আর মাত্র ৫দিন পর বৃহষ্পতিবার ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। নির্বাচনী প্রচারের সময়সীমার শেষ প্রান্তে এসে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ ও হিসেব নিকেশ কষে ভোটারদের পিছু নিয়ে হন্যে হয়ে ছুটছেন। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাত করে ব্যাস্ত সময় কাটিয়েছেন এদিন। সবার একটাই উদ্দেশ্য-নির্বাচনে জয়ী হওয়া। আর এজন্য তারা এ নির্বাচনের মূল ফ্যাক্টর অর্থাৎ যাদের ভোটে প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ভাগ্য অনেকটা নির্ধারিত হবে সেই ভাসমান ভোটার যারা অন্য এলাকা থেকে এখানে এসে বিভিন্ন মিল-কারখানায় ও প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তাদের সমর্থন ও ভোট আদায়ের চেষ্টা করছেন।

এদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কারনে এবার বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। ফলে ভাসমান ভোটারদের পাশাপাশি নির্বাচনে অংশ না নেওয়া বিএনপি সমর্থিত ভোটারদের ভোট এ নির্বাচনের বিজয়ে বিরাট ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিএনপির একটি বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে, যা এবারের নির্বাচনেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকের ধারণা। নির্বাচনে বিএনপি পন্থি ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে তাদের ভোটের পাল্লা যে প্রার্থীর পক্ষে ভারী হবে, সে প্রার্থীই সহজে বিজয়ী হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিকে এসে এসব ভোটারদের গুরুত্ব দিয়ে তাদের খোঁজে ছুটে যাচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা। তারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাতে দিন রাত পুরো এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের বিজয়ী ও নির্বাচনী প্রচারে প্রার্থীদের সহযোগিতা করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শতাধিক কেন্দ্রিয় নেতা-কর্মী গাজীপুরে আসছেন গণসংযোগ করতে। নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে আসছেন আশেপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন জেলার নেতা কর্মীরাও।

এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ সহ জার্তীয় পার্টি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রিয় নেতাদের পদচারনায় শিল্প কারখানা অধ্যূষিত গাজীপুরের শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা আগে কখনো এক সঙ্গে এতো হেভিওয়েট নেতা-কর্মীকে গ্রামে বা হাট-বাজারে খেটে খাওয়া সাধারন মানুষের সঙ্গে একত্রে ঘুরতে বা বিনয়ের সঙ্গে কথা বলতে এমন কি ছোট দোকানের বেঞ্চে বসে চা’ পান করতে দেখে নি। তাই এলাকাবাসি অনেকটা স্বপ্ন দেখার মতো হাতের নাগালে পেয়ে বেশ আগ্রহের সঙ্গে এসব ভিআইপিদের সময় দিচ্ছেন, আপ্যায়ন করছেন। তাদের ধারনা নির্বাচন শেষ হলেই এসব হেভিওয়েটদের কাছে কখনো ভিড় জমাতে পারবেন না। নির্বাচনের কারণেই তাদের কাছে শ্রমিক ও সাধারন মানুষের কিছুটা সময়ের জন্য হলেও কদর বেড়েছে। সর্বশেষ চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর জিসিসি নির্বাচনের ফলাফল আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেকটা প্রভাব ফেলবে এমন ধারনায় এ নির্বাচনকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীরা প্রতিদিন গাজীপুরে ভিড় জমাচ্ছেন। সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারের জন্য আসছেন বিভিন্ন মিডিয়ার অর্ধশতাধিক সংবাদ কর্মীরাও। অবস্থা এমন যেনো সবার সব ব্যস্ততা এখন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে।

এদিকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতিকের প্রার্থী জায়েদা খাতুন তার নিজের এবং ভোটারদের নিরাপত্তা দাবী করে সংবাদ সম্মেলণ করেছেন। নির্বাচনে প্রচারণাকালে বাঁধা, হামলা ও তার গাড়ি ভাংচুর এবং কর্মীদের মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুরে নগরীর তার ছয়দানাস্থ বাসভবন প্রাঙ্গনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থী জায়েদা খাতুন এ দাবী করেন। এসময় তিনি বলেন, প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্ধি মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানের লোকজন আমাদের উপর অন্যায়ভাবে হামলা করেছে। আমার গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার দাবি করছি। ভোটাররা যেন নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারে সেজন্য ভোটরদের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ভোটের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থী জায়েদা খাতুনের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট তার ছেলে সাবেক মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন।

প্রার্থীদের গণসংযোগ ॥
আওয়ামীলীগ প্রার্থীর গণসংযোগ ॥ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী (নৌকা) এড. আজমত উল্লা খান শুক্রবার নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানার টঙ্গী বাজার, মধুমিতা মেগা সিটি, জামাই বাজার, পাগাড় ফকির মার্কেট, ঝিনু মার্কেট, গোপালপুর, মরকুন, শিলমুন, তিস্তার গেইট, বনমালা, দত্তপাড়া, এরশাদ নগর, টেকপাড়া, শিকদার মার্কেট ও গাজীপুরা সহ বিভিন্ন এলাকায় দিনভর গণসংযোগ করেছেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন। আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠণের সকল পর্যায়ের নেতা কর্মীরাসহ আশেপাশে এলাকার নেতা কর্মীরাও এ নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ॥ টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে প্রতিদন্ধিতা করছেন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। শুক্রবারেও তিনি ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরকে সঙ্গে নিয়ে নগরীর গাছা, কুনিয়া ও তারগাছসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন ও ভোটারদের কাছে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট প্রার্থণা করেন। এরআগে তিনি নগরীর ছয়দানা এলাকায় তার বাসায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

জাপা প্রার্থী ॥ জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন (লাঙ্গল) শুক্রবার মহানগরীর বসুগঅ৭ও, টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মী সমর্থকদের নিয়ে দিনভর গণসংযোগ করেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রার্থী ॥ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান (হাত পাখা) কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এদিন তিনি মহানগরীর মহিষানবাড়ী, মিরের গাঁও, কারখানা বাজার, জোলার পাড়, কাউলতিয়া, পোড়াবাড়ি, মাস্টারবাড়ী, ভিমবাজার, বাংলাবাজার, গজারিয়া পাড়া ও হাতিয়াব এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। এরআগে দুপুরে তিনি সালনা কেন্দ্রীয় মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি ॥ এদিকে হাতি প্রতীক নিয়ে অপর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি বুধবার সকালে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নগরীর হায়দরাবাদ, মাজুখান, মারুকা, হারবাইদ, বিন্দান ও পূবাইল সহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন।