ক্যারিশমেটিক বঙ্গবন্ধু আধুনিকতায়ও অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ বিশে^র শোষিত, নির্যাতিত মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস। এই ভাষণে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির কথা তিনি বলেছেন। ঐক্যের সূতায় গেঁথেছেন। একারণেই আজও মানুষ পোশাকে মুজিব কোট পরতে চায়। আমরা বঙ্গবন্ধুর মতো প্রবল ব্যক্তিত্বের মানুষ হতে চাই। সাহসী মানুষ হতে চাই। অকুতোভয়, বিপ্লবী মানুষ হওয়ার জন্য আমরা বারংবার বঙ্গবন্ধুর কাছে ফিরে যাই।’

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) গাজীপুরে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে সিনেট হলে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ: বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের সৃষ্টি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য ড. মশিউর রহমান।

আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন। সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার। আলোচনা সভাটি পরিচালনা করেন বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর মো. মনিরুজ্জামান শাহীন।

দেশের প্রথিতযশা সমাজবিজ্ঞানী ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘কৌমভিত্তিক মানুষের বসতির সময়ে স্বয়ং সম্পূর্ণ গ্রামীণ অর্থনীতি ছিল। এসময়ে অনেক বাড়তি উৎপাদন না থাকলেও প্রয়োজন মিটিয়ে কিছুটা ভালো থাকা, অন্যের হস্তক্ষেপ না থাকার স্বাচ্ছন্দের জীবন মানুষের ছিল। ব্রিটিশ বাণিজ্য শক্তি যখন এখানে আশা শুরু করলো। যখন ট্রান্সফরমেশনে বাড়তি উৎপাদন শুরু হলো। সেই বাড়তি উৎপাদনের সুযোগটি ব্রিটিশ নিয়েছিল। সেই জায়গায় স্বয়ং সম্পূর্ণ গ্রামীণ অর্থনীতিতে পরিবর্তন যেমন এসেছে, আবার আগ্রাসনও এসেছে। সে হিসেবে ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যবাদ একটি প্রবল আগ্রাসন। গান্ধীর জাতীয়তাবাদী নেতা হয়ে উঠার পেছনে সেই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো যদি একটি উপমা হয়, তাহলে বঙ্গবন্ধু এই উপমহাদেশে জাতীয়তাবাদী নেতার এক অনন্য শুধু উদাহরণ নয়- আধুনিক জাতিরাষ্ট্র প্রবর্তনের তিনি একজন মাইলফলক নেতা।’

উপাচার্য ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘আগামী দিনে জাতীয়তাবাদ প্রকৃত অর্থে যদি আরও দুর্বল হয়ে ওঠে। ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ যদি আরও প্রবল হয়, জাতীয়তাবাদী অনুপ্রেরণায় অনেক ক্ষেত্রে দুর্বলতা দেখা দেয় এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ অনেক বেশি বিকাশ ঘটে তাহলে কী বঙ্গবন্ধুর ক্যারিশমার জায়গা দুর্বল হয়ে উঠবে? সেই প্রশ্নের উত্তর যদি আমরা খুঁজি তাহলে যেটি পাই তা হচ্ছে- ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদের বিকাশ যত ঘটবে, বঙ্গবন্ধু ততবেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে। জাতীয়তাবাদের প্রতিস্থাপন যদি ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদের মধ্য দিয়ে হয়, তখনও বঙ্গবন্ধু সমকালীন হবেন। এটিই বঙ্গবন্ধুর ক্যারিশমার অনন্য দিক। আমাদের পথচলায় বঙ্গবন্ধু আমাদের সারাজীবনের সাথী। তিনি জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির শুধু মহানায়ক তা নয়, তিনি মুক্তির কথা বলেছেন। তাঁর সেই মুক্তির অমীয় বাণির কারণেই আমরা আজ লাখো শরণার্থীকে আশ্রয় দেই। আগামীর পথ চলায় বঙ্গবন্ধু থাকবেন সারাজীবন, সারাক্ষণ।’

প্রধান বক্তার বক্তব্যে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘৭ই মার্চ একদিনে তৈরি হয়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৪ বছর ধরে এই ক্ষণটি রচনা করেছেন। বাঙালির ২৪ বছরের যে বঞ্চনা, নির্যাতন, নিগৃহ- এসব থেকে মুক্তির পথনির্দেশনা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে। এই ভাষণে স্বাধীনতার সকল দিকনির্দেশনা ছিল। প্রয়োজনীয় সকল কনটেন্ট ছিল এই ভাষণে। ভাষণের মাধ্যমেই তিনি অনন্য সাধারণ উপহার আমাদের মাঝে রেখেন গেছেন।’

৭ই মার্চের ভাষণের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘একজন জাতীয়তাবাদী নেতা আন্দোলন সংগ্রামের ডাক দিলে তিনটি বিষয়কে তিনি সামনে রাখেন। প্রথম হচ্ছে- ওই জাতির একটি সোনালী অতীত ছিল সেটিকে তুলে ধরা। দ্বিতীয় হচ্ছে- বর্তমানে সেই সোনালী অতীত ধ্বংস হয়েছে। অনেক দুঃখ-দুর্দশা বিরাজমান, সেটিকে তুলে ধরা। তৃতীয় হচ্ছে- উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন আঁকা। এটি জনমানুষের সামনে তুলে ধরা। এই তিনটি কাজই বঙ্গবন্ধু সফলভাবে করতে পেরেছেন। যেকারণে তিনি সফল হয়েছেন। রচনা করেছেন মহাকাব্য।’