নাট্যকার, অভিনয়শিল্পী,সমাজসেবক ও সৎসঙ্গ পত্রিকার সহসম্পাদক শহিদ বুদ্ধিজীবী প্যারী মোহন আদিত্যর ৫২ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (৮ আগষ্ট) বিকেল সাড়ে ৪ ঘটিকার সময় মাদারীপুর প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয়ে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সাধারন সম্পাদক ও মাদারীপুর প্রেসক্লাবের কোষাধক্ষ্য আব্দুল্লাহ আল মামুন এর সভাপতিতে ও জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সিনিয়র যুগ্ন সাধারন সম্পাদক সাহিদ খন্দকার এর সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, মাদারীপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডসট্রির মাদারীপুর এর সভাপতি, হাফিজুর রহমান যাচ্চু খান (নানা), বিশেষ অতিথি ছিলেন, মাদারীপুর প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি, ইয়াকুব খান শিশির, প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক,মনির হোসেন বিলাস।
এসময় স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সিনিয়র-সহ সভাপতি ও বাংলা টিভির জেলা প্রতিনিধি এস এম তানভীর, প্রেসক্লাবের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ও দৈনিক সমকালের জেলা প্রতিনিধি ফরিদ উদ্দিন মুফতি, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সহ-সভাপতি মোঃ কামাল হোসেন, যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক আরিফুর রহমান, প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক ও মোহনা টিভির জেলা প্রতিনিধি আরিফ মোল্লা, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক জসিম মিয়া, দৈনিক আমার সংবাদ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি জাহিদ হাসান, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক লিখন মুন্সী,ক্রীড়া সম্পাদক সাইদ হাসান সজীব, দপ্তর সম্পাদক হেমায়েত হোসেন খান,সহ-দপ্তর সম্পাদক নাসির উদ্দিন তালুকদার নাহিদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক দুর্যয় আব্বাস প্রমূখ।

উল্লেখ যে, শহীদ প্যারী মোহন আদিত্যের জন্ম ১৯৩৪ সালের ৫ জুন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পাকুটিয়া গ্রামে। বাবার নাম মুকন্দ মোহন আদিত্য, মা মহামায়া আদিত্য। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই নাটক, যাত্রাপালা লেখা এবং অভিনয়ে জড়িয়ে পড়েন। এলাকার সব সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে তিনি মুখ্য ভূমিকায় থাকতেন। ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র প্রতিষ্ঠিত সৎসঙ্গের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। সৎসঙ্গের মুখপত্র ত্রৈমাসিক সৎসঙ্গ সংবাদ (বর্তমানে মাসিক) পত্রিকার সহসম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া সাহিত্যবিষয়ক লেখালেখি ও জনকল্যাণমূলক কাজেও যুক্ত থাকতেন। সত্তরের জলোচ্ছ্বাসের পর তিনি সহযোগীদের নিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
একাত্তরের ১৮ এপ্রিল পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী টাঙ্গাইল থেকে ময়মনসিংহে যাওয়ার সময় পাকুটিয়া সৎসঙ্গ আশ্রমে প্রবেশ করে। তাদের ছোড়া শেলের আঘাতে আশ্রম মন্দিরের চূড়া ভেঙে যায়। হানাদারদের আসার খবর পেয়ে সবাই নিরাপদ দূরত্বে চলে যান। তাই সেবার প্রাণে রক্ষা পান সবাই। পাকুটিয়া আশ্রমে প্রায়ই মুক্তিযোদ্ধারা আসতেন। প্যারী মোহন আদিত্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখতেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিতেন এবং সহায়তা করতেন নানাভাবে। এ খবর গোপন থাকেনি। স্থানীয় রাজাকারদের মাধ্যমে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী জেনে যায়। তারা টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সৎসঙ্গ আশ্রমে অভিযান চালিয়ে হত্যা করে তাঁকে।
একাত্তরের ৮ আগস্ট বেলা তিনটার দিকে রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে পাকিস্থানি হানাদারদের একটি দল দ্বিতীয় দফা হামলা চালায় পাকুটিয়া সৎসঙ্গ আশ্রমে। গুলি চালাতে চালাতে তারা সেখানে প্রবেশ করে। প্যারী মোহনের পেটে গুলি লাগে, তিনি লুটিয়ে পড়েন। মুক্তিযোদ্ধাদের খবর জানতে চেয়ে আহত প্যারী মোহনকে বেয়নেট দিয়ে খোঁচাতে শুরু করে পাকিস্থানি হানাদাররা। বেয়নেটের আঘাতে সারা দেহ ক্ষতবিক্ষত হলেও তিনি মুখ খোলেননি। নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সেদিন শুধু প্যারী মোহন নন, ওই আশ্রমে অবস্থানরত ব্যামাচরণ শর্মা নামের আরেক নিরীহ বাঙালিকেও হত্যা করে ঘাতকেরা।

আশ্রমে হত্যাকান্ডের পর পাকিস্থানি বাহিনী আশপাশের বাড়িঘরে লুটপাট করে। আতঙ্কে মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে যায়। প্যারী মোহনের মরদেহ তিন দিন পড়ে ছিল আশ্রমে। পরে স্থানীয় কয়েকজন গোপনে এসে তাঁর শেষকৃত্য করেন।

বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত রশীদ হায়দার সম্পাদিত স্মৃতি ১৯৭১এর পুনর্বিন্যাসকৃত চতুর্থ খন্ডে প্যারী মোহন আদিত্য সম্পর্কে লিখেছেন তাঁর ছেলে নট কিশোর আদিত্য। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের গবেষক শফিউদ্দিন তালুকদারের একাত্তরের গণহত্যা-যমুনার পর্ব ও পশ্চিম তীর, জুলফিকার হায়দারের ঘাটাইলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং টাঙ্গাইলের রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধ গ্রন্থে প্যারী মোহন আদিত্যের জীবনীতে শহীদ হওয়ার বিবরণ রয়েছে। প্যারী মোহন আদিত্যের স্মরণে পাকুটিয়া সৎসঙ্গ তপোবন বিদ্যালয়ের সামনে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়েছে। টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের পাকুটিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সৎসঙ্গ আশ্রম পর্যন্ত সড়কটি ‘শহীদ প্যারী মোহন আদিত্য সড়ক’ নামকরণ হয়েছে।

সাবরীন জেরীন,মাদারীপুর।