আজ ১৬ই ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। অনেকেই আজ বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানাবে। আনন্দ প্রকাশ করবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাহির করবে। রাষ্ট্রীয়ভাবেও নেওয়া হবে নানা উদ্যোগ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের মুখে, অন্তরে নেই। যাদের সম্ভ্রম, রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত মহান বিজয়। বিজয়ের এই দিনে তাদের জন্য আমরা কী করতে পেরেছি?

শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল ইসলাম তুহিন এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যারা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তাদের জীবন এখন কেমন যাচ্ছে? যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারই বা আজ কেমন আছে? রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশ স্বাধীনের ভারী দায়িত্ব যাঁরা বহণ করেছেন, তাদের রক্তমাখা অর্জিত বিজয়ে শুধু শুভেচ্ছা জানিয়েই আমরা দায় সারছি।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে তুলি ধরে তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙিয়ে দেশের রাজনীতি থেকে শুরু করে সবকিছুই চলে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বলে মুখে ফেনা তুলে, ওই সকল সুশীল সমাজকেও মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করে কথা বলতে দেখেছি। প্রতিবেশীর হামলায় মুক্তিযোদ্ধা আহত-নিহত হওয়ার ঘটনাও শুনেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের কথা সামনে আসলে নাক সিঁটকাতেও দেখেছি হাজারো মানুষকে। আমরা আসলে মুখোশধারী চেতনাবাদী অকৃতজ্ঞ জাতি।

অবশেষে, যাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা। মহান বিজয় দিবসে সেই সব বীর শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

এসময়ে ক্লাব সভাপতি কামরুল হাসান অভি বলেন, বঙ্গবন্ধু কখনো সংঘাত চাননি। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের ভোটাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ভাষার উপরে হস্তক্ষেপসহ নাগরিক হিসেবে আমাদের মৌলিক অধিকারে চরমভাবে আঘাতহানে। যার ফলে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে বাংলার বীর সৈনিকেরা। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে আজকের এই দিনে তারা মানুষ রুপি হায়নাদের থেকে স্বাধীনতার অমৃত পেয়ালা ছিনিয়ে আনে।

এসময়ে তিনি শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বলেন, আজকের এই মহান দিনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভম হারানো মাসহ দেশমাতৃকার তরে আত্মত্যাগী সকলের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও দোয়া থাকবে।

দেশের বর্তমান উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, বায়ান্ন বছরে বাংলাদেশে অবিশ্বাস্য উন্নয়ন হয়েছে। সমসাময়িক সময়ে স্বাধীনতা লাভ করে যা অন্য কোনো রাষ্ট্র তা করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা গত পনেরো বছরে দেশ ও জাতির যে উন্নয়ন করেছে তা আমাদের চাওয়া-পাওয়ার ও অনেক উর্ধে । এই উন্নয়নের ধারা যাতে অব্যাহত থাকে তরুণ প্রজন্ম হিসেবে এটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া।

এদিন আরও বক্তব্য রাখেন ক্লাব সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মিন্টু। তিনি বলেন, বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে পৃথিবীর মানচিত্রে জানান দেয় বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের। লাখো শহীদের আত্মত্যাগের ফসল হিসেবে চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের। তবে সেই বিজয়কে গৌরবান্বিত করতে সাংবাদিক হিসেবে ন্যায়, সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ লেখনির মাধ্যমে এ দেশের মানুষের মৌল মানবিক অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠায় আমাদেরকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের জামিল, কোষাধ্যক্ষ শোয়াইব শুভ, সৈয়দ সাকিব, দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন মাহিন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুর আলম নেহাল, কার্যকারী সদস্য মারুফ হোসেন মিশন, জুবায়ের জিসান, আশিকুর ইসলাম ধ্রুব সহযোগী সদস্যবৃন্দ ও শিক্ষানবিশ সাংবাদিকগণ।

উল্লেখ্য যে, সকাল সাড়ে ৯টায় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত বিজয় র‌্যালি, পষ্পার্পণ এবং বর্ধিত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এম. শামীম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়