১৯৭৮ সালে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। সেই আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা (৬ গোল) মারিও ক্যাম্পেসকে কেউ বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলারের কাতারে ফেলবে না। সে আসরে ১৭ বছর বয়সী দিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনাকে না খেলানো নিয়ে অনেক কথা উঠে। সেই ম্যারাডোনা ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ এনে দেন। এবার তাদের তৃতীয় শিরোপা লিওনেল মেসির হাত ধরে।

ম্যারাডোনার সময় এবং এরপর কিছু বছর বিশ্বের যে প্রান্তেই স্কিলফুল কোনো ফুটবলার পাওয়া যেত তার তুলনা হতো ল্যাতিন আমেরিকার এই গ্রেট ফুটবলারের সাথে। যেমন সৌদি আরবের সাঈদ ওয়াইরানকে মরুর ম্যারাডোনা, রোমানিয়ার গিওর্গি হ্যাজিকে কার্পেথিয়ান ম্যারাডোনা, যুগোশ্লাভিয়ান ড্রাগন স্ট্রয়কোভিচকে বলকানের ম্যারাডোনা বলা হতো। আর্জেন্টিনাতেও আরিয়েল ওর্তেগা, হুয়ান রিকুয়েলকে, পাবলো আইমার, হাভিয়ার স্যাভিওলা, মার্সেলো গ্যালার্ডো, কার্লোস তেভেজকে বলা হতো নতুন ম্যারাডোনা। শুরুর দিকে লিওনেল মেসিরও তুলনা চলত আর্জেন্টিনার সাবেক অধিনায়কের সাথে। পরে অবশ্য মেসি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। ‘মেসি’ অন্যের উপাধি হয়ে যান। মানে ‘নতুন মেসি’ বলে ডাকা কয়েকজন ফুটবলারকে।

পেলে এবং ম্যারাডোনার মধ্যে কে সেরা, এ নিয়ে বিতর্ক তো আছেই। আর্জেন্টিনার দুই ফুটবল কিংবদন্তী ম্যারাডোনা এবং মেসির মধ্যে কে সেরা এই তুলনাও চলছে বহু দিন ধরেই। দিয়েগো বিশ্বকাপ এনে দিয়ে অন্য উচ্চতায় স্থান করে নিয়েছেন। মেসি গত চার বিশ্বকাপে সেটা পারেননি। সেই সাফল্য ধরা দিয়েছে এবার। তাই এখন বলেই ফেলা যায়, ম্যারাডোনার চেয়ে মেসিই এগিয়ে।

মেসির বাকি ছিল বিশ্বকাপই জেতা। এই বর্তমান ফুটবল তারকা গত বছরই পেছনে ফেলেন ম্যারাডোনাকে কোপা আমেরিকা জয়ের মাধ্যমে। তিন বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে নেতৃত্ব দেয়া ম্যারাডোনা কখনই দেশকে কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন করাতে পারেননি, যা মেসির নেতৃত্বেই পুনরুদ্ধার গত বছর। ম্যারাডোনা তিনবার কোপা আমেরিকায় অংশ নেন। এতে তার গোল মাত্র চারটি। কোনো অ্যাসিস্ট ছিল না।

অন্য দিকে মেসি খেলেছেন ৬টি কোপায়। আর্জেন্টিনার অন্য কোনো ফুটবলার এত বেশিবার এই আসরে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেননি। এতে তার গোল ১৩টি। অ্যাসিস্ট ১৭টিতে। এবার বিশ্বকাপও ফিরে পাওয়া সাবেক বার্সেলোনা এবং বর্তমান পিএসজি তার অধিনায়কত্বে।মেসির আছে একটি কোপা এবং একটি বিশ্বকাপ। ম্যারাডোনার শুধুই একটি বিশ্বকাপ। তাই এই সাফল্যের বিচারে মেসিরই অগ্রবর্তী অবস্থান। মেসি আর্জেন্টিনাকে অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণ এনে দিয়েছেন। তবে ম্যারাডোনা তা পারেননি। অবশ্য অনূর্ধ্ব-২০ যুব বিশ্বকাপ জয়ে দু’জনই সমানে সমান।

ক্লাব ফুটবলে ইতালির নাপোলিকে একাই টেনেছেন ম্যারাডোনা। এনে দিয়েছেন একের পর এক শিরোপা। আর মেসি ছিলেন বার্সেলোনার সাফল্যের মূল কারিগর। তবে ব্যালন ডি’অর, ইউরোপিয়ান ফুটবলের সেরা খেলোয়াড় গোল্ডেন স্যু জয়ে ম্যারাডোনার চেয়ে ঢের এগিয়ে মেসি।

বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা একবারই গোল্ডেন বল জিততে পেরেছিলেন। তা ১৯৮৬ সালে। অন্য দিকে মেসির এই অর্জন দু’বার। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর এবার কাতার বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার ৮ গোলের বিপরীতে মেসির গোল ১৩টি। জাতীয় দলের হয়েও গোলেও এগিয়ে মেসি। ৯৮টি গোল তার।

আর ব্যক্তিগত জীবনের তুলনা করলে মেসির ধারে কাছেও নেই ম্যারাডোনা। এখানে মেসি অনেক বেশি সৎ।