সরকার নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন ব্যবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপ-নেতা জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘সরকার নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন ব্যবস্থা থাকায় সরকার ইচ্ছামতো জয়-পরাজয় নির্ধারণ করছে। এখান থেকে বেরিয়ে না এলে কোনোভাবেই অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়।’

বুধবার (২৪ মে) বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

এ সময় তিনি আরো দাবি করেন, ডলারের সঙ্কট নিরসনে ব্যর্থ হলে রাজনৈতিক সঙ্কট ঘনীভূত হয়ে সরকারকে বড় ধরনের মাশুল গুণতে হবে।

জি এম কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচনের পদ্ধতিতে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি। আমরা এ বিষয়ে একটা পরিবর্তন দেখতে চাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আমরা এক সময় সব দলই আন্দোলন করেছি। নির্বাচন বর্জন করেছি কোনো না কোনো সময়। আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধেও আমরা আওয়ামী লীগসহ নির্বাচন বর্জন করেছিলাম, আন্দোলন করেছিলাম। তাই এ দু’টি ব্যবস্থার বাইরেও যেন জনগণ নিশ্চিতভাবে ভোট দিতে পারে, তেমন একটি পদ্ধতি আমাদের যে কোনোভাবেই হোক বের করতে হবে। যার জন্য প্রথমে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সবাই মিলে বিশ্বনেতাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে একটা পদ্ধতি বের করা দরকার, যেন নির্বাচন ব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। কারণ সরকারের নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন ব্যবস্থা থাকলে সরকার ইচ্ছামতো জয়-পরাজায় নির্ধারণ করতে পারে। এটা কোনো নির্বাচন না।’

জি এম কাদের বলেন, ‘তত্ত্বাধায়ক সরকার পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিব। তবে সেখানে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন থাকবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিরোধী কোনো কাজ আমরা করব না।’

বিএনপি ও আওয়ামী লীগ শাসনামলের সমালোচনা করে জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী দিব, এটা স্বাভাবিক। জাতীয় পার্টির দেশ শাসনের অভিজ্ঞতা আছে। বাংলাদেশের সকল নির্বাচনী এলাকায় আমাদের সমর্থক ও ভোটার আছে। ১৯৯১-এর পর থেকে বাংলাদেশে যে দু’টি বড় দল ক্ষমতায় এসেছে তাদের অনেক কিছুতেই জনগণ সন্তুষ্ট নয়। জনগণ একটি পরিবর্তন চায়। এই মৌলিক পরিবর্তনগুলো দেয়ার জন্যই আমরা জাতীয় পার্টিকে গড়ে তুলতে চাই।’

জোট প্রসঙ্গে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচনের আগে অবস্থান ও সাংগঠনিক শক্তির ভিত্তিতে যদি ভালো মনে হয় তাহলে কারো সাথে জোট করব। আর যদি আমাদের এককভাবে করার সামর্থ থাকে, তাহলে আমরা সেভাবে চিন্তা করব। এখন পর্যন্ত আমরা এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি।’

ডলার সঙ্কট নিয়ে তিনি বলেন, ‘ডলার সঙ্কট একটি ভয়াবহ সমস্যা। এটা রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরো ঘনীভূত করবে। সরকারের জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে। ডলার সঙ্কটের জন্য এখন পর্যন্ত যে অর্থনৈতিক অবস্থা তার ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হতে পারে। সরকারকে এটা সতর্কভাবে হ্যান্ডেল করা দরকার। এতে যদি তারা ব্যর্থ হয়, তা হলে বড় ধরনের মাশুল দিতে হবে সরকারকে।’

এ সময় তার সাথে ছিলেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, মহানগর সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, সংসদ সদস্য আদিলুর রহমান আদিল, জেলা সদস্য সচিব আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, জেলা যুব সংহতি সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিম, মহানগর যুব সংহতি সভাপতি শাহীন হোসেন জাকির, মহানগর ছাত্র সমাজ সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত আসিফ, জেলা ছাত্র সমাজ সভাপতি আরিফুল ইসলাম আরিফসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

ছয় দিনের সফরে বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউজে তাকে গার্ড অব অনার দেয় জেলা প্রশাসন। তিনি দলটির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত শেষে মুন্সিপাড়া কবরস্থানে তার মা-বাবার কবর জিয়ারত করেন। এরপর তিনি পৈত্রিক নিবাস নগরীর স্কাই ভিউতে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন।