প্রস্তাবিত মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা-২০২৩ বাতিলের দাবীতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (০৫ মার্চ) বেলা এগারোটা দিকে বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এর আয়োজনে উক্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
একটা স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্দনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মোটরসাইকেলের কালো আইন তৈরি করে যুব সমাজকে জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন “যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দীন চৌধুরী।

এই সময় বিআরটিএর বিভাগীয় পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর মাধ্যমে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর চেয়ারম্যান বরাবরে স্বারকলীপি প্রদান করা হয়। বিআরটিএর পক্ষে ম্বারকলীপি গ্রহন করেন বিআরটিএর চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেল অফিসের উপ-পরিচালক (ইঞ্জিঃ) তৌহিদুল হোসেন।

স্বারকলীপিতে বলা হয়, শহরে মোটর সাইকেল গতি ঘন্টায় ৩০ কিলোমিটারের বেশি অতিক্রম করতে পারবে না। এই সিদ্ধান্ত জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত হিসেবে সাধারণ মানুষ মনে করেন। একদিকে বিআরটিএ যাত্রী পরিবহনের জন্য মান সম্মত কোন যানবাহন শহর অঞ্চলে নিবন্ধন প্রদান করেনি। লক্কর ঝক্কর গণপরিবহন দিয়ে শহর অঞ্চলের জীবন যাত্রা চলছে। বিআরটিএ এই বিষয়ে কোন উদ্যোগও নিতে পারেনি। সব সময় মালিক শ্রমিক এর দোহাই দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। মোটরসাইকেল সাধারণ যাত্রীদের জনপ্রিয় বাহন হিসেবে ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যারা নীতিমালা প্রণয়নের দায়িত্বে রয়েছে তারা প্রত্যেকে সরকারী গাড়ীতে যাতায়াত করেন। কারো কাছে তেমন মাঠ পর্যায়ের বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়না। এমনকি কিসের উপর ভিক্তি করে এই গতি সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে সে বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। ৩০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ী চালানোর কারনে অন্যান্য দ্রুত গতির গাড়ী চাপায় যে কোন ধরণের দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে। এই সব দুর্ঘটনার দায়ভার কে নিবে সে বিষয়েও নীতিমালায় স্পষ্ট উল্লেখ নেই।

স্বারকলীপিতে আরো বলা হয়, আমাদের দেশের মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল করে, শুধু গণপরিবহন বা পণ্য পরিবহনের গাড়ী নহে। এখানে রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ী, নসিমন-করিমনও বীরদর্পে, দেদারসে চলাচল করে। সরকার থ্রি হুইলার বন্ধে নীতিমালা করলেও পুরাপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। পুলিশ নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে এইসব যানবাহনকে মহাসড়কে চলাচলের সুযোগ করে দিচ্ছে। এছাড়া বিআরটিএর ম্যাজিষ্ট্রেটগণের কার্যক্রম শুধুমাত্র বিআরটিএ অফিসের কাছাকাছি রাস্তায় পরিচালিত হয় কিন্তু মহাসড়কে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার চিত্র তেমন নজরে পড়ে না। সারাদেশে বিআরটিএর শুরু থেকে ৫০ লাখ ২৪ হাজার ৬৫৮ টি মোটরযানের নিবন্ধন প্রদান করছে, সেখানে শুধু মাত্র মোটরসাইকেল নিবন্ধন দিয়েছে ৪০ লাখ ৩৯ হাজার ৯৬৯ টি। তার মধ্যে ১২৬ সিসির নিচের মোটরসাইকেল আছে প্রায় ৩০ লাখের মতো। এইসব মোটরসাইকেল গ্রামীন জনপদের মানুষ মহাসড়কে স্বল্প দূরত্বে চলাচলের জন্য ব্যবহার করে থাকেন। মহাসড়কে যদি ১২৬ সিসির নিচের মোটর সাইকেল চলাচল করতে না পারে তাহলে এই ৩০ লাখ মোটরসাইকেলের বিষয়ে সরকার কি সিদ্ধান্ত দিবে? বিআরটিএ দুই জনের চলাচলের শর্তে মোটরসাইকেল নিবন্ধন দিয়ে ১ জন চলাচলের নীতিমালা করা কতটুকু যুক্তি সংগত। বিআরটিএ মোটরসাইকেল নিবন্ধনে প্রতিটি মালিকের কাছ থেকে ২ জনের জন্য রাজস্ব আদায় করেছে, এই নীতিমালা প্রণয়নের পরে কি সেই ৪০ লাখ মালিককে ১ জনের রাজস্বের টাকা ফেরত দেয়া হবে কিনা? টাকা ফেরত না দিলে সেইসব মালিকরা স্বাভাবিক ভাবে মোটরসাইকেল চালাতে না পারলে তারা যদি বিআরটিএর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা করে তাহলে ৪০ লাখ গ্রাহকের মামলা পরিচালনা খরচ সরকার কিভাবে বহন করবে সেটাও চিন্তার বিষয়।

সাম্প্রতিক সময়ে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং নীতিমালা প্রণয়ন করেছে বিআরটিএ। এই নীতিমালা প্রণয়নের পরে আমাদের দেশের তরুন উদ্যোত্তারা ব্যবসায়িক স্বার্থে মোটর সাইকেলে যাত্রী হিসেবে বহন হয়ে থাকে। এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে নিদিষ্ট গন্তর্বে পৌছে যায়। এতে বেশ সফলতা পেয়েছে তরুন ব্যবসায়ীরা। বাইক বিরোধী নীতিতে ৩০% চাকরিজীবি ও তরুন উদ্যোত্তাদের ক্ষতির দায়ভার নেবে কে? এছাড়াও দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতির সময়ে জীবনের গতি কমিয়ে দেয়া কি যুক্তিসংগত? অন্যদিকে লাখ লাখ বেকার যুবক রাইড শেয়ারিং করে জীবিকা অর্জন করছে। শহরে মোটর সাইকেলের গতি কমিয়ে দিয়ে এই ব্যক্তিরা অভাব অনটনে পরে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি কাজে লিপ্ত হবে, এমন কাজের দায় কে নিবে?

ঈদযাত্রা ও বিভিন্ন উৎসবে সারাদেশের লক্কর ঝক্কর বাস চলাচল করে, নছিমন-করিমন-ভটভটিতেও যাত্রী বহন করা হয়, সেইসব অনিবন্ধিত যানে সব চেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয়ে থাকে । এগুলো নিয়ন্ত্রনে উদ্যোগ না নিয়ে শুধু মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রনের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং জনস্বার্থ বিরোধী। দুর্ঘটনা পরিসংখ্যান যারা প্রদান করে সাম্প্রতিক তারা একটি প্রতিবেদনে বলেছে সারাদেশে মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪০ শতাংশ দায়ী মোটরসাইকেল। এইসব ভুয়া তথ্য উপাত্ত দিয়ে মোটর সাইকেলকে জনদুশমন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার চেষ্টা করছে তারা। যে ৪০ শতাংশ দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলকে দায়ী করা হয়েছে সেইসব দুর্ঘটনার কারন নির্ধারণ করা হয়নি। তদন্তেও প্রমাণিত হয়নি যে শুধু মোটরসাইকেলই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। ৪০ লাখের বেশি মোটরসাইকেল সড়কে চলাচল করে সেই রেশিও অনুযায়ী প্রতিবছর ২ থেকে আড়াই হাজার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তাহলে কিভাবে পরিসংখ্যানটি তৈরি করা হয়েছে সেটাও আমাদের জানা নেই।

আকতার হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক