দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস ধরে অসুস্থ থাকার পর গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে একটি আফ্রিকান স্ত্রী বাঘ বুধবার মারা গেছে। সাফারী পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. ইমরান আহমেদ বাঘটির মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করেছেন । গত বছরের জানুয়ারীতেও সাফারি পার্কে একটি বাঘের মৃত্যু হয়েছিল।

সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. ইমরান আহমেদ বলেন, বাঘটির আনুমানিক বয়স প্রায় ১৪বছর। বার্ধক্যজনিতসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে দেড় মাস ধরে অসুস্থ ছিল বাঘটি। বাঘটিকে পার্কের বন্যপ্রাণী চিকিৎসা কেন্দ্রের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেয়া হলেও কোন উন্নতি হয় নি। পার্কের মেডিকেল বোর্ড ও বিশেষজ্ঞ বন্যপ্রাণী চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন সে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত। লিভার, হার্ট, ফুসফুস কাজ করছিলনা। বাঘটির রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি সহ বিভিন্ন পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছিল। অবশেষে বুধবার সকালে বাঘটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরের কিছু সময় আগে বাঘটি মারা যায়। মৃত বাঘের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে শরীরের বিভিন্ন অংশের নমুনা সংগ্রহ করে বিভিন্ন পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত ও নমুনা সংগ্রহ শেষে পার্কের নির্দিষ্ট জায়গায় বাঘের দেহ মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। এঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে।

সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য মতে, পার্ক প্রতিষ্ঠালগ্নে ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে অন্যান্য প্রাণীর সাথে বেশ কয়েকটি বাঘ আনা হয়েছিল। এদের মধ্যে এই স্ত্রী বাঘটির গত ৬মাস আগে অসুস্থতার লক্ষণ দেখা যায়। গত ৬ ফেব্রুয়ারী থেকে এটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে বাঘটি খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়। এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারী থেকে বাঘটি খাবার গ্রহণ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে এর চিকিৎসা শুরু করা হয়। পরবর্তীতে ২৫ ফেব্রুয়ারী থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত বাঘটি অল্পঅল্প খাদ্য গ্রহণ শুরু করে। কিন্তু ৭ মার্চ থেকে আবারো খাবার বন্ধ করে দেয় বাঘটি। ফলে কোনো খাবার না খেয়ে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং বুধবার মারা যায়।

পার্ক সূত্র জানায়, রাজধানীর কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালের সাবেক প্রধান ভেটেরিনারি অফিসার এবিএম শহীদুল্লাহ সরেজমিন অসুস্থ বাঘটিকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় বাঘটির মৃত্যু হয়েছে।

সাফারী পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে সাফারি পার্কে মোট ৮টি বাঘ আছে। এগুলোর মধ্যে পাঁচটি স্ত্রী ও তিনটি পুরুষ। এর মধ্যে বিরল প্রজাতির ১টি সাদা রঙের বাঘও আছে।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে বাঘের মৃত্যুর বিষয়ে পার্ক কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।