যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নাগরিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জিয়ার নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধি দল চার দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে তারা ঢাকায় হজরত শাহজালাল রহ. আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন। বিমানবন্দরে তাদের স্বাগত জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।

বাংলাদেশের জন্য নতুন মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর এবারই যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি ঢাকায় সফরে এলেন। প্রতিনিধি দলটি এর আগে দিল্লিতে তিন দিনের সফর সম্পন্ন করে।

চার দিনের সফরে সরকারের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি দল বৈঠকে জানতে চাইবেন কীভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হবে। সেই সঙ্গে দুই দেশের আলোচনায় গুরুত্বপাবে বাণিজ্য, রোহিঙ্গা সংকট, শ্রম ও মানবাধিকার।

গত ৭ জুলাই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, উজরা জিয়া বাংলাদেশ সফরের সময়ে রোহিঙ্গা সংকট, শ্রম সংকট, মানবাধিকার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবপাচার নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

আগামীকাল বুধবার প্রতিনিধি দলটি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন। সেখানেই সারা দিন থেকে প্রতিনিধি দলটি রাতে ঢাকা ফেরত আসবে। আগামী বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ধারাবাহিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। এ দিন উজরা জিয়া শ্রমিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। আগামী শুক্রবার প্রতিনিধি দলটির বাংলাদেশ ছাড়ার কথা রয়েছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কোনো কথা বলবে না। তারা শুধু জানতে চাইবে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী। এছাড়া মানবাধিকার বিশেষ করে শ্রম অধিকার গুরুত্ব পাবে উজরা জিয়ার বৈঠকে। সম্প্রতি শহিদুল ইসলাম নামে এক শ্রমিকের হত্যার বিষয়ে ইতোমধ্যে নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দপ্তর। এছাড়া শ্রমিকদের নিয়ে বৈশ্বিক অধিকার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান একদম নিচে। ফলে এ বিষয়গুলোতে পরিস্থিতি উন্নয়নে আলোচনা করবে দুই দেশ।

বাংলাদেশের শ্রম অধিকার, পরিবেশ ও মান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ এক যুগের ওপর। সংসদের বাজেট অধিবেশনে শ্রম আইন সংশোধন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ঢাকার পক্ষ থেকে। সেই সঙ্গে শ্রম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগগুলো দূর করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়গুলোতে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ার কিছুটা অসন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র।

তারপরও ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের অর্থায়ন বা ডিএফসি অর্থায়নে বাংলাদেশকে যুক্ত করা নিয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ–যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ডিএফসি অর্থায়ন পাওয়ার পূর্বশর্ত বাংলাদেশ এখনও পূরণ করতে পারেনি। এ বৈঠকে বাংলাদেশের সুযোগ রয়েছে ডিএফসি অর্থায়ন নিশ্চিত করার বিষয়ে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের খাতিরে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেই ডিএফসি অর্থায়ন গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হবে।

উজরা জিয়ার সফর নিয়ে গত ৬ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলনে, মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফর শুধু নির্বাচন কেন্দ্রিক নয় । মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, রোহিঙ্গা, বাণিজ্যসহ সম্পর্কের অন্যান্য বিষয়েও আলোচনা হবে।