শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক থেকে বাংলাদেশের জন্য খারাপ কোনো খবর গতকাল পর্যন্ত আসেনি। তবে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মানব পাচারকারীদের হাতে বন্দি ১১ বাংলাদেশির খোঁজ এখনও মেলেনি।
গতকাল বুধবার রাতে তুরস্কে বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভূমিকম্পের আগে আমরা জানতে পেরেছিলাম, সিরিয়া অংশে সীমান্তের কাছে মানব পাচারকারীদের হাতে ১২ ব্যক্তি বন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে ১১ জন বাংলাদেশি ও একজন ভারতীয়। তবে তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনও জানা যায়নি।

তিনি বলেন, ১১ বাংলাদেশির একজন মানব পাচারকারীদের হাত থেকে মুক্তির জন্য ফোনে দূতাবাসের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেন। মানব পাচারকারীরা তা টের পেয়ে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এরপর থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সিরিয়ার ওই অংশেই ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল বেশি।

তবে ভূমিকম্পে বহু বাংলাদেশি নাগরিকের হতাহতের আশঙ্কা করছে তুরস্কে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস। কারণ হিসেবে দূতাবাস জানায়, ইউরোপ প্রবেশে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চল ব্যবহার করে থাকেন বাংলাদেশিরা। ফলে এ অঞ্চলে বছরের বেশিরভাগ সময়ই কয়েকশ বাংলাদেশি ইউরোপে ঢোকার জন্য অবস্থান করেন। কোনো কোনো সময় এ সংখ্যা আরও বেশি হয়ে থাকে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন, সিরিয়া অংশে পূর্ণাঙ্গ উদ্ধার অভিযান চালানো হলে কোন দেশের কত নাগরিক হতাহত হয়েছে, তা বিস্তারিত জানা যাবে। এখানে অবস্থান করা বাংলাদেশিরা অনিবন্ধিত। এ পথ ব্যবহার করে যাওয়া বাংলাদেশিরা দেশে ফেরত পাঠানোর ভয়ে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। বেশিরভাগ বাংলাদেশি এখানে লুকিয়ে থাকেন কিংবা মানব পাচারকারীদের হাতে বন্দি থাকেন। তাঁদের বেশিরভাগের সঙ্গেই পাসপোর্ট থাকে না। তাঁদের বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা ও খোঁজ পাওয়া কষ্টসাধ্য।

সিরিয়ার যে অঞ্চলটিতে ভূমিকম্প আঘাত করেছে, সে জায়গা একই সঙ্গে সরকার ও বিদ্রোহী দলের দখলে রয়েছে। বিদ্রোহী দলগুলো মূলত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে মাদক চোরাচালান, মানব পাচার, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। ফলে এখানে উদ্ধার অভিযান চালানো নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দূতাবাস কর্মকর্তারা।

এদিকে তুরস্কের সীমান্তবর্তী অঞ্চল গাজিয়ান্তেপ বিশ্ববিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশিরা সেখান থেকে সরে যেতে চাইছেন। এ বিষয়ে মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শুরুতে আমাদের কাছে তথ্য ছিল সেখানে ১৮ জন রয়েছেন। পরে এ সংখ্যা বেড়ে ২৪ জনে দাঁড়ায়। তাঁদের মধ্যে ২১ জন গাজিয়ান্তেপ এলাকায় থাকতে চাচ্ছেন না। তাঁদের একটি বাসে করে আঙ্কারায় নিয়ে আসা হচ্ছে। আঙ্কারায় বাংলাদেশি কমিউনিটির মাধ্যমে তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া গোলাম সাঈদ রিংকু ও সেখানে থাকা আরও দুই বাংলাদেশি আঙ্কারায় আসতে চাচ্ছেন। তাঁদেরও সেখান থেকে নিয়ে আসা হবে।