পোশাক শিল্পে শ্রমিকের মজুরি বাড়ানোকে কেন্দ্র করে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় আহত শ্রমিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গাজীপুরের কোনাবাড়ি জরুন এলাকায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষকালে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। রবিবার ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মোঃ বাচ্চু মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহতের নাম- মোঃ জামাল উদ্দিন (৪০)। তিনি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানাধীন বামহাটি গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে।

নিহতের সহকর্মী সফিকুল ইসলাম জানান, গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে জরুন এলাকার ইসলাম গ্রুপের সুইং সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন জালাল উদ্দিন। গত ৮ নবেম্বর (বুধবার) বেতন ভাতা বাড়ানোর দাবীতে ওই গ্রুপের তিনটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এসময় পুলিশ বাঁধা দিলে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্টগানের গুলি, টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে। এতে অন্ততঃ ৮জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে অঞ্জুয়ারা খাতুন ও জামাল উদ্দিনকে গুরুতর অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে আঞ্জুয়ারাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। অপর আহত জামাল উদ্দিন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দিবাগত রাতে মারা যান।
তিনি আরো জানান, ঘটনারদিন আমি এবং জালাল একসঙ্গে কারখানায় কাজে যাই। বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবীতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ শুরু হওয়ায় কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করলে আমরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলাম। এসময় পুলিশে ছোড়া সর্টগানের গুলি জামাল উদ্দিনের শরীরের বিভিন্নস্থানে বিদ্ধ হয়। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ঘটনার পর থেকে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

প্রসঙ্গতঃ ন্যূনতম মজুরী ২৩ হাজার টাকা করার দাবীতে গত ২৩ অক্টোবর থেকে আন্দোলন শুরু করে গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকেরা। গত ৭ নবেম্বর মজুরি বোর্ড পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে ঘোষণা দেয়। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তে শ্রমিকরা সন্তুষ্ট না হওয়ায় ঘোষিত মজুরি প্রত্যাখান করে পরদিন ৮নবেম্বর থেকে ফের আন্দোলনে নামে শ্রমিকেরা। তারা বিভিন্ন এলাকায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও সড়ক অবরোধ করে তান্ডব চালায়। এসময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সর্টগানের গুলি, টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। এনিয়ে গাজীপুরে ন্যূনতম বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবীতে শ্রমিক আন্দোলনকালে মোট ৪জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এসময় পুলিশ সহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ অবস্থার মধ্যে জানমালের নিরাপত্তা ও নাশকতা এড়াতে বেশ কিছু কারখানা তাৎক্ষণিক ছুটিও ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। শিল্প পুলিশের ডিআইজি জাকির হোসেন খান শনিবার জানান, গাজীপুরের আন্দোলনকালে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ১২৩টি কারখানায় ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা। ওই ঘটনায় বিভিন্ন থানায় ২২টি মামলায় এ পর্যন্ত ৮৮জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।