জমি দখল ও পুলিশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্নের অভিযোগে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহী ও তার স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে গাজীপুরের বাসন থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে জিএমপি’র বাসন থানার এসআই রোকন মিয়া বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। অপর মামলাটি করেন বাসন থানার দিঘীরচালা এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেন। এ মামলায় এ দম্পতিকে হুকুমের আসামী করে তাদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ করা হয়েছে। এ মামলায় আরো কয়েকজনকে আসামী করা হয়েছে। উভয় মামলা শুক্রবার দিবাগত রাতে করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি’র) কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জিএমপি’র কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, মাহিয়া মাহি তার ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে ‘ঘুষ’ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন মাহী ও তার স্বামী রাকিব সরকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মিথ্যা বলে মানুষের সহানুভূতি নেওয়ার চেষ্টা করেছেন মাহী ও তার স্বামী। পুলিশের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ করেছেন তিনি। তারা পুলিশকে বিতর্কিত করার মিশনে নেমেছেন। অথচ মাহী বা তার স্বামী জমিজমা সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে আমার কাছে আসেননি। আজ যাদের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেছেন, তাদেরও আমি চিনি না। পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে অপমান অপদস্ত ও হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা, বানোয়াট, আক্রমনাতœক, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর তথ্য প্রচার করে আইশৃঙ্খলা অবনতির ঘটানোর অপরাধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (আইসিটি) তাদের বিরুদ্ধে বাসন থানায় রাত ৮ টা ৫৫ মিনিটে একটি মামলা করেছে পুলিশ।

এদিকে, জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগে মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রাকিব সরকরকে হুকুমের আসামি করে আরও একটি মামলা একই রাতে করেন বাসন থানার দিঘীরচালা এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেন। এ মামলায় ২৭/২৮জনকে আসামী করা হয়েছে।

স্বামীর সঙ্গে ওমরাহ পালন করতে যাওয়া ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়িকা মাহিয়া মাহি সৌদি আরবের মক্কা শহর থেকে শুক্রবার ভোরে তার ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে স্থানীয় ইসমাইল হোসেন লাদেন ও মামুন সরকারের নেতৃত্বে তাদের মালিকানাধীন সনিরাজ কার প্যালেস শো রুমে হামলা করা হয়। হামলাকারীরা শো-রুমের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দরজা জানালার কাঁচ, চেয়ার, টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর এবং শো রুমের সাইনবোর্ড খুলে নেয়। এসময় তারা অফিস কক্ষ তছনছ করে ও টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে রকিব সরকারের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ওই পেজ থেকে তার স্বামী রাকিব সরকার পুলিশের বিরুদ্ধে প্রায় দেড়কোটি ঘুষের বিনিময়ে প্রতিপক্ষকে জমি দখল করে দেয়ার অভিযোগ করেন।

মাহীর ফেসবুক লাইভের পর বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, রকিব সরকার তার প্রায় সোয়া ১১ শতাংশ জমি দখল করে গাড়ির শো রুম করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তিনি জমি উদ্ধার ও তাদের নির্যাতন থেকে বাঁচানোর জন্য অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি মীমাংসার জন্য দফায় দফায় চেষ্টাও করা হয়। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে ওই শো রুমে নতুন কিছু গাড়ি উঠাতে থাকে রকিব সরকারের লোকজন।

ইসমাইল বলেন, খবর পেয়ে সেখানে আমিসহ কয়েকজন হাজির হই। এসময় দেশীয় অস্ত্রসহ রাকিব সরকারের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায় ও মারধর করে। তারা নিজেরাই নিজেদের শো রুম ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় আমিসহ কয়েকজন আহত হই। ওই জমি রাকিব সরকারের নয়।

তিনি আরও বলেন, জমি ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে রাকিব সরকার আমার কাছে এক কোটি টাকা দাবি করেছিলেন। যেখানে এক কোটি টাকা দিলে সমস্যা সমাধান হয়, সেখানে আমি কেন পুলিশকে দেড় কোটি টাকা ঘূষ দেব? পুলিশ আমার পক্ষে থাকলে আজ কেন আমি মার খেলাম? কেন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দিলাম? গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই রকিব তার স্ত্রী চিত্রনায়িকা মাহীকে ব্যবহার করছেন।

ওমরাহ হজ পালন শেষে শনিবার (১৮ মার্চ) মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রাকিব সরকারের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।