পাকিস্তান তেহরিকই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বাড়িতে আজ শনিবার ফের অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। ইসলামাবাদে আদালতে হাজির হতে রওনা দিতেই লাহোরে তাঁর বাসভবন জামান পার্কে এ অভিযান শুরু হয়। তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় অতিরিক্ত জেলা ও সেশন জাজ আদালতে হাজির হন ইমরান খান।

বাধা মোবাবিলায় বড় ট্রাক্টরের সাহায্যে বাড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করে পুলিশ। পুলিশ তার বাড়িতে ঢুকতে আশেপাশের বাড়ির রাস্তাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ রয়েছে। সূত্র- এএফপি ও ডন

নির্বাচন থেকে হটাতে চাইছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা: ইমরান খান

এদিকে এ অভিযানের নিন্দা জানিয়েছেন টুইট করেছেন ইমরান খান। লেখেছেন, ‘পাঞ্জাব পুলিশ আমার বাড়ি জামান পার্কে হামলা চালিয়েছে। বাড়িতে স্ত্রী বুশরা বেগম একা আছেন। কোন আইনে তারা এমনটা করছে? এটি লন্ডন পরিকল্পনার অংশ। যেখানে একজনকে নিয়োগে সম্মত হতে পলাতক নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।’

মামলায় তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে রাষ্ট্রীয় উপহার কেনা ও বিক্রির তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তোশাখানা মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে টানা অনুপস্থিত থাকায় ২৮ ফেব্রুয়ারি ইমরান খানের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ইসলামাবাদের সেশন কোর্ট।

এরপর দেশটির পুলিশ পিটিআই চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারে তার বাড়িতে অভিযােন চালায়। এ খবরে দলটির নেতাকর্মী-সমর্থকরা সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ অবস্থায় সহিংসতার আশঙ্কায় শুক্রবার পর্যন্ত ইমরানকে গ্রেপ্তার না করার সিদ্ধান্ত দেন উচ্চ আদালত।

ক্রিকেট থেকে রাজনীতিতে আসা ইমরান খান ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। গত বছরের এপ্রিলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মুখে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। এতে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) ক্ষমতায় ফেরে। আর দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হন।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নানা সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন ইমরান। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অন্তত চারটি মামলা চলমান। গত ৩ নভেম্বর পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে দলীয় সমাবেশে তাঁর ওপর বন্দুক হামলা হয়। পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই হামলায় বেশ কয়েকজন পিটিআই নেতাও আহত হন; মারা যান এক কর্মী।

মঙ্গলবার ইমরান খান ইসলামাবাদের জুডিশিয়াল কমপ্লেক্স এলাকায় আদালতে হাজিরা দিয়ে সন্ত্রাসবাদ ও নিষিদ্ধ তহবিলসংশ্লিষ্ট দুটি মামলায় জামিন নেন। ওই সময়েই অপর এলাকায় দায়রা জজ আদালত তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ওই আদালত এফ-৮ কাচারি এলাকায়, যা জুডিশিয়াল কমপ্লেক্স থেকে গাড়িতে আধা ঘণ্টার পথ।

তোষাখানা মামলায় ইমরানের আইনজীবী ওই আদালতকে বলেন, ইমরান কয়েকটি মামলায় অপর আদালতগুলোতে হাজিরা দিতে গেছেন। এ কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারছেন না। কিন্তু বিচারক জাফর ইকবাল তা আমলে না নিয়ে পরোয়ানা জারি করেন।

এ পরিস্থিতিতে আজই পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান ইসলামাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গত ৯ মার্চ এ হাইকোর্ট তাঁকে আগাম জামিন দিয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি ও জামিনকে কেন্দ্র করে আদালত ও এর আশপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

গত আগস্টে তোষাখানার চারটি উপহার বিক্রির অভিযোগে ইমরান খানের বিরুদ্ধে মামলা করে পিএলএমএন নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। পাকিস্তানে তোষাখানা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীন বিভাগ। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা বিদেশ থেকে যেসব মূল্যবান উপহার পান, এটি সেগুলো সংরক্ষণ করে। তোষাখানার নিয়ম অনুযায়ী, কেউ উপহার পেলে তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জানাতে হবে।