স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) চট্টগ্রামের দপ্তরের কর্মচারী মো. নুরুচ্ছাফা। প্রায় ২৪ বছর ধরে তিনি মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত এই দপ্তরে। এই দুই যুগে আয়ত্তে নিয়েছেন টেন্ডার প্রক্রিয়ার যাবতীয় কাজ ও ঠিকাদারদের। তার ইশারা ছাড়া কেউ টেন্ডার পান না। আর টেন্ডার পেতে হলে ‘খুশি’ করতে হয় তাকে। ওপরের কর্তাদের ম্যানেজ করেই দীর্ঘদিন ধরে এমন টেন্ডার বাণিজ্য করে আসছেন তিনি। এভাবে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে ফ্ল্যাট ও জায়গা কিনে গড়েছেন অঢেল সম্পদ।

অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম এলজিইডি কার্যালয়ের ই-জিপি টেন্ডার ড্রপিং পদ্ধতি (ওটিএম, ওএসটিম, ডিপিএম, এলটিএম, আরএফকিউ) ও ম্যানুয়ালি সব টেন্ডার প্রক্রিয়া নুরুচ্ছাফা অফিসে বসেই নিয়ন্ত্রণ করেন। কোন ঠিকাদার কোন কাজ পাবে, কে পাবে না—সব তিনিই নির্ধারণ করেন।

এছাড়া তাকে একবার বান্দরবানে বদলি করা হলেও কিছুদিন না যেতেই আবারও চট্টগ্রামে চলে আসেন তিনি।

শুধু তাই নয়, দায়িত্ব মুদ্রাক্ষরিক-কাম-কম্পিউটার অপারেটরের হলেও অঘোষিতভাবে তিনি সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী পিএ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সুকৌশলে টেন্ডার না দিয়ে কোটেশনে (আরএফকিউ) দেখিয়ে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা।

জানা গেছে, মো. নুরুচ্ছাফার বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা এলাকার গড়ামারা গ্রামে। ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি চট্টগ্রাম এলজিইডি দপ্তরে মুদ্রাক্ষরিক-কাম-কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে যোগদান করেন।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ধান্ধাবাজি করে তার ও পরিবারের সদস্যদের নামে নগরীর খুলশীতে কিনেছেন একাধিক জমি, মেহেদীবাগ ও কাতালগঞ্জে রয়েছে ফ্ল্যাট। বাড়ি করেছেন ‘সাফা ভবন’ নামে। দুই ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করার জন্য পাঠিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া ও লন্ডনে।

একাধিক ঠিকাদার ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে রয়েছে নুরুচ্ছাফার শক্ত নেটওয়ার্ক। অবৈধ আয়ে গ্রামে গড়েছেন আলিশান বাড়ি। সীতাকুণ্ড ও রাউজানেও কিনেছেন নামে-বেনামে জমি এবং জায়গা।

এছাড়া আরও জানা গেছে, চট্টগ্রাম এলজিইডি অফিসের প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে কথাকাটা জের ধরে ওই কর্মকর্তাকে ২৪ ঘণ্টার মাথায় বদলি করা হয়। এর পেছনেও নুরুচ্ছাফার হাত ছিল।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. নুরুচ্ছাফা বলেন, ‘আপনি সরাসরি এসে কথা বলুন।’ এরপর তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আবারও কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

এলজিইডি চট্টগ্রাম দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান আলী বলেন, ‘তার (নুরুচ্ছাফা) বিষয়ে অনিয়মের খোঁজ-খবর হবে। তিনি বর্তমানে এখানে কর্মরত আছেন। তার অবৈধ সম্পদ যদি থাকে, তাহলে আপনি (প্রতিবেদক) খোঁজ নিতে পারেন।’