বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (আইসিটি) কিছু সংশোধনী আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) প্রণয়ন করা হয়নি বা এটি করার জন্য ডিএসএ ব্যবহার করা হচ্ছে না। এ আইনের অপব্যবহার রোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এ বিষয়ে একটি টেকসই সমাধান দরকার, কিছু সংশোধনী আনা হবে।

রোববার (২১ মে) রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশে ডিজিটাল আইন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর অফিস এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর সৈয়দ মাহফুজুল আজিজ, সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, প্রফেসর ড. কাবেরী গায়েন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, সংলাপ ও আলোচনা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের চাবিকাঠি। তাই সরকার সমাজের বিভিন্ন অংশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে পরামর্শ করতে উৎসাহিত বোধ করে। সরকার ডিএসএ’র বিষয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার অফিসের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছে, তাদের কিছু ইনপুট পেয়েছে এবং এটি পর্যালোচনা করছে।

আনিসুল হক বলেন, অনলাইনে নারীদের প্রায়ই হয়রানি করা হচ্ছে, যার সুরাহা হওয়া দরকার। ডিজিটাল স্পেসের যথেচ্ছ অপব্যবহারের মাধ্যমে দেশ, সরকার বা কোনো ব্যক্তির মানহানি করতে দেওয়া হবে না।

মন্ত্রী বলেন, সময়ের প্রয়োজনে বর্তমানে সব দেশ ডিজিটাল স্পেসে পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের জাতীয় স্বার্থ এবং যারা ডিজিটাল আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ও আক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, তাদের রক্ষা করা দরকার। এজন্য ডিএসএ দরকার। তাই এ আইন বাতিলের প্রশ্নই আসে না। তবে আইনটি সংশোধনের বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এটি অবশ্যই বিবেচনা করা হবে।

সংলাপে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কতগুলো ধারার শাস্তি দণ্ডবিধির চেয়ে কঠোর; যেমন ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারা। এমনকি কোনো কোনো অপরাধ পুনরায় করার জন্য যাবজ্জীবনের মতো সাজা হতে পারে।

এই সংসদ সদস্য বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলো এগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বড় বাধা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য চ্যালেঞ্জ। এ জন্য তিনি আইনটি পর্যালোচনা করে আরও সুনির্দিষ্ট করা ও সাজা কমানোর আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, আইনটির অপব্যবহার হচ্ছে এবং অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

বর্তমান সাইবার অপরাধের জন্য আইনটির পক্ষে তিনি। কিন্তু অবশ্যই এটি সংশোধন করতে হবে। প্রথমত আইনের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এজন্য বিস্তারিতভাবে আইনটি পর্যালোচনা করতে হবে। দ্বিতীয়ত জামিনযোগ্য ধারা বাড়াতে হবে এবং শাস্তি কমাতে হবে। অপরাধের সংজ্ঞাগুলো আরও সুনির্দিষ্ট করতে হবে। এছাড়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে আগে অভিযোগটি প্রেস কাউন্সিলে পাঠাতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে অধিকাংশ সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম এখন ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ (নিজ থেকে চেপে যাওয়া) করে। কিন্তু সেলফ সেন্সরশিপ করে কোনো দেশ সমৃদ্ধ হতে পারে না।