ খান নতুন কমিটির তালিকা ঘোষণা করেন। নতুন এ কমিটির সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত অধ্যাপক আব্দুল বারী, সাধারণ সম্পাদক পদে আবুল কাসেম এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে সফিকুল ইসলাম সফি, আমির হোসেন ও রকিব সরকারের নাম ঘোষণার পরপরই পদ বঞ্চিত বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সম্মেলন স্থলে হৈচৈ শুরু করে। এক পর্যায়ে কাঙ্খিত পদ না পেয়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সম্মেলন স্থলে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। তারা মঞ্চের সামনে সহ¯্রাধিক চেয়ার, টেবিল, ফ্যান, পতাকা স্ট্যান্ড, সাউন্ড সিষ্টেম ভাংচুর করে। এসময় বিভিন্ন এলাকা থেকে সম্মেলনে আসা কর্মী সমর্থকরা আতঙ্কিত হয়ে দিকবিদিক ছুটাছুটি শুরু করে। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে এ তান্ডব চলতে থাকে। পরে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

এসময় মঞ্চে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক এমপি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য মোঃ আনোয়ার হোসেন, মোঃ সাহাবুদ্দিন ফরাজী, মহানগর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্যাহ মন্ডল প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

দলের নেতা কর্মীরা জানান, সম্মেলনে বাসন থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে তিনজন প্রার্থীর মধ্যে দুইজন প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অধ্যাপক আব্দুল বারী সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। সিনিয়র সহ সভাপতি পদে নির্বাচিত হন ফাইজুল আলম দিলীপ। আর সাধারণ সম্পাদক পদে ২০ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪-৫জন প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। এ পদে জেলা ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি ও ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আবুল কাশেম নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক পদে সফিকুল ইসলাম সফি, আমির হোসেন ও রকিব সরকার প্রার্থী হলেও তারা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত হন।