সরকারের পদত্যাগ ও নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ভারত-বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আগামী ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ও বুধবার দেশের সব মহানগরে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যার প্রতিবাদ ও তাদের স্মরণে সব মসজিদে দোয়া মাহফিল হবে।

এছাড়া ১৭ ফেব্রুয়ারি সকল জেলা সদরে লিফলেট বিতরণ ও ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি সকল উপজেলা এবং ইউনিয়নে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করা হবে।

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল আলম তেনজিং, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব মো. আব্দুর রহিম প্রমুখ।

রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের সিন্ডিকেটরা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে লুটপাটে মেতে উঠেছে। এতে দাম বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের। সেই সঙ্গে বাড়িভাড়া বৃদ্ধি হচ্ছে জ্যামিতিকহারে। যেখানে নেই কোনো নীতিমালা। অথচ মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ভাড়ায় ডুপ্লেক্স বাড়িতে থাকেন সচিবরা।

তিনি বলেন, মানুষ এখন মুরগির বদলে মুরগির চামড়া ও ঠ্যাং কিনে খাচ্ছে। শুধু সরকারি দলের সিন্ডিকেটের কারণে এই ভরা মৌসুমে ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় না নিয়ে এর মধ্যে বেশ কয়েকবার বেআইনিভাবে বাড়ানো হয়েছে, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানির দাম।

রিজভী বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নির্বাচন অনিয়ম বা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি, তার প্রমাণ কই’। যারা অপরাধ করে তারা নিজেদের নিরপরাধ ভাবে।

তিনি বলেন, আপনার ভোট জালিয়াতির তথ্য আপনার দলের নেতারাই সংবাদ সম্মেলন করে জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। গতকাল তারাও আপনার সামনে বসেছিলেন। আপনার বক্তব্য শুনে তারা হয়তো লজ্জা পেয়েছেন।

রিজভী বলেন, আপনার (প্রধানমন্ত্রীর) মতে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু হয়, তাহলে আপনার নিয়োগকৃত প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন যে তার কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্ট ছাড়া আর কাউকেও দেখা যায়নি। এরপরও আপনি ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কোন মুখে কথা বলেন। আপনি সত্যকে বস্তাবন্দি করে রাখতে সবচেয়ে বেশি দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার পরও বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল নির্বাচনের ভিডিও ফুটেজসহ নানা অনিয়ম তুলে ধরেছে। ১০ বছরের শিশুর ভোট দেওয়া, কেন্দ্র দখল করে গণহারে সিল মারা এবং তারা নির্বাচনের পূর্বাপর নিজেরা নিজেরা খুনোখুনি, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ভাঙচুরের অসংখ্য ভিডিও ও স্থিরচিত্র ভাইরাল হয়েছে এবং গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। ভোটারবিহীন শূন্য ভোটকেন্দ্র তো সারাদিন দৃশ্যমান হয়েছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। জনগণ এই ভোট সর্বান্তঃকরণে বর্জন করেছেন।

তিনি আরও বলেন, বিরোধী দলের ওপর চরম ক্র্যাকডাউন চালিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আপনি বন্দি করেছেন কী উদ্দেশ্যে সেটি কি দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানে না?

রিজভী বলেন, দেশে চলছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টান্তহীন নৈরাজ্য। আবারও ক্ষমতা দখলের পর দেশজুড়ে বেপরোয়া দখলবাজি চলছে। দখলকৃত সম্পদ ভাগাভাগি করতে গিয়ে নিজেরা নিজেদের হত্যা করছে। যার প্রমাণ কুড়িগ্রাম ও কুমিল্লাসহ সারা দেশে ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে আওয়ামী লীগ নেতারা খুন হচ্ছে।