সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সহিংসতা ঘটনার মূল হোতা সম্পাদক প্রার্থী এডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথিকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবি সংগঠনের নির্বাচনে এমন বিশৃংখলা ও অপ্রীতিকর ঘটনায় আওয়ামীলীগ বিব্রত হচ্ছে। দলীয় নেতাদের বিব্রত হওয়ার অন্যতম কারণ এডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী তিনি।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ পদে জয়ী হয়েছে সরকার সমর্থক আইনজীবীদের প্যানেল। তারপরও বিতর্কমুক্ত থাকতে পারেনি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠনের এই নির্বাচন। ভোট গণনা ও ফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ কারণে শুধু আদালত অঙ্গন নয়, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডও ব্রিবত ও চরম ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের জন্য অস্বস্তিকর এই পরিস্থিতি তৈরির পেছনে যার নাম এসেছে, তিনি সরকার পক্ষেরই আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথী। যিনি যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী। এ নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী প্যানেলের বাইরে সম্পাদক পদে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন তিনি। তার নির্দেশেই সেদিন গভীর রাতে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। তাকে বিজয়ী ঘোষণা করাতে যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী জোর করে কেন্দ্রে ঢুকে পড়েন। এ সময় হামলায় আহত হন একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলসহ ৭/৮ জন আইনজীবী। শুধু তাই নয়, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধানকে চাপ দিয়ে ভোট গণনার আগেই নাহিদ সুলতানা যুথীকে সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করতে বাধ্য করা হয়। অ্যাডভোকেট যুথীর কর্মকাণ্ডে বিএনপি-জমায়াত সমর্থক প্রার্থী ও তাদের এজেন্টরা উসকানি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একজন দায়িত্বশীল নেতার স্ত্রীর এই ভূমিকায় ক্ষেপেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই ঘটনায় দলের শীর্ষ নেতারা ক্ষুব্ধ। আর এ কারণেই অ্যাডভোকেট যুথীকে গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত শুক্রবার রাতে তার বাসায় অভিযান চালায়। কিন্তু তাকে না পেয়ে তার বাসা থেকে চারজন আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় বিএনপিপন্থী প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকেও গ্রেপ্তার করে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। একই মামলার যেসব আসামি এখনো পলাতক রয়েছেন, তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সংবাদমাধ্যমে বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম জানান, উচ্চ আদালতের মতো জায়গায় এমন ঘটনা উচিত হয়নি। বিষয়টি এখন আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে গেছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এখন এটার সমাধান হওয়া উচিত।

আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, যারা এই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করেছে তাদের অপরাধ অমার্জনীয়। আদালত প্রাঙ্গণে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে কার কি দায়, তা নিয়ে আমি কোনো ব্যক্তি বিশেষের কথা উল্লেখ করতে চাই না।

উল্লেখ্য, শুক্রবার শাহবাগ থানায় এ ঘটনায় ২০ জনের নামসহ অজ্ঞাত আরো অনেক বিশৃংখলাকারীর নাম উল্লেখ্ করে মামলা করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুর রহমান সিদ্দিকী (সাইফ)।মামলার এক নম্বর আসামি সম্পাদক পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী। তিনি যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী এবং বিএনপি প্যানেলের সম্পাদক পদপ্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলকে মামালায় দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। শুক্রবার রাতেই যুথির গুলশানের বাসায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। অভিযানের সময় যুথিকে পাওয়া যায়নি, তার বাসা থেকে ৪ জনকে গ্রেফতার করে ডিবির অভিযান দল। এরপর শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্টন থেকে বিএনপি-জামায়াতপন্থি নীল প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে গ্রেফতার আইনশৃংখলা বাহিনী। আইন শৃংখলা বাহিনী যুথিকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। তাকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।