গাজীপুরে সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে এক স্কুল শিক্ষিকাকে খুন করেছে তার ভাই ও ভাতিজারা। ক্লুলেস এ হত্যাকান্ডের প্রায় চার বছর পর রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত নিহতের এক ভাতিজাকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

নিহতের নাম- মমতাজ বেগম (৫৫)। তিনি রাজধানীর তেজগাঁও (পূর্ব নাখালপাড়া) এলাকার আওরঙ্গজেব খান দুলুর স্ত্রী এবং নাখালপাড়া হলি মডেল কিন্ডার গার্ডেন ইংলিশ বেইজড বাংলা মিডিয়াম স্কুলের সিনিয়র শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

গ্রেফতারকৃতের নাম- উচ্ছাস সরকার (৩০)। সে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানাধীন বাঘিয়া এলাকার দুলাল সরকারের ছেলে এবং নিহত শিক্ষিকার ভাতিজা।

পিবিআই’র পুলিশ সুপার জানান, ২০১৯ সালের ১ মার্চ বিকেলে ভাই আব্দুর রশিদ সরকারের বাড়ি গাজীপুরের বাঘিয়া এলাকার উদ্দেশ্যে ঢাকার বাসা থেকে বের হন স্কুল শিক্ষিকা মমতাজ বেগম।

পরদিন তার লাশ স্থানীয় বাঘিয়া (ডিস পুকুর পাড়) জনৈক শফিউল্লাহর পরিত্যাক্ত বাড়ীর সীমানা প্রাচীরের ভিতরে পড়ে থাকতে দেখেন চাচাতো বোন আম্বিয়া (৪৫)। খবর পেয়ে কোনাবাড়ী থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে এবং ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ক্লুলেস এ ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামী করে কোনাবাড়ী থানায় মামলা করেন নিহতের বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস মৌ। মামলা দায়েরের ২৩ দিন পর পুলিশ হেডকোয়ার্টাসের নির্দেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পিবিআই গাজীপুরকে দেওয়া হয়। প্রায় চার বছর তদন্তের পর শিক্ষিকা মমতাজ বেগম হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নিহতের ভাতিজা উচ্ছাস সরকারকে সোমবার ভোররাতে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেন পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা। গ্রেফতারকৃত উচ্ছাস এ হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে গাজীপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। শিক্ষিকা মমতাজ বেগমের সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য এ খুনের ঘটনা ঘটেছে। এরপ্রেক্ষিতে ঘটনার প্রায় চার বছর পর স্কুল শিক্ষিকা মমতাজ বেগম হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে।

তিনি আরো জানান, ২০১৯ সালের ১ মার্চ সন্ধ্যায় স্কুল শিক্ষিকা মমতাজ বেগম তার সহোদর ভাই আব্দুর রশিদ সরকারের বাসায় আসেন। রাতেই তার সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসেন তার ভাই আব্দুর রশিদ ও পরিবারের সদস্যরা। আলোচনার একপর্যায়ে শিক্ষিকার ভাই আব্দুর রশিদ ভিকটিমকে টাকা না দিয়ে জোর পূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেয় এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। এসময় আব্দুর রশিদের ছেলে নিলয় সরকার উপস্থিত সকলের সামনে ভিকটিমকে গলা চেপে শ^াসরোধে হত্যা করে। পরে পার্শ্ববর্তী মন্ডল বাড়ীর লোকজনকে ফাঁসাতে শিক্ষিকা মমতাজ বেগমের লাশ ওই বাড়ীগামী রাস্তা সংলগ্ন পরিত্যাক্ত বাড়ীর সীমানা প্রাচীরের ভিতরে ফেলে আসে নিহতের ভাই আব্দুর রশিদ সরকার এবং ভাতিজা উচ্ছাস সরকার ও নিলয় সরকারসহ তাদের সহযোগীরা। আব্দুর রশিদ সরকার ও তার পরিবারের সদস্যরা পার্শ্ববর্তী মন্ডল বাড়ীর সাধু হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামী বলে জানিয়েছে গ্রেফতারকৃত উচ্ছাস সরকার।