জামিনের দিনই কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া আলোচিত যুবলীগ নেতা জামাল হত্যা মামলার আসামি মো: শাহীনুল ইসলাম ওরফে সোহেল সিকদারের জামিন স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট। একইসাথে তাকে আগামী ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বুধবার এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

হাইকোর্টে জামিন হওয়ার পর দ্রুত কিভাবে আদেশের কপি পৌঁছেছে সে বিষয়ে তদন্ত করার জন্য সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেন চেম্বার কোর্ট।

নিম্ন আদালতে জামিন নামঞ্জুরের পর হাইকোর্টে জামিন চান আসামি সোহেল সিকদার। গত ২৭ জুলাই হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। এরপর ৩ ও ১০ আগস্ট আবেদনটি কার্যতালিকায় ছিল। ১০ আগস্ট জামিন আবেদনটি খারিজের আদেশ দিতে চাইলে আসামির আইনজীবী তা ‘নন প্রসিকিউশন’ করে নেন।

এরপর ২৮ আগস্ট অপর একটি হাইকোর্ট বেঞ্চে জামিন চেয়ে পুনরায় আবেদন করেন আসামির আইনজীবী। এরপর আবেদনটি শুনানির জন্য টানা তিন কার্যদিবস কার্যতালিকায় আসে। ৩১ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ইতোপূর্বে জ্যেষ্ঠ হাইকোর্ট বেঞ্চ জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর এখানে পুনরায় জামিন চেয়েছেন। তখন জামিন আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন ওই বেঞ্চ। দুই দিনের মধ্যে দু’টি বেঞ্চ থেকে জামিন না মেলায় অবকাশকালীন বেঞ্চে জামিন আবেদনটি নিয়ে যান আসামির আইনজীবী।

অবকাশের প্রথম দিন গত ৩ সেপ্টেম্বর বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে আনলিস্টেড মোশন হিসেবে জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য ছিল। ওইদিন শুনানি নিয়ে আসামি সোহেল সিকদারকে জামিন দেয় হাইকোর্ট। ওই জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষ। এই জামিন আদেশ দুই বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ওইদিনই কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৌঁছে যায়। সেখানে জামিননামা দাখিল ও স্বাক্ষরের পর যায় কারাগারে। এরপরই ৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে মুক্তি পান আসামি সোহেল সিকদার। দ্রুততার সাথে হাইকোর্টের জামিন আদেশ পৌঁছানো ও কারামুক্তির বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবদেন প্রকাশিত হয়।

পরে সোহেল সিকদারের জামিন স্থগিত ও তাকে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশনা চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টে আবেদন (সিএমপি) করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি নিয়ে চেম্বার কোর্ট জামিন আদেশ স্থগিত (স্টে) করে নির্দেশনা (ডাইরেকশন) দেন। এখন আসামি সোহেল সিকদারকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতেই হবে।

চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে দাউদকান্দির গৌরীপুর পশ্চিম বাজার ঈদগাহ এলাকার মসজিদ গলিতে যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে (৪০) গুলি করে হত্যা করে বোরকা পরিহিত দুর্বৃত্তরা। এ হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পর ২ মে দিবাগত মধ্যরাতে নয়জনের নাম উল্লেখ করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহত জামালের স্ত্রী পপি আক্তার। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে সোহেল সিকদার অন্যতম। যিনি তিতাস উপজেলার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। গত ৬ মে তাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।