বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ৭২ ও ৭৫ এর অপশাসনের পরে যখন বাকশাল সৃষ্টি হয়েছিল তখন বাংলাদেশে সমস্ত সংবাদ পত্র বন্ধ করে মাত্র ৪টি সংবাদ পত্র রাখা হয়েছিল। গত ১৫ বছরের মধ্যে যে বাকশাল সৃষ্টি করা হয়েছে সেই বাকশালের মাধ্যমে একটি আইন করা হয়েছে যার নাম ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’। সেই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবাদ পত্র এবং সাংবাদিকদের টুটি চেপে ধরা হয়েছে। আজকে কথা বলার অধিকার বাংলাদেশে নাই। সরকারের সমালোচনা করলে সরকার বলে রাষ্ট্রের সমালোচনা হয়েছে, সে রাষ্ট্রদ্রোহী। রাষ্ট্রের সমালোচনা করা বিরোধী দলের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। এটাই হচ্ছে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা পলিটিক্যাল সাইন্সের কথা।

তিনি আরো বলেন, সরকার যখন ভুল করে, দুর্ণীতি করে তখন সরকারের সমালোচনা করি। সংবাদ পত্র এবং সাংবাদিকের অধিকার কেড়ে নেয় তখন আমি তার প্রতিবাদ করি। এটার উদ্দেশ্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো কথা নই। এটা সরকার ভুল করছে। আমরা আসলে সমালোচনার মাধ্যমে সরকারের উপকার করছি। আমরা সরকারকে সংশোধন হবার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি। এ সরকার যদি জনগনের সরকার হতো, তাহলে কয়েকদিন আগে প্রথম আলোর সাংবাদিক যে কথা বলেছে সে জন্য তাকে বন্দি করে রাতে ৩ টার সময় বাড়ী থেকে উঠিয়ে না নিয়ে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে পুরষ্কার দিয়ে বলতো তুমি এমন এটি ভালো তথ্য দিয়ে আমাদের উপকার করেছো আমরা চেষ্টা করবো এদশে যাতে কোনো জিনিস পত্রের দাম না বাড়ে, যাতে কমে এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে। সেই সাংবাদিককে পুরষ্কার দেয়া উচিত ছিল সরকারের। সেটা না করে সরকার তাকে ধরে নিয়ে গ্রেফতার করেছে। আজ পর্যন্ত সে মুক্তি পায় নাই।

তিনি বলেন, তারা মানুষকে কথা বলতে, গণতন্ত্রের অধিকার, ভোটের অধিকার, স্বাধীনতা দেয় না। এ কারণে তো আমরা বাংলাদেশকে স্বাধীন করি নাই। সরকার দাবী করে তারা দেশের উন্নয়ন করেছে। সরকার যদি উন্নয়ন করে থাকে তাহলে কোটি কোটি ভোটার খুশি হয়ে সরকারকে ভোট দিবে। সরকার তাহলে ভোট সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ করতে ভয় কেন পায় সরকারের প্রতি সেই প্রশ্ন আমার। গণতন্ত্র ব্যাতিরেকে কখনো মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় না।

বাংলাদেশে স্বাধীনতার পরে তৎকালীন জাতীয় সংসদে মাত্র ১১ মিনিটের ব্যবধানে গণতন্ত্রকে হত্যা করে এদেশে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেই বাকশালকে দূর করে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষকে পুনরায় গণতন্ত্র উপহার দিয়েছিলেন। যে গণতন্ত্রের জন্য তিনি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষনা দিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে জয়লাভ করেছিলেন এবং শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বীর উত্তম উপাধী পেয়েছেন সেই জিয়াউর রহমান। আজকে বাংলাদেশ থেকে বর্তমান আওয়ামীলীগের সরকার যেভাবে নতুন করে গণতন্ত্র হরণ করে যেভাবে অলিখিত বাকশাল কায়েম করা হয়েছে আসুন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করে আমরা পুনরায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দিক নির্দেশনায় এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কর্মসূচী অনূসরণ করে আমরা এদশে পুনরায় বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করি। বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা দেখেছি অলিখিত বাকশাল। এদেশে গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার, ভালো কাজ নাই। এদেশে আছে দুর্ণীতি, জুলুম, অত্যাচার, মামলা, হামলা। আজকে বাংলাদেশের মানুষের এই চরিত্রকে পরিবর্তন করে আজকে আমরা যে কারণে স্বাধীনতা যুদ্ধে গিয়েছিলাম, লক্ষ লক্ষ মানুষ যুদ্ধ ক্ষেত্রে তাদের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল সেই উদ্দেশ্যেকে পুনরায় সফল করতে হলে এদেশে গণতন্ত্রকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমাদের আজকের যে সংগ্রাম সে সংগ্রাম হচ্ছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম। পাশাপাশি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে তৃতীয় উদ্দেশ্যে ছিল সেটা ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আজকের বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম। দেশে ধনী সৃষ্টি করলে হবে না। দেশে ধনী দরিদ্রর ব্যবধান পাললে হবে না। এদশে যারা খেটে খাওয়া মানুষ তার একটি বিরাট অংশ গাজীপুরে বসবাস করে। বর্তমানে গাজীপুর শুধু বাংলাদেশের একটি প্রধান শিল্পাঞ্চল নয়, গাজীপুর বিশে^র জন্য একটি প্রধান লিল্পাঞ্চল। যেমন আপনারা গাজীপুরে যে কাপড় তৈরি করেন সে কাপড় সারা বিশে^ ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশে^র মধ্যে বাংলাদেশকে সর্ব বৃহৎ গার্মেন্টস রপ্তানী করে প্রথম বা দ্বিতীয় অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সে কারণে আমি বলছি আপনাদের গাজীপুর লিল্পাঞ্চল সারা বিশে^ সমাদৃত এবং বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। সময়ের ধারাবাহিকতায় আপনারা গাজীপুরকে বিশে^ স্থান করে নিয়েছেন। আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই। গাজীুপরের সেই গৌরব আপনাদের ধরে রাখতে হবে। শুধু ধনী লোকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে হবে না। এখানে মিল মালিকদের হাজার হাজার কোটি টাকা হলে অথবা সেটাকে দুবাই, আমেরিকা, কানাডার বেগম পাড়ায় পাচার করে দিলে দেশের উন্নয়ন হবে না। এখানে আপনাদের গাজীপুরে যে লক্ষ লক্ষ নারী শ্রমিক, তথা পুরুষ শ্রমিক রয়েছে, যারা নিজের মাথা ও গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে কাপড় উৎপাদন করেন গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হবে সে কথা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তিনি আশা করে এই গার্মেন্টস শিল্পের বাংলাদেশে সূচনা করেছিল। এই ইতিহাস আজকে নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার আমরা তাদেরকে ফিরিয়ে দিব।

গণতন্ত্র পূণরুদ্ধার, ১০ দফা বাস্তবায়ন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানে সুস্বাস্থ্য কামনায় ইফতারপূর্ব আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

শুক্রবার (৩১ মার্চ) বিকেলে মহানগরের গাজীপুর চৌরাস্তা সাগর সৈকত কনভেনশন সেন্টার্রে গাজীপুর জেলা বিএনপি’র আয়োজনে আলোচনাসভা, ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

গাজীপুর জেলা বিএনপি’র সভাাপতি একেএম ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নানের সঞ্চালনায় আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তব্য বিএনপি কেন্দ্রী নির্বাহী কমিটির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রফেসর রফিকুল ইসলাম, কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল, মজিবুর রহমান, ডা. মাজহারুল ইসলাম, ওমর ফারুক শামীম, গাজীপুর জেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাাপতি ডা. সফিকুল ইসলাম আকন্দ, হুমায়ুন কবির মাষ্টার, ভিপি হেলাল উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা, শ্রীপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি শাহজাহান ফকির, সাধারণ সম্পাদক আক্তারুল আলম মাস্টার, শ্রীপুর পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বেপারী, গাজীপুর জেলা মহিলা দলের সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক হাসিবুর রহমান খান, ছাত্র দলের আহবায়ক আতাউর রহমান মোল্লা প্রমুখ।