মুমিনের জন্য ভালোবাসার মূল কেন্দ্র প্রাণাধিক মহান প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর বাকি দুনিয়ার যতো প্রেমময় মানুষ আছে, যত রকমের ভালোলাগার জিনিস আছে— সবকিছুর অবস্থান দ্বিতীয়তে। এই থেকে বোঝা যায় প্রিয় নবিকে ভালোবাসা আমাদের প্রত্যেকের জন্য ওয়াজিব। দুনিয়াতে ভালোবাসার যতো কিছু আছে তার সবই তাঁর কারণে প্রেমময়।

আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য তাঁর ভালোবাসা লাভে প্রিয় নবির প্রতি গভীর প্রেম ও অনুসরণকে পূর্বশর্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- ‘হে রাসূল! আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।’ (সূরা ইমরান : আয়াত ৩১)

শুধু তাই নয়, আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রতি এ মর্মে নির্দেশনা জারি করেছেন যে, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করাকে তাঁর অনুসরণ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল, সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করল; আর যে মুখ ফিরিয়ে নিল আমি তাদের জন্য আপনাকে প্রহরীরূপে প্রেরণ করিনি।’ (সূরা নিসা : আয়াত ৮০)

মুমিনের সবচেয়ে বড় দৌলত ঈমান। এই মহা দৌলতের স্বাদ যার নসীব হয়, সমস্ত দুঃখ কষ্ট তার কাছে তুচ্ছ মনে হয়। মহব্বতের কারণে সকল তিক্ত মিষ্টে পরিণত হয়। আর এই স্বাদ সে-ই পায়, যার নিকট আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসা সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে থাকে। হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, মহান প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি গুণের অধিকারী ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে। তন্মধ্যে প্রথম হলো, যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সবচেয়ে প্রিয় হবে। (সহীহ মুসলিম : ৬৭)।

মুমিনের জীবনে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি মহব্বতের গুরুত্ব অপরিসীম। মহব্বতে রাসূল তো ঈমানের রূহ, মুমিনের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। এই ইশ্ক ও মহব্বত ছাড়া না ঈমানের পূর্ণতা আসে, আর না তার স্বাদ অনুভূত হয়। আর নিছক ভালোবাসাই যথেষ্ট নয়, বরং পার্থিব সমস্ত কিছুর উপর এ ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটতে হবে। হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষ থেকে অধিক প্রিয় হব। (সহীহ বুখারী : ১৫)।

এই রহমতের নবির প্রতি উম্মতের সবচেয়ে বড় হক হলো তাকে মন ও মনন দিয়ে ভালোবাসা। তাঁর প্রতি ভালোবাসা যেন আর সব ভালোবাসার ঊর্ধ্বে হয়। এমনকি জান ও প্রাণের চেয়ে যেন তিনি প্রিয় হন। পবিত্র কুরআনে তাই আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, নবীর ওপর মুমিনদের জানের চেয়ে বেশি হক আছে। (সূরা আহজাব : আয়াত ৬) অর্থাৎ যেই ব্যক্তি নিজের জান-মাল ও প্রবৃত্তির ওপর তার প্রতি ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিতে না পারবে, বোঝা যাবে তার ঈমানে ঘাটতি আছে।

প্রাণাধিক মহান প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সম্পর্ক রাখেন এমন মানুষদের ভালোবাসাও তাকে ভালোবাসার আলামত। সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বাইত, বিশেষ করে চার খলিফা, হজরত হাসান ও হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম-এর প্রতি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রাখাও ঈমানি দায়িত্ব। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই সাহাবিদের প্রতি ভালোবাসা রাখা ঈমানের আলামত ও শত্রুতা বা ঘৃণা রাখাকে মোনাফেকি বলেছেন। হজরত হাসান ও হুসাইন (রা.) সম্পর্কে তিনি বলেন, ইয়া আল্লাহ, আমার এই দুইজনের প্রতি ভালোবাসা আছে, আপনিও তাদেরকে ভালোবাসুন।

মোদ্দাকথা, প্রাণাধিক মহান প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানের চাইতে বেশি ভালোবাসা ঈমান। এই ভালোবাসা হৃদয়ের গহীন থেকে উৎসারিত, কেবল লোকদেখানো ভালোবাসা নয়। যারা প্রিয় নবিকে ভালোবাসে, আল্লাহ তাদের সম্পর্কে কোরআনে ঘোষণা দেন— ‘তারা আল্লাহর দল, মনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহর দলের লোকেরাই সফল।’ (সূরা মুজাদালাহ : আয়াত ২২)

আমরা যদি প্রকৃতপক্ষেই ঈমানদার হতে চাই, ইহকাল ও পরকালে কামিয়াব হতে চাই, তাহলে আমাদের উচিৎ মহান প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানা, এবং সব ভালোবাসার ঊর্ধ্বে তাঁর ভালোবাসা প্রাধান্য দেওয়া— হাদিসে পাকে খোদ প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে নির্দেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি আমল করার তাওফিক দান করুন এবং আখিরাতে মহান প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গ দান করুন এবং কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা যথাযথভাবে আদায় করার মাধ্যমে নবি প্রেমের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মোহাম্মদ রেজাউল মোস্তফা ইব্রাহিম
লেখক