দাদনের কিস্তি ও ঘর ভাড়া পরিশোধে বিলম্ব হওয়ার কারণে বাবা, বোন ও স্ত্রীকে অপমানের প্রতিশোধ নিতে মাদ্রাসার ছাত্র এক শিশুকে অপহরণের পর গলা কেটে হত্যা করেছে বাড়ির ভাড়াটিয়া এক যুবক ও তার সহযোগীরা। গাজীপুর থেকে অপহৃত ওই শিশুর লাশ সিরাজগঞ্জের চৌহালি উপজেলার চৌদ্দরশি (খাস কাউলিয়া) এলাকায় যমুনা নদীর চরের শস্যক্ষেতের বালুর নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই যুবককে আটক করা হয়েছে। রবিবার বিকেল সাড়ে ৫ টায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-কমিশনার (অপরাধ) মাহবুব-উজ-জামান মহানগরীর গাছা থানা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য সাংবাদিকদের জানান।

নিহতের নাম তামজীদ হোসেন (৯)। সে গাজীপুর মহানগরের গাছা থানাধীন কুনিয়া পাছর এলাকার সোবহান সরকারের ছেলে এবং টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন সাতাইশ এলাকার মোকদ্দমাতুল হিফজ মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের আবাসিক ছাত্র ছিল।

গ্রেফতারকৃতের নাম সোহাগ হোসেন (২৫)। সে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার তেপাড়িয়া গ্রামের মাখনের ছেলে।

জিএমপি’র গাছা জোনের সহকারি কমিশনার মোঃ মাকসুদুর রহমান জানান, মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় গাজীপুর মহানগরের গাছা থানাধীন কুনিয়া পাছর এলাকার সোবহান সরকারের শিশু সন্তান তামজীদ বাড়িতে বেড়াতে আসে। গত শুক্রবার (১০ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে বাড়ীর সামনে থেকে তামজীদকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে যায় বাড়ির ভাড়াটিয়া সোহাগ। শিশু তামজীদ বাড়ি ফিরে না আসায় তার স্বজনেরা সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজখুজি করেও সন্ধান পায় নি। এব্যাপারে পরদিন শনিবার দুপুরে গাছা থানায় মামলা দায়ের করেন শিশুটির বাবা। এরপ্রেক্ষিতে পুলিশ সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে সোহাগকে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার তেপাড়িয়া গ্রামের তার নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যেও ভিত্তিতে পুলিশ সিরাজগঞ্জের চৌহালি উপজেলার চৌদ্দরশি (খাস কাউলিয়া) এলাকায় যমুনা নদীর চরের শস্যক্ষেতের বালুর নিচ থেকে ভিকটিম তামজিদের লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ এঘটনায় সোহাগকে তার টাঙ্গাইলের এক খালার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে শিশু তামজীদকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় তার বাবা-মা ও স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, গাজীপুরের সোবহান সরকারের বাড়িতে প্রায় ৭ বছর ধরে ভাড়া থাকে সোহাগের বোন ও বাবা-মা। গত দুই মাস আগে সোহাগ তার স্ত্রীকে নিয়ে ওই বাড়ির ভাড়া বাসায় উঠে। ওই বাড়িতে ভাড়া থেকে সোহাগ এলাকায় টাইলস্ মিস্ত্রীর কাজ করতো। সোবহান সরকারের স্ত্রী (ভিকটিমের মা) দাদন ব্যবসা করেন। ভাড়াটিয়া সোহাগ ভিকটিমের মা’র কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা দাদন (ঋণ) নেয় এবং ঘর ভাড়া বাকি ছিল। সোহাগের সহোদর বোন সুলতানাও ভিকটিমের মা’র কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকা দাদন নেয়। এছাড়াও কয়েকদিন আগে সোহাগের স্ত্রী সুমাইয়া বাড়ির মালিকের ঘর থেকে কিছু জামা-কাপড় চুরি করে ধরা পড়ে। এদিকে দাদনের বকেয়া কিস্তি ও বাড়ি ভাড়া পরিশোধ না করায় সোহাগের স্ত্রী, বোন ও বাবা-মাকে বকাঝকা করেন তামজীদের মা। এসময় তিনি সোহাগের স্ত্রীকে চোরের বউ বলে গালিগালাজ ও অপমান করেন। অপমানিত হয়ে তারা কান্নাকাটি করে সোহাগের কাছে অভিযোগ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয় সোহাগ। এর জেরে প্রতিশোধ নিতে শিশু তামজিদকে অপহরণ করে রাতে টাঙ্গাইলের নাগরপুর নিয়ে যায় সোহাগ। পরে ওই রাতেই নৌকাযোগে যমুনা নদী পার হয়ে সিরাজগঞ্জের চৌহালির ওই চরে নিয়ে গলাটিপে তামজিদকে হত্যা করে সে। এসময় তামজীদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারালো চাকু দিয়ে শিশুটির গলা কাটে ও শরীরে একাধিক আঘাত করে। পরে শিশুটির পড়নের জামা-কাপড় খুলে উলঙ্গ করে লাশ বালুর নীচে পুঁতে রেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে পুনঃরায় টাঙ্গাইলে এসে তার খালার বাসায় আশ্রয় নেয়। ঘটনারদিন তার বাবা-মা গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে ছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছে গ্রেফতারকৃত সোহাগ।

সংবাদ সম্মেলনে জিএমপি’র সহকারী কমিশনার (অপরাধ) হাফিজুল ইসলাম ও গাছা থানার ওসি ইব্রাহিম হোসেন উপস্থিত ছিলেন।