সাবেক পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গোপনে তাকে অর্থ দেওয়ার অভিযোগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযুক্ত হয়েছেন।

ড্যানিয়েলসের দাবি, ট্রাম্পের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক ছিল এবং ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ওই বিষয়ে মুখ না খুলতে তাকে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার দিয়েছিলেন ট্রাম্পের আইনজীবী।

পরবর্তীকালে বেশ কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাম্পের সেই আইনজীবী মাইকেল কোহেনের কারাদণ্ড হয়। তবে শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন ট্রাম্প।

মূলত পর্নো তারকার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ হওয়ার ঘটনাটি অনেক আগের বলে দাবি করা হলেও সর্বমহলে বিষয়টি চাউর হয় ২০১৮ সালে। ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে বিভিন্নভাবে চাপ, হুমকি ও নির্বাচনের আগমুহূর্তে উৎকচ প্রদানের ঘটনাবহুল তথ্য উঠে এসেছে।

প্রশ্ন হলো কে এই নারী, যার জন্য কঠিন সাজার মুখে পড়তে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন প্রেসিডেন্ট?

নীলছবির অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত স্টর্মি ড্যানিয়েলসের আসল নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড। ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। রাজ্যের ব্যাটন রুজে একটি গরিব এলাকায় বড় হন তিনি।

ছোটবেলায় ঘোড়ায় চড়তে ও লেখালেখি করতে পছন্দ করতেন স্টেফানি। চাইতেন বড় হয়ে সাংবাদিক হবেন।

কিন্তু সেই স্বপ্ন থেকে বহু দূরে সরে গিয়ে ২০০৪ সালে পর্নো ইন্ডাস্ট্রিতে জড়িয়ে পড়েন স্টেফানি। সেখানে পরিচিতি পান স্টর্মি ড্যানিয়েলস নামে।

তবে আত্মজীবনীতে স্টর্মি জানিয়েছেন, এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার আগে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই প্রথম স্ট্রিপিংয়ের (নগ্ন হওয়া) অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার। পরে তিনি অন্যান্য কাজ শুরু করেন। পর্নো ছবির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি মূলধারার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। জিতেছেন অসংখ্য পুরস্কার।

২০১০ সালে তিনি লুইজিয়ানার রিপাবলিকান সিনেট মনোনয়নের জন্য প্রতিযোগিতা করে রাজনীতিতেও নাম লেখিয়েছিলেন। ২০১১ সালে নিজের আত্মজীবনী ‘ফুল ডিসক্লোজার’ লেখেন তিনি। এটি নিয়েই মার্কিন সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘ইন টাচ’-এ সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি প্রথমবার ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকার কথা প্রকাশ করেন।

জানা গেছে, ড্যানিয়েলসের আসল নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড। ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়টি তিনি প্রথম প্রকাশ করেন ২০১১ সালে। সেই সময় নিজের আত্মজীবনী ‘ফুল ডিসক্লোজার’ নিয়ে সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘ইন টাচ’-এর সঙ্গে আলাপে বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলেন।

ড্যানিয়েলস জানান, ২০০৬ সালে জুলাইয়ে একটি গলফ টুর্নামেন্টে ট্রাম্পের সঙ্গে তার দেখা হয়। ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাডার রিসোর্ট এলাকার লেক তাহোর হোটেল কক্ষে তারা যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন। তখন ট্রাম্পের এক আইনজীবী সেই অভিযোগ বেশ জোরেশোরেই অস্বীকার করেছিলেন।

নিপীড়নের বিষয়টি কাউকে না জানাতে ট্রাম্প তাকে বলেছিলেন কিনা, সেই প্রশ্নের জবাবে এই পর্নো তারকা বলেন, বিষয়টি নিয়ে তখন তাকে (ট্রাম্প) চিন্তিত মনে হয়নি। তাকে একরকম উদ্ধতই দেখাচ্ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি ওই ঘটনা সত্যি হয়, তাহলে সবকিছু ঘটে ট্রাম্পের ছোট ছেলে ব্যারন ট্রাম্পের জন্মের চার মাস পর।

স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে ট্রাম্পের যৌন সম্পর্কের ঘটনাটি তখন ছাপতে পারেনি ইন টাচ ম্যাগাজিন। সিবিএস নিউজের ‘সিক্সটি মিনিট প্রোগ্রাম’ এর বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ড্যানিয়েলসের ওই সাক্ষাতের পর ইন টাচ ম্যাগাজিনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন।

অবশেষে ২০১৮ সালে ট্রাম্প ও স্টর্মি ড্যানিয়েলসের যৌন সম্পর্কের বিষয়টি ছাপে ইন টাচ ম্যাগাজিন।

এর কয়েক সপ্তাহ পর ‘সিক্সটি মিনিট’ অনুষ্ঠানে ড্যানিয়েলস জানান, ২০১১ সালে ইন টাচ ম্যাগাজিনকে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হওয়ার পর পরই তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

ড্যানিয়েলস বলেন, লাস ভেগাসে এক ব্যক্তি তার কাছে আসেন। এর পর তার শিশু মেয়েকে জড়িয়ে হুমকি দিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, খুব সুন্দর ছোট্ট মেয়ে। যদি তার মায়ের কিছু হয়ে যায়, তবে সেটি বেশ বিব্রতকর হতে পারে।

ড্যানিয়েলস জানান, পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক মাস আগে মাইকেল কোহেনের কাছ থেকে তিনি এক লাখ ৩০ হাজার ডলার পান এই ঘটনা গোপন রাখতে। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই সেই সময় কিছু না বলে ওই অর্থ গ্রহণ করেন বলে দাবি করেন তিনি।