– ২৫ দিনে কমেছে ১৪২ কোটি ডলার
– বৈদেশিক মুদ্রায় দেনার বোঝা বাড়ছে

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো কমে গেল। গত ২৫ দিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৪২ কোটি ডলার কমে ২ হাজার ২ কোটি ডলারে নেমেছে। পয়লা জানুয়ারি এ রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১৪৪ কোটি ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার এ মজুদ যতই কমছে ততই আমদানি দায় পরিশোধে চাপ বেড়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ডলার সঙ্কটের কারণে এলসির বকেয়া দায় দিন দিন বাড়ছে। সাথে বিদেশী এয়ার লাইন্সগুলোর টিকিট বিক্রির বড় একটি অংশ তারা নিজ দেশে নিতে পারছে না। অপর দিকে বিদেশী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোরও বকেয়া দায় বেড়ে গেছে। ডলার সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) তার বকেয়া দায়ের বড় একটি অংশ পরিশোধ করতে পারছে না।

রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, তাদের পণ্য আমদানির বকেয়া দায় বেড়ে ৬০ কোটি ডলারের ওপরে উন্নীত হয়েছে। সরকারের বড় প্রকল্প, বিপিসির জ্বালানি তেল, ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল। কিন্তু তার একটি বড় অংশ এখন আর পরিশোধ করতে পারছে না। আগে বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করত। কিন্তু এখন যৎসামান্য সরবরাহ করা হচ্ছে। যেমন- ২০ কোটি চাইলে দেয়া হয় দেড় কোটি থেকে দুই কোটি ডলার। এভাবে তাদের বৈদেশিক মুদ্রায় দায় দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের ব্যাংকের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কাছে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতি উত্তোরণের জন্য কাক্সিক্ষত হারে রফতানি আয় হচ্ছে না। বিপরীতে কাক্সিক্ষত হারে রেমিট্যান্স আসছে না। প্রয়োজনীয় তুলনায় পণ্যের এলসি খোলা যাচ্ছে না। এতে সামগ্রিক আমদানি কমে যাচ্ছে। আর আমদানি কমে যাওয়ায় ব্যাংকের এলসি থেকে কমিশন আয়ও কমে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডলারের সরবরাহে ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় আমদানি দায় পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যাংকাররা। এ কারণে তারা পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত নভেম্বরে আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ২২ দশমিক ৪২ শতাংশ। আমদানি কমে যাওয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে শিল্পের মূলধন যন্ত্রপাতি বা ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির। জুলাই-নভেম্বর শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ এ পণ্যটির প্রবিৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ২৬.৯১ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামাল আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ৩১.২১ শতাংশ। পেট্রোলিয়াম আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক সাড়ে ৯ শতাংশ। আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি রফতানি আয়ও কমে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, তৈরী পোশাকের অর্ডার কমে যাচ্ছে। অনেক গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে রফতানি আয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ডিসেম্বরে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১.০৬ শতাংশ।

এক দিকে বৈদেশিক দায় বাড়ছে, অপর দিকে সরবরাহ পরিস্থিতি না বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। কাক্সিক্ষত হারে সরবরাহ পরিস্থিতি না বাড়ায় ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবেই গতকাল ২৮ জানুয়ারি প্রতি ডলারের জন্য ব্যয় হয়েছে ১১০ টাকা। যদিও বাস্তবে ১২৫ থেকে ১২৮ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। যেখানে গত বছরের ২৪ জানুয়ারি প্রতি ডলার পেতে ব্যয় হতো ১০৭ টাকা।

অপর দিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে গত ২৪ জানুয়ারিতে মোট রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ২৩৩ কোটি ডলার, চলতি ২৪ জানুয়ারি তা কমে হয়েছে ২ হাজার ৫২৩ কোটি ডলার। আর ২৫ দিনে প্রকৃত রিজার্ভ রিজার্ভ কমেছে ১৪২ কোটি ডলার। তবে আইএমএফের হিসেবে তা আরো কম বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এজন্য আমাদের পণ্যের নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে। একই সাথে দক্ষ শ্রম শক্তি বিদেশে পাঠানোর পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার পাচার যাতে না হয় সেদিকে কঠোর তদারকি বাড়াতে হবে। এতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সমন্বয় হবে।