গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে বলতে এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষন করতে ভারত চীনসহ কয়েকটি এ্যাম্বাসীতে চিঠি দিয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। চিঠিতে প্রতিটি কেন্দ্রে ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ এবং কুটনীতিকদের মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করারও অনুরোধ জানানো হয়। ইংরেজীতে লেখা তিন পাতার ওই চিঠি গত রোববার ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশের রাস্ট্রদূত ও হাইকমিশনারকে দেয়া হয়েছে। এর আগে সিটি নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন নির্বাচন কমিশন সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ অন্যদের কাছে একই দাবিতে চিঠি দেন। সোমবার মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের ছেলে ও তার নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সমন্বয়কারী বহুল আলোচিত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জাহাঙ্গীর আলম জানান, নির্বাচনী এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরির জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বলার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানানোর জন্য কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারকে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে নির্বাচন পর্যবেক্ষন করতেও বিদেশী কুটনীতিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা চাই একটা অবাধ, সুষ্ঠু, গঠনমূলক নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনার বলেছেন সুষ্ঠু ভোট করবে, সিসি ক্যামেরা দিবে, ইভিএম-এ ভোট হবে। যার ভোট সে দিবে, যে ভোট পাবে তার নামে ডিক্লিয়ার হবে। আমরাও এটাই চাই। ওনারা যে কমিটমেন্ট করেছে সেটার বাস্তবায়ন চাই।

জানা গেছে, চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারকে ইংরেজিতে লেখা তিন পাতার এ চিঠিটি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা এবং অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগসহ কয়েকটি দাবি জানানো হয়েছে। এর আগে সিটি নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন নির্বাচন কমিশন সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ অন্যদের কাছে একই দাবি জানিয়েছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন।

চিঠিতে জায়েদা খাতুন বলেন, ‘আমি জায়েদা খাতুন আসন্ন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে “টেবিল ঘড়ি” প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছি। আমি গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের মা। আপনারা সবাই অবগত আছেন যে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আমার ছেলে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নির্বাচিত মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থিতা সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বাতিল করা হয়েছে। আমার ছেলের প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে, তার প্রতিবাদ করতে ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছি।

তিনি চিঠিতে আরো উল্লেখ করেন, গাজীপুরে আমি আমার নির্বাচনী প্রচারণায় নামলেই লাখো শান্তিপ্রিয় মানুষ আমার প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। আমি ৯ মে প্রতীক পাওয়ার পর থেকে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান আমাকে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন, আমার জনসংযোগে হামলা করছেন এবং আমার নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত পোলিং এজেন্ট এবং সম্ভাব্য পোলিং এজেন্টদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন। ব্যক্তিগত গুন্ডা ও প্রশাসনের ছদ্মবেশে বিশেষ পুলিশ পরিচয়ে তাদের ভয় ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।”

চিঠিতে জায়েদা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান তার সন্ত্রাসী লোকজন নিয়ে আমার গণসংযোগের সময় আমার গাড়ীবহরে বাধা দিচ্ছেন এবং তার পক্ষে (নৌকার) উস্কানিমূলক শ্লোগান দিচ্ছেন এবং পুলিশ প্রশাসনের সদস্যরা অযথা বিভিন্ন স্থানে আমার নির্বাচনী প্রচারণাকে অবৈধভাবে বাধা দিচ্ছে ও হয়রানি করছে। আমি এসব ঘটনা জানিয়ে একাধিকবার নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ করেছি। এ বিষয়ে আমি ১৮ মে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সর্বশেষ গত ১৮ মে বিকেলে মহানগরীর টঙ্গীর ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে আজমত উল্লা খানের সন্ত্রাসী বাহিনী আমার গাড়ীবহরকে বাধা দেয় এবং আমার নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত গাড়ীটি ভাঙচুর করে।’

জাহাঙ্গীর বলেন, এসব কারণে ক’টনীতিকদের দ্বারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার জন্য এবং সেনা মোতায়েনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে চাপ সৃষ্টি করার অনুরোধ জানিয়েছেন মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন।