রংপুর জিলা স্কুল মাঠে বঙ্গবন্ধু কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভাগীয় জনসভায় যোগদান উপলক্ষ্য নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে রংপুর মহানগরীকে। বুধবার (২ আগস্ট) বিকেল ৩টায় এ জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, জনসভা পরিণত হবে জনসমুদ্রে, এখান থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। চলছে শেষ মুহূর্তের মাঠ ও মঞ্চ সাজানোর কাজ।

রংপুর মহানগরীর ২১টি পয়েন্টে করা হয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। এক হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রবেশ রুটগুলোতে সন্দেহভাজন যানবাহন ও ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে জনসভায় আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে চায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

এদিকে প্রায় এক যুগ পর রংপুরের পীরগঞ্জের লালদীঘির পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছেন রংপুরে। বধূবরণে আয়োজনের বিন্দুমাত্র কমতি নেই কোথাও। উজ্জীবিত আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের ঢেউ বইছে। দফায় দফায় হচ্ছে- আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর বর্ধিত সভা।

মিছিলে মিছিলে একাকার নগরী। চলছে বর্ণিল প্রচারণা। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে পুরো নগরী। নগরীর বৈদ্যুতিক পিলার, ল্যাম্পপোস্ট, দেয়াল, গাছ কোথাও ফাঁকা নেই। ধুয়েমুছে চকচকা করা হয়েছে রাস্তাঘাট, রোড ডিভাইডার। চলছে বাদ্যযন্ত্র ও গানের তালে নেচে-গেয়ে মাইকিং। জনসভাস্থল ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়, জিলা স্কুল মোড়, ডাকঘর মোড়, সুরভি উদ্যান মোড়, পুলিশ লাইনস মোড়, সিটি বাজারসহ বিভিন্ন পয়েন্টে মাইক সাঁটানো হয়েছে। প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় নেতারা আসছেন। শেষ মুহূর্তে মাঠ পরিদর্শনসহ বিভিন্ন প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন তারা।

এদিকে জনসভাস্থল রংপুর জিলা স্কুল মাঠে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সসহ (এসএসএফ) রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা কাজ করছেন সর্বোচ্চ সতর্কতায়। মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণায় নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে সভামঞ্চ। পাশেই মিডিয়া, মুক্তিযোদ্ধা ও অতিথি কর্নার। সামনে থাকবে জনতা। প্রস্তুতির কাজ তদারকি করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রতিদিন মাঠ-মঞ্চসহ সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন করছেন তারা। জিলা স্কুল মাঠের জনসভা থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমনটা জানিয়েছেন নেতারা।

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। পাড়া-মহল্লায় উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে সভা-সমাবেশ করা হয়েছে। গ্রামেগঞ্জে, শহরে, বন্দরে খন্ড খন্ড মিছিল করা হয়েছে। পুরো বিভাগজুড়ে ব্যাপক গণসংযোগ চালানো হয়েছে। বিগত সময়ের উন্নয়নগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। মানুষ এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঘিরে উচ্ছ্বসিত। তারা জনসভায় যোগ দিতে অপেক্ষা করছে।

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রোজী রহমান বলেন, আমরা খুব আনন্দিত ও উদ্বেলিত। আমরা সবাই বঙ্গবন্ধু কন্যা রংপুরের পুত্রবধূ শেখ হাসিনার আগমনে উচ্ছ্বাসে একাকার হয়ে গেছি। ১১ বছর পর আমরা তাকে নবসাজে বরণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। লাখ লাখ মানুষের ভিড়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে জিলা স্কুল মাঠে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের ব্যাপক সমাগম ঘটবে, যা রংপুরের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর রংপুর সফর এবং এই জনসভা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। জনসভার হাওয়ায় এখন পুরো রংপুর বিভাগ আওয়ামী লীগের জয় বাংলা জয়োধ্বনিতে উদ্বেলিত। জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় সংসদ নির্বাচনে যুবসমাজ মাঠে থাকবে। আগামীতে রংপুর বিভাগের সবগুলো আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকার প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত হবে।

আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে রংপুরসহ পুরো বিভাগে উৎসবের আমেজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু বঙ্গবন্ধুকন্যা, তাই তার ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বের কারণে দলমত নির্বিশেষে লোকে লোকারণ্য হয়ে যাবে। গোটা শহর মানুষে মানুষে টইটম্বুর হয়ে যাবে। আমরা আশা করছি দলমত নির্বিশেষে এই জনসভায় সব শ্রেণির-পেশার মানুষ অংশ নেবেন। শুধু জিলা স্কুল মাঠ নয় গোটা শহর মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হবে।

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভার সকল আয়োজন ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এই জনসভায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটবে। পুরো রংপুর এই জনসভা ঘিরে জয় বাংলার জনস্রোতে রূপান্তরিত হবে। পুরো বিভাগ জুড়ে যেভাবে দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়েছেন, তাতে আমরা মনে করি রংপুরের মানুষের জন্য এটি হবে ঐতিহাসিক জনসভা।

নানক আরও বলেন, ইনশাআল্লাহ এই জনসভা থেকেই বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, অগ্নি-সন্ত্রাস, মানুষ খুন এবং দেশবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে উত্তরের এই জনপদ (রংপুর) থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

জনসভাকে ঘিরে পুরো নগরীকে নিরাপত্তা চাদরে ঢেকেছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। বিভিন্ন রুট দিয়ে আসা যানবাহন পার্কিংয়ে নগরীর ২১টি পয়েন্ট নির্ধারণ করেছে মহানগর পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগ। বসানো হয়েছে এক হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা। প্রবেশপথ ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়গুলোতে বাড়ানো হয়েছে।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন বলেন, জনসভাকে ঘিরে সব ধরনের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করেছি আমরা। পোশাক পরিহিত পুলিশের পাশাপাশি আর্মডসহ সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকবে। জনসভাস্থল ছাড়াও পথে পথে রুট ডিউটি, থাকবে চেকপোস্ট, পুরো নগরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথ ও মোড়ে মোড়ে থাকবে সদস্যরা। উঁচু ভবনের ছাদে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর প্রতি ফ্লোরে ফ্লোরে থাকবে প্রশিক্ষিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

আবু মারুফ হোসেন বলেন, জনসভাস্থল, পুরো শহর এবং সার্কিট হাউস পুরোটাই আমরা সিসিটিভির কাভারেজে এনেছি। আমরা সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় ১ হাজারেরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছি। আমরা ডিজিটালি মনিটরিং করবো। পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে এবং পুরো নগরীজুড়ে থাকবেন। সঙ্গে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা। যাতে জনগণ মাঠে সুশৃংখলভাবে আসতে পারেন, সুন্দর পরিবেশে সভা শুনতে পারেন এবং নির্বিঘে্ন ঘরে ফিরে যেতে পারেন। সেজন্য আমাদের সকল প্রতি সম্পন্ন হয়েছে।

সফরসূচি অনুযায়ী, বুধবার বেলা সাড়ে ১২টায় রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে করে রংপুরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুর ২টায় তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি রংপুর ক্যান্টনমেন্টের হেলিপ্যাডে অবতরণ করবে। দুপুর ২টা ৫ মিনিটে সেখান থেকে সড়কপথে রংপুর সার্কিট হাউসের উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।

সোয়া ২টার দিকে সার্কিট হাউসে পৌঁছে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এরপর বিকেল ৩টায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাসমাবেশ স্থলে পৌঁছাবেন। প্রথমে সেখানে রংপুর বিভাগের উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। সফরে রংপুরে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তুর উদ্বোধনের ঘোষণা দেবেন সরকার প্রধান। মহাসমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার পর বিকেলে আবার একই পথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি।