বিপুল পরিমাণ ভেজাল ও নকল শিশু খাদ্য ও পানীয় উদ্ধার ও দু’টি কারখানা আবিষ্কার করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)। পুলিশ গাজীপুর ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে কারখানার মালিক, ম্যানেজার, ডিপো মালিক, ল্যাব টেকনিশিয়ান, ডিলার, সরবরাহকারী ও কর্মচারীসহ ১০জনকে আটক এবং উৎপাদিত পণ্যসহ প্যাকিং, ড্রিংকস ও শিশুখাদ্য তৈরির উপকরণ ও মেশিনপত্র জব্দ করা হয়েছে। বুধবার ভোর পর্যন্ত গাজীপুরের গাছা থানাধীন কামারজুরি ও ঢাকার বসিলা, আমুলিয়া, বেরাইদ ও শনির আখড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মালামালসহ তাদের আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলো কারখানার মালিক মো. রফিকুল ইসলাম (৪০) ও মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে কুদ্দুস (৪৭), ডিপো মালিক ইসমাইল হোসেন (৩১), কারখানার ম্যানেজার মো. খাইরুল ইসলাম বুলবুল (৪০), ল্যাব টেকনিশিয়ান মো. হাফিজুর রহমান (৩২), কর্মচারি মো. খবির উদ্দিন (৪৫), মো. জীবন রহমান (৪০), মো. মোশারফ হোসেন (২৫), মো. রবিউল (৪৮), ও মো. মাসুদ রানা (২৫)।

জিএমপি’র উপ-কমিশনার ইব্রাহিম খান দুপুরে মহানগরীর ওয়ারলেস (টিএন্ডটি) গেইট সংলগ্ন বিআরটি মাঠে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, গত কয়েকদিন আগে মহানগরের আধেপাশা এলাকার ব্যবসায়ী ফিরোজ আলমের শিশু কণ্যা ও স্থানীয় সেলিনা মেমোরিয়াল একাডেমির ৭ম শ্রেণির ছাত্রী মিথিলা (১২) পাশের দোকান থেকে লিমন ফুডস এন্ড বেভারেজ কোম্পানীর তৈরি বোতলজাত করা গ্রীন স্টার ড্রিংকি লিচি ফ্লেভার জুস খায়। এ জুস খাওয়ার কয়েক মিনিট পরেই ওই ছাত্রী পেটের ব্যাথা, বমি ও পাতলা পায়খানা হতে শুরু করে। সন্তানের অবস্থা বেগতিক দেখে ওই ব্যবসায়ীকে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হয়। বিষয়টি জানিয়ে গাছা থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন ওই ছাত্রীর বাবা। এ কোম্পানীর ম্যাংগো জুস, অরেঞ্জ জুসসহ বিভিন্ন ধরণের শিশু খাদ্য খেয়ে অসুস্থ্য হওয়ার একাধিক অভিযোগ আসে পুলিশের কাছে। এরপ্রেক্ষিতে গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা শাখা ও গাছা থানা পুলিশ এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে একাধিক টিম বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে বসিলা এলাকায় রফিকুল ইসলামের এবং আমুলিয়া এলাকায় মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে কুদ্দুসের দু’টি ভেজাল ও নকল শিশু খাদ্য ও পানীয় তৈরীর কারখানার সন্ধান পান অভিযানকারীরা। পরে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে গাজীপুরের কামারজুড়ি, আমুনিয়াসহ ঢাকার বসিলা, বেরাইদ ও শনির আখড়ায় অভিযান চালিয়ে ভেজাল ও নকল শিশু খাদ্য ও পানীয় এবং প্যাকিং, ড্রিংকস ও শিশুখাদ্য তৈরি উপকরণ ও মেশিনারীজ সহ কারখানা মালিক, ল্যাব টেকনোলজিস্ট, ম্যানেজার ও কর্মচারীসহ ১০ জনকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে নিয়মিত মামলা রুজু করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

তিনি জানান, অভিযানকালে ৫৭ হাজার ৩২০লিটার ম্যাংগো জুস, ৪৫হাজার ২৫৬লিটার অরেঞ্জ ও লিচি ড্রিংক, ৩৯৫বয়াম ক্যান্ডি, ২হাজার ৫০০ পিস আচার ক্যান্ডি, আইস ললি, বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজিং লেভেল, খালি বয়াম, জুস কন্টেইনার, মেশিনারিজ, কেমিকেল, প্রিজারভেটিভ, কৃত্রিম রং, ফ্লেভার ও খালি পলিপ্যাক জব্দ করা হয়েছে। এ কোম্পানী থেকে গ্রীন স্টার সয়াবিন তেল, গ্রীন স্টার ডেইরী মিল্ক, হজম ক্যান্ডি, পিনাট ক্যান্ডি, কফিকো ক্যান্ডি, ম্যাংগো ড্রিংকস, সরিষার তেল, চিনি গুড়া সুগন্ধি চাল, স্টিক, নুডুলস, লাচ্ছা সেমাই, চকোচকো, কুকিজ বিস্কুট, বাটার স্টোস্টসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি ও বাজার জাত করা হচ্ছে। এসব পণ্যের গায়ে বিএসটিআই’র সিল ব্যবহার করা হলেও বিএসটিআই’র অনুমোদন নেই।