গত ২১ ডিসেম্বর ২২ ইং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে রাজধানীর উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সক্রিয় ২ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।

সিলেট জেলা ও চাঁদপুর জেলা হতে ০২ জন তরুণ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হলে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) ছায়া তদন্ত শুরু করে। গত ১৫ নম্ভেবর ২১ ইং সাইফুল ইসলাম তুহিন তাবলীগে যাওয়ার কথা বলে বাড়ী থেকে নিরুদ্দেশ হয় এবং গত ২৭ নভেম্বর ২১ ইং তার পরিবারের পক্ষ থেকে ওসমানী নগর থানায় একটি জিডি করা হয়। সে কওমী মাদ্রাসায় ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়াশুনা করে ওসমানীনগর থানাধীন দয়ামীর নামক স্থানের একটি কমিউনিটি সেন্টারে নাইট গার্ডের চাকুরী নেয়।

গ্রেফতারকৃত সাইফুল ইসলাম তুহিন স্থানীয় এক মাওলানার সাহাচার্যে এসে হিজরতের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।
এরপর সিলেট থেকে আরও চারজনসহ মাইক্রোবাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে গাড়ীতে থাকা এজেন্ট তাদের দাড়ি কেটে দেয়, মোবাইল, এনআইডি, মানি ব্যাগ ও টাকা নিয়ে নেয়। এরপর তারা প্রথমে ঢাকা ফকিরাপুল আসে এবং বাস যোগে বান্দরবন পৌঁছে। বান্দরবন এসে তারা দেখতে পায় গাড়ীতে তাদের মত আরও ১০ জন হিজরতকারী আছে।

২০২১ সালের প্রথম দিকে করোনার কারনে কলেজ বন্ধ হলে সে বাড়ি চাঁদপুরে চলে যায়। এ সময় কুরআন শরীফ শুদ্ধ করে পড়ার জন্য চাঁদপুরের একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। উক্ত মাদ্রাসার এক হুজুরের মাধ্যমে সে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ হয় এবং এই জঙ্গি সংঘঠনে নাম লেখায়। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সে ঢাকা চলে আসে এবং গোপন এ্যাপসের মাধ্যমে তাদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে।

পরবর্তীতে বান্দরবানে তাদের সহযোগী কেএনএফ সদস্যরা রিসিভ করে। থানচি থেকে প্রায় ২ ঘন্টা চাঁন্দের গাড়িতে গিয়ে তারপর প্রায় ১০ ঘন্টা হেঁটে কেটিসি ক্যাস্পে পৌছে। তারা এই ক্যাম্পের ২য় হিজরতকারী দল। পরবর্তীতে এ বছর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে কেএনএফ তাদের জানায় যে,আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ক্যাম্প আক্রমন করতে পারে। অক্টোবর মাসের ১০ তারিখ রাত তিনটার দিকে কেএনএফ কমান্ডার এসে তক্ষনি তাদের ক্যাম্প ছেড়ে যেতে বলে।

তারা দ্রুত সময়ে ক্যাম্প ছেড়ে কয়েক ঘন্টা হাটার দূরত্বে একটি জঙ্গলে অবস্থান গ্রহন করে। প্রায় খাবার ও পানীয়হীন অবস্থায় এভাবে দুদিন চলে গেলে ও কেএনএফ আর ফেরত না আসলে তারা বাধ্য হয়ে আবার সিপ্পি ক্যাম্পে ফেরত আসে। তাদের দুজনের ভাষ্যমতে, কেটিসি ক্যাম্পে তারা প্রায় ৪ মাসের মত ছিল। এসময় প্রথম ৩০ দিন তাদের ১২ জনকে তাদের পাহাড়ি সহযোগী কেএনএফ সদস্যরা পাশের পাহাড়ে ট্রেনিং করায়।তারপর আরও মাসেকখানি তাদের পিটি-প্যারেডের সাথে ডামি অস্ত্র এবং শেষে এয়ারগান ও বন্দুক দিয়ে অনুশীলন করত

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা আরও জানায়, তারা সেখানে যাওয়ার কিছু দিনের মধ্যে বুঝতে পারে মুলতঃ শামীম মাহফুজ @স্যার ছিল তাদের মূল নেতা। তার পরিকল্পনা অনুসারেই ক্যাম্পের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হতো। সে মতে তারা সব কিছু গুটিয়ে তাদের ৫৫ জন এবং কেএনএফ এর প্রায় ২০০ জন মিজোরামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। টানা ৫-৬ দিন হেঁটে তারা মিজোরাম সীমান্তে পৌছে সপ্তাহ খানেক জঙ্গলে অবস্থান নেয়। শেষ পর্যন্ত ঢুকতে না পেরে তারা আবার ৬-৭দিন হেঁটে একটি পাহাড়ে ক্যাম্প স্থাপন করে এর নাম দেয় রেতেলাং ক্যাম্প।

গ্রেফতারকৃত তুহিন জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে সহ সিলেট থেকে যাওয়া চারজন সেখানে থেকে চলে আসতে চাইলে তাদের টানা কয়েকদিন গাছের সাথে বেঁধে রাখে, একবেলা খাবার দেয় এবং শেষে তাদের সাথে লিখিত চুক্তি করে। তাতে বলা হয় ২০২৩ সাল পর্যন্ত থাকতে হবে। এসময় তারা আলাদা থাকবে, নিজেরা রান্না করে খাবে, কারো সাথে কথা বলবে না প্রভৃতি।একদিন এই চারজন ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যায় এবং বমদের হাতে ধরা পড়ে।

গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা সকলেই নব্য উগ্রবাদী জঙ্গী সংগঠন “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” এর সক্রিয় সদস্য। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য মূলতঃ জঙ্গিবাদের জন্য সদস্য রিক্রুটমেন্ট, অর্থ সংগ্রহ, সশস্ত্র সামরিক ট্রেনিং, আধুনিক অস্ত্র ক্রয়সহ বিশাল জঙ্গি বাহিনী গঠন করা। গ্রেফতারকৃতরা হলেন,সাইফুল ইসলাম তুহিন (২১)মোঃ নাঈম হোসেন (২২)।গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ১টি মামলা রুজু হয়েছে। ডিএমপির সিটিটিসি’র সিটি ইন্টেলিজেন্স এ্যানালাইসিস ডিভিশন কর্তৃক অভিযানটি পরিচালিত হয়।