বরিশাল সিটি কর্পারেশনের আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর কর্মীদের কোপানোর ঘটনায় মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্নাসহ ১০ জনকে আটক করেছে কাউনিয়া থানা পুলিশ।

রোববার (১৪ মে) রাত পৌনে ১ টার দিকে তাদের আটক করা হয়। আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেট্রোপলিটনের কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান মুকুল।

এ ঘটনায় মান্নাসহ নামধারী ২১ জনকে আসামী করে কাউনিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন আহত মনা আহম্মেদ। আটককৃতরা হলেন, বরিশাল নগরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্না ও তার ভাই নাদিম, কাশিপুর এলাকার পারভেজ হাওলাদার, বঙ্গবন্ধু কলোনি এলাকার শান্ত ইসলাম, কাউনিয়া এলাকার মেহেদী হাসান, মিজানুর রহমান শাওন, মামুন হাওলাদার, রাসেদ হাওলাদার, আল আমিন হাওলাদার ও মো. নান্টু সন্যামত।

আটককৃত অভিযানিক দলের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইদুল হক জানান, বরিশাল নগরের বিসিক এলাকা থেকে ৮ জন এবং হাসপাতাল রোডের একটি বাড়ির পিছনের বাগান থেকে মান্নাসহ দুই জনকে আটক করা হয়েছে। এরআগে রাত ১০ টার দিকে নগরীর কাউনিয়া শশ্মান এলাকায় অবস্থানকারী আসন্ন সিটি নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর (খোকন সেরনিয়াবাত) সমর্থক- মনা আহম্মেদ, আব্দুল হালিম, মো. জাহিদ ও সুজনকে কুপিয়ে জখম করে রইজ আহমেদ মান্না ও তার সহযোগীরা। ঘটনার পর এদের মধ্যে তিনজকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হামলায় আহত মনা আহম্মেদ জানান, কাউনিয়া শ্মশান ঘাটের ওই এলাকায় আমরা ৮-১০ জন আ. লীগের মনোনীত প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত ভাইয়ের নির্বাচনী ওয়ার্ক করছিলাম। তখন আকস্মিক এক থেকে দেড়শত যুবক এসে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলার সময় সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী রইজ আহম্মেদ মান্না আমার কলার ধরে পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে গালিগালাজ শুরু করে। এক পর্যায় তার ড্রাইভারসহ সহযোগীরা দা দিয়ে কোপ দেওয়ার পাশাপাশি আমাকে রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। আমার সাথের লোকজনকেও মারধর করে তারা। হামলার শিকার ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সেক্রেটারি আব্দুল হালিম বলেন, হামলাকারীদের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আমরা ঘটনাস্থল থেকে সার্কিট হাউজের সামনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে যাবো বলে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এসময় হঠাৎ দেড়-দুইশত পোলাপান এসে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। খোকন ভাইয়ের নির্বাচনে কাজ করার জন্যই এ মারধর করা হয়েছে বলে দাবি তার।

আহত জাহিদ বলেন, আমরা খোকন ভাইয়ের লোক বিধায় শুধু শুধু মেরেছে। আমাদের মারধরের পাশাপাশি মনা আহমেদকে তো পিস্তল ঠেকিয়েছে। এছাড়াও রড, লাঠি ও দা দিয়ে হামলা চালিয়েছে। মনার মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতও রয়েছে।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আটকের আগে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্না বলেন, পুরোটাই মিথ্যা অভিযোগ। আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ৫ দিন ধরে আমি সিসি ক্যামেরার আওতায় আছি। যারা বলে আমি কাউকে অস্ত্র ঠেকাইছি বা মারধর করছি তারা মিথ্যা বলছে। প্রয়োজনে আপনারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নেন। আমি অন্যায় করে থাকলে সঠিক তথ্য নিয়ে আমার বিচার করেন। তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের সঙ্গে আমাদের ঝামেলা ছিলো, তারা নৌকাকে সামনে রেখে আমাদের বরিশাল থেকে বিতারিত করতে চায়। তাই বিভিন্নভাবে তারা মিথ্যা ষড়যন্ত্র করছে এবং যাতে বরিশালে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ভাই না আসতে পারে সেজন্যও ষড়যন্ত্র করছে।

এ বিষয়ে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও নৌকা প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য জসিম উদ্দিন বলেন, শুধুমাত্র নৌকার নির্বাচন করায় তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। নৌকার প্রচারনা ও বিজয় কেউ বাঁধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করলে, সে যতই শক্তিশালী হোক না কেন আমরা তাদেরকে দাতভাঙ্গা জবাব দিবো এবং বরিশাল থেকে বঞ্চিত ঘোষণা করবো। এদিকে এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অবগত আছেন জানিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ের দপ্তর সেলের প্রধান অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক বলেন, এ ঘটনা হামলাকারীদের অতীতের রূপই প্রতিয়মান হয়েছে। নৌকার পক্ষে যাতে কেউ ভোট না চায় তাই কর্মীদের মাঝে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করাই তাদের লক্ষ্য। কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান মুকুল জানান, আটককৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হবে। এছাড়া মামলার অন্যান্য আসামীদের আটকে অভিযান অব্যাহত আছে।

আর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম-বিপিএম(বার) জানিয়েছেন, এখনো নির্বাচনী কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। এরআগে এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। যারাই জড়িত থাকুক না কেন কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

এদিকে রাতেই শের-ই-বাংলা হাসপাতালে ভর্তি কর্মীদের দেখতে যান আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত। তিনি তাদের চিকিৎসার খোঁজ নেয়ার পাশাপাশি হামলা ঘটনায় আইন শৃংখলাবাহিনী ব্যবস্থা গ্রহন করবে বলে জানান। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনকে বাঁধাগ্রস্থ করতেই এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দেয়া হচ্ছে।