নাটোরে শনিবার দুপুরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবীতে জেলা বিএনপি’র অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে সরকারদলীয় কর্মীরা।

অবস্থান ধর্মঘট চলাকালে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বক্তব্য দেয়ার সময় এ হামলা চালানো হয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও মারপিটের ঘটনা ঘটে।

ঘটনার সময় মারপিট ও ইটের আঘাতে কাফুরিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ, যুবদল নেতা রনি ব্যাপারী গুরুতর আহত হন। এ ছাড়াও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চুসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

আহতদের মধ্যে শরিফুল ইসলাম শরিফ ও রনি ব্যাপারীকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব ও নাটোর শহর যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সায়েম হোসেন উজ্জল আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়। রুহুল আমিন বিপ্লব ও সায়েম হোসেন উজ্জল নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের পর দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি। বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী নাটোর উপশহর মাঠে মঞ্চ তৈরির সময়ই শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা করে ভাংচুর শেষে অগ্নিসংযোগ করে। শান্তি রক্ষার জন্য তারা উপশহর মাঠ ছেড়ে দিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে অবস্থান ধর্মঘট করেন।

শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে তাদের অবস্থান ধর্মঘটে বক্তব্য রাখছিলেন প্রধান অতিথি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় কার্যালয় থেকে একটি বড় মিছিলসহ বিএনপি অফিসের দিকে আসতে থাকে। নাটোর বিদ্যুৎ অফিসের সামনে পুলিশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাধা দিলে তারা পুলিশী ব্যারিকেড ভেঙে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে আক্রমণ করে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল ছোড়া ও মারপিটের ঘটনা ঘটে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ, জাতীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাবেক এমপি অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী শাহ আলম, সদস্য ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন, জেলা যুবদল সভাপতি এ হাই তালুকদার ডালিম ও স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ।

ঘটনার সময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু নিজের লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে গুলি করেছেন বলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করলেও তিনি তা অস্বীকার করেছেন। শহিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজের অবস্থান ও ক্ষমতা জানান দিতে বিএনপির ওপর একের পর এক হামলা করছেন।

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, তাদের পূর্বনির্ধারিত নাটোর উপশহর মাঠের শান্তি সমাবেশ করার জন্য তারা মিছিলসহ যাওয়ার সময় নাটোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশী বাধার কারণে সেখানেই তারা শান্তি সমাবেশ করছিলেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা এসময় শান্তি সমাবেশে ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা করে। জেলা বিএনপির আহবায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু ও সদস্য ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন এ সময় অস্ত্র দিয়ে গুলি করে।

ঘটনার পর থেকে নাটোর সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলি, ডিবির ওসি আবু সাদাত ও নাটোর থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ দাবি করেন, বিএনপি’র সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে। তবে পুলিশ গুলির কথা স্বীকার করেনি।

এদিকে, পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ার পর বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোরের বাসা ছেড়ে চলে যান। এ সময় তিনি এসব ঘটনার জন্য সরাসরি সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের দায়ী করেছেন।

নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ টি এম মাইনুল ইসলাম বলেন, শহরের আলাইপুর এলাকায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দু’দলের পক্ষ থেকে সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছিল। সমাবেশে চলাকালে দু’পক্ষই ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

গুলি ছোড়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লোকমুখে শুনেছি’।