যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেছেন, কোভিড সংক্রমণ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। চায়না ও ভারতে করোনা সংক্রমন আবার বাড়ছে। কোভিড পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে অর্থাৎ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মুসুল্লীসহ সকলকে বিশ^ইজতেমা অংশগ্রহণ করতে হবে, যাতে করোনা আবার ছড়িয়ে না যায়।

সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে অনুষ্ঠিতব্য বিশ^ ইজতেমা-২০২৩-এর সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে অনুষ্ঠিত সমন্বয়সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৯৬ সালে ও ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ^ইজতেমায় বিশুদ্ধ পানি, টিন’র ব্যবস্থা করা ছাড়াও পাকা টয়লেট ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। আগে মুসুল্লীরা চটের বেড়া দিয়ে নির্মাণ করা কাঁচা ও অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহার করতেন। এতে মুসুল্লীরা ডায়রিয়াসহ নানা পেটের পীড়ায় ভুগছেন। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৩১টি পাকা বহুতল বিশিষ্ট টয়লেট ভবন ও পাকা গোসলখানা তৈরি করে দেন। বিশ^ইজতেমাস্থলে বিশুদ্ধ পানির জন্য ১৩টি গভীর নলক’প স্থাপন করে দিয়েছেন। তবে সবচে বড় সমস্যা হলো টঙ্গীতে বিশ^ইজতেমা চলাকালে টঙ্গীর আশে পাশে গভীর নলক’পের পানি ইজতেমা মাঠে চলে আসতো। ওই কয়দিন টঙ্গীর লাখ লাখ মানুষ পানি সংকটে ভুগতেন, কষ্ট করতেন। মাননীয় কতো দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ। এ পানি সংকটের জন্য তিনি শুধু ইজতেমার মাঠের জন্য নয়, টঙ্গী এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে ২০টি গভীর নলক’প স্থাপন করে দিয়েছেন। এখানকার অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার এবং ইজতমো ময়দান তৈরি করতে মাটি/বালি ভরাট করে দিয়েছেন। এ ইজতেমাকে উপলক্ষ্য করে আমরা টঙ্গীবাসী অনেক উপকৃত হয়েছি। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি প্রস্তুতি কাজের অগ্রগতি নিয়ে উপস্থিত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা/প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন।

প্রধান অতিথি অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ডিএমপি, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরসহ গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে যায় যায় পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা নিতে হবে। সেনাবাহিনীর প্রতিনিধির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তুরাগনদীতে মুসুল্লী পারপারের জন্য সেনা বাহিনী যে ৫টি পল্টুন ব্রীজ করার প্রস্তাব দিয়েছে তা পরিবর্তে ইজতেমার মুরুব্বীদের চাহিদা অনুযায়ী ৮টি পল্টুন ব্রীজ নির্মাণ করে দেয়ার অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন সেনাবাহিনীর সে সক্ষমতা আছে। ইজতেমার দুই পর্বে ছয়দিন পাশের মহাসড়কে রিকশা এবং মোনাজাতের আগের দিন থেকে পরের দিন পর্যন্ত সকল বাস-ট্রাকসহ সাধারণ যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেন তিনি। এসময় তবে শাখা সড়কে বিকল্প রাস্তায় এসব যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা সকলে জানি ইজতেমার এ জায়গাটি আজকের সফল রাস্ট্র নায়ক দেশরতœ শেখ হাসিনা দিয়েছেন। কিন্তু ওয়েবসাইডে গেলে নাকি দেখা যায় খালেদা জিয়ার নাম। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বলেছেন। তিনি বিশ^ইজতেমায় আগত বিদেশী মুসুল্লীদের ভিসা সহজীকরণের জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেন। ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াও খিত্তায় খিত্তায় অনির্বাপক যন্ত্রপাতিসহ ফায়ারম্যান ডিউিটি পালন করবে।

বিশ^ ইজতেমার মুরুব্বী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের মুসুল্লীদের জন্য বিশ^ইজতেমায় যোগ দিতে বাংলাদেশে ভিসা পেতে না সমস্যা হচ্ছে। এটি সহজ ও অনএরাইভাল ভিসার ব্যবস্থা করতে হবে। টঙ্গী ব্রীজের পশি^মে দখলদার উচ্ছেদ, ঢাকা অংশে ইজতেমার মাঠে কাঁচা বাজার উচ্ছেদ, ক্যান্সার হাসপাতাল ও আইউবিএটি-এর মাঝ দিয়ে রাস্তার পূর্ব দিকের ব্যারিকেড সরাতে হবে।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে জেলার মুসুল্লীদের জন্য নির্ধারিত থাকা পার্কিংজোনে নিরাপত্তা ফোর্স দিতে হবে। টঙ্গী ও আশেপাশের আবাসিক হোটেলে নিবাসীদের জন্য ছবি জাতীয় পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে হবে। রুফটপ ও পেট্রোল ডিউিটির দূরবীন বাড়ানোর প্রস্তাব রাখেন তিনি।

শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, স্বাস্য সেবা নিশ্চিত করতে ঢাকা থেকে এ হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করবে। রোগী পরিবহনের জন্য সার্বক্ষণিক ১৪টি অ্যাম্বলেন্স মোতায়েন থাকবে।

গাজীপুর সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, তাদের পক্ষ থেকে ইজতেমাস্থলে, কন্ট্রোলরুম, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ যখন যা করা প্রয়োজন সবকিছু করে দেয়া হবে।

জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সিসি টিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার ও রুফটপ থেকে পুরো ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়াও স্পেশালাইডজ টিমসহ প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। অগ্নি নির্বাপনের জন্য প্রতি খিত্তায় এবার দুটি করে অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র রাখা হবে। তুরাগে নৌটহলও থাকবে। এ সময় তিনি দুই পর্বের ইজতেমার আয়োজকদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও ইজতেমা আয়োজনে কোন বিশৃঙ্খলা হবে না।

গাজীপুর জেলা প্রশাসন, সেনা ওর্ ্যাাব কর্মকর্তা, গোয়েন্দা সংস্থা, হাইওয়ে পুলিশ, গাজীপুর সিভিল সার্জন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, ডেসকো, তিতাস গ্যাস, ওয়াসা, বিআরটি, ফায়ার সার্ভিস, জনস্বাস্থ্য বিভাগসহ নানা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিগণ সভায় উপস্থিত থেকে তাদের মতামত এবং পরামর্শ উপস্থাপন করেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি’র) কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট আজমত উল্লাহ খাঁন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহমেদ, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন, প্যানেল মেয়র আবদুল আলীম ও তাবলীগ জামাতের দুপক্ষের যোবায়ের পন্থী প্রকৌশলী মেজবাহ উদ্দিন, মুফতি আমান উল্লাহ, মাহফুজ হান্নান, মোহাম্মদ সেলিম এবং সাদ পন্থীদের মধ্যে ছিলেন, ডঃ আবদুস সালাম, প্রকৌশলী মহিবুল্লাহ, মাওলানা আবদুল্লাহ মনসুর, ডঃ রেজাউল করিম ও টঙ্গী পূর্ব পশ্চিম থানা পুলিশের ওসি আশরাফুল ইসলাম ও শাহ আলম প্রমূখ।

উল্লেখ আগামী ১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি প্রথম পর্ব এবং মাঝখানে ৪ দিন বিরতি দিয়ে ২০, ২১ ও ২২ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।